Advertisement
E-Paper

‘পাকা কথা’ আর বলা হল না বাবার

আর বাড়ি ফেরা হল না মিকাইল মণ্ডলের। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের লাইনে দাঁড়িয়েই শুক্রবার মারা গিয়েছেন বছর পঁয়ত্রিশের মানুষটি। 

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৫
মিকাইল মণ্ডল

মিকাইল মণ্ডল

মেয়ের বিয়ের পাকা কথা ছিল শনিবার। কিন্তু ক’দিনের জ্বরে কাবু বাবাকে এ দিনই নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।

আর বাড়ি ফেরা হল না মিকাইল মণ্ডলের। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের লাইনে দাঁড়িয়েই শুক্রবার মারা গিয়েছেন বছর পঁয়ত্রিশের মানুষটি।

প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ছোট জাগুলিয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখান থেকে বারাসত হাসপাতাল। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে যখন পৌঁছলেন, তখন শরীর আরও খারাপ। শেষমেশ এই পরিণতি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুসংবাদ পৌঁছয় বাড়িতে। বাড়ির উঠোনে ভিড় করেন পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন। দেহ আনা হবে, তাই লাগানো হয়েছে হ্যালোজেন। সেখানেই বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন মিকাইলের মা ওহিদা বিবি। দুই নাতি আর এক নাতনিকে জড়িয়ে কেঁদে চলেছেন। চাষবাস করে একাই সংসার চালাতেন মিকাইল। নাতনির বিয়ে হবে কী করে, সংসার চলবে কী ভাবে, সে সব ভেবে দুশ্চিন্তায় মহিলা।

দেগঙ্গা-হাবরা ছাড়িয়ে নিত্য নতুন উপসর্গ নিয়ে ডেঙ্গি, জ্বর থাবা বসিয়েছে ছোট জাগুলিয়ার মতো এলাকাতেও। তা নিয়ে এ দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মানুষ। আজগর আলি বলেন, ‘‘মশা মরার ব্যবস্থা তো দূরের কথা, সামান্য ব্লিচিং পাউডারও ছড়ানোর জন্য কারও দেখা নেই।’’ বুধবার রাতে ছোট জাগুলিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে মারা যান দত্তপুকুর থানার ছোট জাগুলিয়ার বাসিন্দা মায়া পাকরে। তা নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখান এলাকার মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জ্বরের ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, এলাকার মানুষের ক্ষোভ সামলাতে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ। কয়েক দিন ধরে এলাকা থেকে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে যে প্রচুর রোগী আসছেন বলে জানালেন কর্তব্যরত চিকিৎসক লালু দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘নিত্যনতুন উপসর্গ নিয়ে রোগীরা আসছেন। আমরা সাধ্য মতো চেষ্টা করছি।’’

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আশিকুদজামান বলেন, ‘‘হাসপাতালে ডেঙ্গি পরীক্ষার কোনও পরিকাঠামো নেই। রক্ত পাঠানো হয় বারাসত হাসপাতালে। দু’তিন বাদে রিপোর্ট আসার মধ্যেই রোগীর অবস্থার অবনতি হয়ে যাচ্ছে।’’

ছোট জাগুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় জ্বরে ভুগছেন অসংখ্য রোগী। সাহাবুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘নতুন করে হঠাৎ জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়েছে। এলাকার নর্দমাও নিয়মিত পরি‌ষ্কার হয় না। সে সব জায়গায় মশার আঁতুড়ঘর তৈরি হয়েছে।’’ অন্য এক বাসিন্দা সাজাহান বিশ্বাসের কথায়, ‘‘এত ঘটনা ঘটার পরেও এলাকায় কোনও স্বাস্থ্য শিবির নেই। দেখা নেই স্বাস্থ্যকর্তাদেরও।’’

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় জ্বর ও ডেঙ্গির পরিস্থিতি যে ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে তা আঁচ করে এ দিন জেলাশাসক অন্তরা আচার্য, জেলা পরিষদের সভাধিপতি রেহেনা খাতুন-সহ বিভিন্ন কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। পরে তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন পঞ্চায়েতের মশা মারার কামান কেনা হয়েছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে আধিকারিক ও জন প্রতিনিধিরা উপদ্রুত এলাকগুলিতে পরিস্থিতি সামাল দেবেন।’’

Dengue Death Marriage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy