Advertisement
E-Paper

কবাডির মঞ্চে উত্তরণ এক ঝাঁক তরুণীর

ফাইনালের দিন, নিজে মাঠে আসেন মেয়ের দলের খেলা দেখতে। পোড়খাওয়া প্রৌঢ়কে দেখা যায় সাইডলাইনের ধারে বসে মেয়ে এবং মেয়ের সঙ্গীদের ক্রমাগত পরামর্শ দিয়ে যেতে।

সমীরণ দাস

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০১:২৯
জমজমাট: ম্যাচের একটি মুহূর্ত। ছবি: সুমন সাহা

জমজমাট: ম্যাচের একটি মুহূর্ত। ছবি: সুমন সাহা

মেয়ে কবাডি লিগে খেলবে শুনে প্রথমটায় বেঁকে বসেছিলেন বাবা। কিছুতেই মেয়েকে মাঠে নামতে দিতে রাজি ছিলেন না তিনি। বাবার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই অবশ্য মাঠে নামে মেয়ে। শেষ পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলে ফাইনালেও পৌঁছয়।

এরপরে অবশ্য বাবা আর দূরে থাকতে পারেননি। ফাইনালের দিন, নিজে মাঠে আসেন মেয়ের দলের খেলা দেখতে। পোড়খাওয়া প্রৌঢ়কে দেখা যায় সাইডলাইনের ধারে বসে মেয়ে এবং মেয়ের সঙ্গীদের ক্রমাগত পরামর্শ দিয়ে যেতে।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে জয়নগরের প্রত্যন্ত বামনগাছি পঞ্চায়েতের বছর চোদ্দো-পনেরোর এক ঝাঁক মেয়েকে নিয়ে মাস দু’য়েক আগে শুরু হয় ‘হোক কবাডি প্রতিযোগিতা।’ সংগঠনের কর্ণধার স্মিতা সেন বলেন, ‘‘প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে প্রচুর সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল। প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েদের মাঠে কবাডি খেলতে দিতে রাজি ছিলেন না কেউই। কবাডি খেলবে শুনে কারও কারও বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করে দিয়েছিল বাবা-মা।’’ বকাবকি, প্রতিবেশীদের কটাক্ষ তো ছিলই। তবে কোনও কিছুই দমাতে পারেনি মেয়েদের। রান্নাবাটি ছেড়ে মাঠে নেমে শেষ পর্যন্ত দেখিয়ে দিল ওরা। জিতে নিল হৃদয়। ‘হোক কবাডি’ হয়ে থাকল ওদের উত্তরণের মঞ্চ।

গত বছরও এই প্রতিযোগিতা করেছিল সংগঠনটি। এ বার আরও বড় মাপে প্রতিযোগিতার পরিকল্পনা হয়। জয়নগরের বামনগাছি পঞ্চায়েতের গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাছাই করা হয় বেশ কয়েক জন মেয়েকে। প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েদের কবাডির ময়দানে নামানোটা কতটা ‘চ্যালেঞ্জিং’ তা জানতেন উদ্যোক্তারা। তবে হাল ছাড়েননি। স্মিতা জানান, মেয়েদের বোঝানোটা প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল। সেটা যদিও বা হল, আসল কাজ হল বাড়ির লোকজনকে বোঝানো। বাবা-মায়ের ধারণা, মাঠে নেমে কবাডি খেললে মেয়েদের আর বিয়ে হবে না। এমনও হয়েছে, মেয়েরা খেলছে, বাড়ির লোক মাঠে এসে টেনে নিয়ে চলে গিয়েছে। অনেক কাউন্সেলিংয়ের পরে টুর্নামেন্টটা শুরু হয়।

প্রায় ১৩০ মেয়েকে নিয়ে ১৩টা টিমে ভাগ করে শুরু হয় টুর্নামেন্ট। বিভিন্ন মাঠে ঘুরে ঘুরে হয় লিগ পর্যায়ের খেলা। স্মিতা বলেন, ‘‘খেলা যত এগোয়, তত লোকের ধারণাও বদলাতে শুরু করে।’’ প্রথম প্রথম মেয়েদের মাঠে নামা নিয়ে বাইরে থেকে কটাক্ষ আসত। তারপরে এক সময়ে সকলে খেলা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন বলে জানান স্মিতা। খারাপ খেললে সমালোচনাও শুনতে হয়।

হঠাৎ কবাডির পরিকল্পনা কেন?

উদ্যোক্তাদের কথায়, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম মেয়েদের রান্নাঘরের ঘেরাটোপ থেকে বের করে মাঠে নামাতে। এমন কিছু একটা করতে যাতে ওঁদের মধ্যে দলবদ্ধ ভাবে কাজ করার অভ্যাস জন্মায়। লড়ে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়। সেই ভাবনা থেকেই এই উদ্যোগ।’’ গত বছরও জাঙ্গালিয়া ও হরিনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের কিছু মেয়েকে নিয়ে টুর্নামেন্ট হয়েছিল। এই সব এলাকায় বাল্যবিবাহ, নারী পাচারের মতো ঘটনা আকছার ঘটে। এ সব রোধ করতে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতেই এই পরিকল্পনা, জানান উদ্যোক্তারা।

মাস দু’য়েক ধরে এলাকার বিভিন্ন মাঠে লিগ পর্যায়ের খেলা হওয়ার পরে, অরুণনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে হয় ফাইনাল। মুখোমুখি হয় দুই দল ‘প্রতিদান’ আর ‘জাগরণ।’ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে কাপ জিতে নেয় ‘জাগরণ।’

দলের সহ অধিনায়ক সারিকার বাবাই আগাগোড়া পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে যান মেয়ে এবং তার সঙ্গীদের। অথচ তাঁর আপত্তিতেই এক সময়ে খেলা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল মেয়ের। ম্যাচ শেষে সারিকার বাবা রমজান সাঁপুই বলেন, ‘‘এ রকম প্রতিযোগিতা আরও হওয়া উচিত। আমি নিজে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে কথা বলব। সকলে মিলে চাঁদা তুলে মেয়েদের খেলার সরঞ্জাম কিনে দেব। যাতে ওরা আরও ভাল খেলতে পারে।’’ ফাইনাল জিতে খুশি জাগরণের সারিকা, আবিলা, জেনিফা, রুবিনারা। তাদের কথায়, ‘‘এই জয়ের জন্য অনেক বাধা-বিপত্তি টপকেছি। অনেক কষ্ট করেছি।’’

Society Kabaddi Tournament Girls
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy