দুর্দশা: ফুলদাসীদের মতো অসহায় অবস্থা অনেকেরই। নিজস্ব চিত্র
ঘরে ঘরে কান্নার রোল উঠেছিল সে দিন। হাসপাতালের বাইরে মৃতদেহের স্তূপ। একের পর এক পরিবার চালচুলোহীন হয়ে পড়ে একমাত্র রোজগেরে সদস্যের মৃত্যুতে। মগরাহাট, উস্তি, মন্দিরবাজাররে বিষমদ-কাণ্ডে ১৭২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে দোষী ঘোষণা করা হয়েছে খোঁড়া বাদশা সহ ৪ জনকে। বাকি ৬ জন বেকসুর খালাস পেয়েছে। দু’জন অভিযুক্ত এখনও পলাতক। দোষীদের এ বার চরম শাস্তি চাইছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি।
বিষাক্ত চোলাই খেয়ে উস্তির ভারীউড়ান গ্রামে মৃত্যু হয়েছিল সাত জনের। গ্রামে ঢোকার মুখে এক যুবক দেখালেন, কোথায় মদের ঠেক চলত। সে সব অবশ্য এখন উঠে গিয়েছে। গ্রামের লোকই ঠেক ভেঙে দেন। পুলিশের নজরদারিও বাড়ে। পিছু হটে কারবারিরা।
তফসিলি অধ্যুষিত গ্রামে অধিকাংশ দিনমজুরের বসবাস। দিনভর খাটাখাটনি সেরে সন্ধ্যায় বাড়িতে ঢোকার আগে গ্রামের পাশে চোলাইয়ের ঠেকে ভুরপুর নেশা করে বাড়ি ফিরতেন গ্রামের বহু পুরুষ।
মারা গিয়েছেন প্রসেনজিৎ সিংহের বাবা নেপাল সিংহ, তাপসী মাখালের স্বামী কার্তিক মাখাল, প্রভাত বরের বাবা গান্ধী বর, ফুলদাসী বরের ছেলে সুবল বর, সীতা মাহাতোর স্বামী শঙ্কর মাহাতো।
তাপসী বলেন, ‘‘স্বামীর দিনমজুরির টাকায় সংসার চলত। রোজগারের বেশির ভাগ অবশ্য উড়িয়ে দিতেন নেশায়। তবু ওই ক’টা টাকাই ছিল ভরসা।’’ তাপসী জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পরে তিন ছেলেকে নিয়ে কোনও মতে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারি ক্ষতিপূরণের যে ২ লক্ষ টাকা মিলেছে, তা ডাকঘরে রেখে সেই সুদটুকু পান পরিবারগুলি। এত দিন পেতেন ১৪০০ টাকা করে। কয়েক মাস ধরে মিলছে ১২০০ টাকা।
‘‘এই টাকায় সংসার চলে?’’ হতাশ গলায় প্রশ্ন করেন তাপসী।
খোঁড়া বাদশা এবং বাকি অভিযুক্তদের চরম শাস্তি চায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি। সরকারি আইনজীবীরা অবশ্য জানাচ্ছেন, যে সব ধারায় অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে যেন গায়ের জ্বালা মিটতে চাইছে না প্রভাত, ফুলদাসীদের। আজ, শুক্রবার আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে সকলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy