Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

জামা দেখে ছেলের দেহ চিনলেন মা

হাসপাতালের সামনে রাখা পর পর তিনটি পচাগলা দেহ।  দেহগুলি দেখে পরিবারের লোকেরাও চিনতে পারছেন না। শেষমেশ কেউ গলায় তুলসির মালা দেখে স্ত্রী শনাক্ত করলেন স্বামীকে। কেউ আবার গায়ের জামা দেখে চিনতে পারলেন ছেলেকে।   

শোকার্ত: মৎস্যজীবীর পরিবার।—নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: মৎস্যজীবীর পরিবার।—নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০১:৪১
Share: Save:

হাসপাতালের সামনে রাখা পর পর তিনটি পচাগলা দেহ। দেহগুলি দেখে পরিবারের লোকেরাও চিনতে পারছেন না। শেষমেশ কেউ গলায় তুলসির মালা দেখে স্ত্রী শনাক্ত করলেন স্বামীকে। কেউ আবার গায়ের জামা দেখে চিনতে পারলেন ছেলেকে।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা নাগাদ নিখোঁজ ট্রলারটি নামখানা ঘাটে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রসেনজিৎ দাস (১৯), মদন দাস (৬৪) ও ঝন্টু বিশ্বাস (২৭) নামে তিন মৎস্যজীবীর দেহ ওই ট্রলারেই আটকে ছিল। সেখান থেকে কাকদ্বীপ হাসপাতালে দেহগুলি পাঠানো হয়। পরদিন সকালে নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের পরিবারে খবর দেওয়া হয়। তাঁরাই এসে দেহ শনাক্ত করেন। তবে এখনও নিখোঁজ ৭টি দেহ।

প্রশাসন ও মৎস্যজীবী সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১জুন সুদ্রে মাছ ধরতে যায় ‘এফবি কন্যামাতা’ নামে একটি ট্রলার। তাতে ১৬জন মৎস্যজীবী ছিলেন। ১৩ জুন বিকেলে মাছ ধরার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। ৬জন বেঁচে ফিরে আসেন। বাকিরা নিখোঁজ। এক মৎস্যজীবী জানান, বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ কয়েক ঝুড়ি ইলিশ ট্রলারে তোলা হয়েছিল। এর মধ্যেই ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। এরপরেই ট্রলারটি উল্টে যায়। ৬জন মৎস্যজীবীকে আধঘণ্টা পর অন্য ট্রলার উদ্ধার করে।

এ দিন কাকদ্বীপ হাসপাতাল মর্গে দেহ শনাক্ত করতে এসেছিলেন প্রসেনজিতের মা মধুবালা দাস। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, ‘‘বলে গিয়েছিল, কয়েকদিন পরেই ফিবর। আর ফিরল না। সব শেষ হয়ে গেল। ঠাকুরের কাছে এত প্রার্থনা করেও কিছু হল না।’’ তবে এখনও তাঁর বড় ছেলে অর্জুনের কোনও খোঁজ মেলেনি। ওই ৭জন নিখোঁজ মৎস্যজীবীর মধ্যে অর্জুনও রয়েছেন। বাবা মদন দাসের দেহ শনাক্ত করেন রতন। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তিনিও। বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম হয়তো বেঁচেই ফিরবেন। কিন্তু তা আর হল না।’’

তলিয়ে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করতে যাঁরা গিয়েছিলে তাঁদের মধ্যে শিবশঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় পর থেকেই আমরা অন্য ট্রলার নিয়ে খোঁজ চালাচ্ছিলাম। দিন তিনেক আগে ‘এফবি কন্যামাতা’-র নীচের অংশ সমুদ্রের জলে ভাসতে দেখা যায়। তারপরে তিনটি ট্রলারের সঙ্গে ওই ট্রলার মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে আনি। ট্রলারের মধ্যেই তিনটি দেহ আটকে ছিল।’’ কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘অনেক কষ্টে ট্রলারটি উদ্ধার করা গিয়েছে। তিন জনের দেহ ভিতরে আটকে ছিল। নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Fishermen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE