এ ভাবেই হয় বাইচ প্রতিযোগিতা। নিজস্ব চিত্র
দেবী দুর্গা নন, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আরাধনাই প্রধান উৎসব বাগদার কোদালিয়া নদীর দু’পাড়ের দুটি গ্রাম হাদিখালি ও পূর্ব হুদা গ্রামের মানুষের কাছে।
পুজো উপলক্ষে বাউল, যাত্রা, বাংলা ব্যাণ্ড থেকে শুরু করে বাইচ, সাঁতার প্রতিযোগিতাও হয় এই দুই গ্রামে। সাত দিন ধরে উৎসব পালন করা হয়। বসে মেলাও। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মানুষ এই গ্রামগুলিতে পুজো দেখতে আসেন। বলা যায়, গোটা বাগদা ব্লকের মানুষই ওই দুটি পুজোতে সামিল হন। কর্মসূত্রে যাঁরা বাইরে থাকেন তাঁরাও এই সময় বাড়ি ফেরেন। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের সমাগম হয়। নতুন জামা কাপড় পরার চলও এই লক্ষ্মী পুজোর সময়ে। দু’টি গ্রামের পুজোতে আশপাশের এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরাও যোগ দেন। তাঁদের কথায়, ‘‘উৎসবের কোনও রঙ হয় না। লক্ষ্মীপুজোতে আমরাও এখানে আনন্দ করি।’’
কোদালিয়া নদীর এক পাড়ে হাদিখালি ও অন্য পাড়ে পূর্ব হুদা গ্রাম। লক্ষ্মী পুজোর আয়োজন নিয়ে দু’টি গ্রামের মধ্যে রেষারেষিও চলে। একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতাও দেখা যায়।
হাদিখালি অগ্রগতি সঙ্ঘের পুজো এ বার ২৩ বর্ষে পড়েছে। হাদিখালি জুনিয়র হাইস্কুলের মাঠে জোর কদমে চলছে পুজোর কাজ। সেখানেই বিভিন্ন খাবারের দোকান বসেছে। উদ্যোক্তারা জানান, এ বার প্রায় ষাটটির মতো স্টল দেওয়া হয়েছে। গ্রামে প্রায় দু’শোটি পরিবারের বাস। গ্রামে কোনও দুর্গা পুজোও হয় না। গ্রামের মানুষ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। কেউ চাষি, কেউ সরকারি চাকরি করেন। এ বার বাজেট প্রায় ২ লক্ষ টাকা।
পুজো কমিটির সম্পাদক জয়দেব বিশ্বাস জানান, অতীতে খরা বন্যায় মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। তখন গ্রামের মানুষ সবাই মিলে ধনদেবীর আরাধনার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে অবশ্য এত জাঁকজমক ভাবে পুজো হত না।
নদীর অন্য পাড়ে পূর্ব হুদা গ্রামে পুজোর উদ্যোক্তা হল তরুণ সঙ্ঘ। পুজোর বয়স এ বার ৩৯ বছর। গ্রামে প্রায় ৫০০ পরিবারের বাস। এখানকার পুজোর মূল আর্কষণ কোদালিয়া নদীতে পুরুষ ও মহিলাদের বাইচ প্রতিযোগিতা। যা দেখতে নদীর পাড়ে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। কোদোলিয়া নদীতে কচুরিপানা থাকায় মাঝে মঝ্যে অবশ্য বাইচ বন্ধ রাখতে হয়। এ বার নদী পরিষ্কার করা হয়েছে। এখানকার বহু মানুষের পূর্ব পুরুষের বসবাস বাংলাদেশে। সেখানকার নিজস্ব ক্রীড়া সংস্কৃতি নৌ বাইচ। সেটা ধরে রাখতেই ওই আয়োজন বলে উদ্যোক্তারা জানান।
এ বার পুজোতে একটি পাঠাগারেরও উদ্বোধন করা হচ্ছে। রয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গ্রামের যুবক কমল রায়, অভিজিৎ সরকার, অরবিন্দ মজুমদারেরা বলেন, ‘‘লক্ষ্মী পুজো আমাদের প্রধান উৎসব। এই সময়টার জন্য আমরা বছর ভোর অপেক্ষা করে থাকি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy