Advertisement
E-Paper

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ, গাছে বেঁধে শাসনে হেনস্থা পুরুষ ও মহিলাকে

পুলিশ জানায়, তাঁদের কাছে কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। তাঁরা খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলেও ওই ব্যক্তি ও মহিলার খোঁজ মেলেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২১ ০৬:২৬
গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে এ ভাবেই হেনস্থা করা হয়েছে ওই দু’জনকে।

গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে এ ভাবেই হেনস্থা করা হয়েছে ওই দু’জনকে। নিজস্ব চিত্র

গাছের গুঁড়ির সঙ্গে বাঁধা এক ব্যক্তি ও এক মহিলা। মুহুর্মুহু চড়-থাপ্পড় পড়ছে দু’জনের গালে। দেখে কেউ হাসছেন, কেউ ভয়ে চুপ। কারণ, হেনস্থাকারীরা এলাকায় ক্ষমতাশালী। এক সময়ে মহিলার মুখে দই ঢেলে দেওয়া হল। তোলা হল ছবিও। যা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এলাকায়। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার শাসনের সর্দারহাটিতে এ ভাবেই এক ব্যক্তি ও এক মহিলাকে হেনস্থা করা হল। অথচ সেই খবর গিয়ে পৌঁছল না স্থানীয় শাসন থানার কাছে। এমনটাই দাবি থানার।

জানা গিয়েছে, হেনস্থার শিকার হওয়া দু’জনেই শাসক দল তৃণমূলপন্থী। ওই ব্যক্তি ’৯৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জিতেছিলেন। মহিলা ওই সময়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরে যান। ওই ব্যক্তির কথায়, “যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের একাংশ তৃণমূলের সমর্থক। আমিও তৃণমূল করি। কিন্তু দলের সঙ্গে এখন আর সরাসরি যোগাযোগ নেই।”

সর্দারহাটির বিশ্বাসপাড়ায় শনিবার বিকেলে ঠিক কী ঘটেছিল? ডেউপুকুরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি গাছ কাটার কাজ করেন। শনিবার তিনি সর্দারহাটিতে গেলে ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। ওই ব্যক্তির কথায়, “আমরা দু’জনেই তৃণমূলের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন থেকেই মহিলার সঙ্গে আমার পরিচয়। গতকাল সর্দারহাটিতে গেলে ওঁর সঙ্গে দেখা হয়। উনি গাছ বিক্রি করতে চাইছিলেন। তাই নিয়ে কথা বলছিলাম। সেই সময়ে আমাদের ঘিরে ফেলা হয়।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তি ও মহিলাকে ঘিরে তাঁদের গাছের সঙ্গে বাঁধা হয়। চড়-থাপ্পড়ও মারা হয়। অভিযোগ, হেনস্থাকারীদের কয়েক জন দাবি করতে থাকেন, ওই ব্যক্তি ও মহিলার মধ্যে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। ওই ব্যক্তির দাবি, “পাঁচ-ছ’মিনিট আমাদের ও ভাবে বেঁধে রাখা হয়। আমায় দিয়ে জোর করে বলানো হয়, মহিলার সঙ্গে আমার সম্পর্ক রয়েছে। তার পরে ছাড়ার আগে টাকার জন্য দর কষাকষি শুরু হয়। দেড় লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ২৫ হাজারে আমায় ছাড়তে রাজি হয়।” আজ, সোমবার ওই ২৫ হাজার টাকা তাঁকে দিতে হবে বলে জানান ওই ব্যক্তি। সূত্রের খবর, দু’জনের গাছে বাঁধা ছবি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি ওই মহিলা। তবে স্থানীয়দের থেকে জানা গিয়েছে, মহিলার হাতে বাজারের ব্যাগ ছিল। তাতে দইয়ের পাত্র ছিল। হেনস্থাকারীরা সেই দই মহিলার মুখে ঢেলে দেন।

যদিও এই ধরনের কোনও ঘটনার কথা তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেছেন শাসনের তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রধান সাহারা পরভিন বিবি। তিনি বলেন, “আমার কানে তো কিছু আসেনি। তা-ও খোঁজ নিচ্ছি।”

এলাকার খবর, নিগৃহীত ওই ব্যক্তি ও মহিলা আগে তৃণমূল করলেও বর্তমানে স্থানীয় নেতাকর্মীদের থেকে দূরত্ব রেখে চলেন। ওই ব্যক্তির কথায়, “ওঁদের প্রস্তাব মেনে ওঁদের সঙ্গে যাইনি বলে হয়তো এ ভাবে শোধ নেওয়া হল। আমার সঙ্গে ওই মহিলার কোনও সম্পর্ক নেই।” কিন্তু পুলিশকে জানাননি কেন? ওই ব্যক্তির কথায়, “কী জানাব? সেটা তো দলের লোকেরই নাম বলতে হবে।”

শাসন থানার সঙ্গে রবিবার যোগাযোগ করা হলে সেখানকার পুলিশ জানায়, তাঁদের কাছে কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। থানার তরফে দাবি করা হয়, পুলিশ ঘটনার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলেও ওই ব্যক্তি ও মহিলার খোঁজ মেলেনি।

যদিও গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ঘটনা যাঁরা ঘটিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই চেনা মুখ। যাঁরা নিগ্রহের শিকার, হোয়াটসঅ্যাপে তাঁদের ছবিও ঘুরছে। তা হলে পুলিশ কেন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করল না?

গোটা ঘটনা শুনে বিস্মিত হাড়োয়ার তৃণমূল বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে বলেন, “অত্যন্ত অন্যায় কাজ হয়েছে। আমি কড়া ভাষায় জানিয়েছি, এলাকার সমস্যা দেখার জন্য পুলিশ আছে। কারও থেকে জরিমানার নামে টাকার লেনদেন যেন না হয়। তা সত্ত্বেও যদি এমন কেউ করেন, তবে দল তাঁকে প্রশ্রয় দেবে না।”

Assault Shasan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy