Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
তৃণমূলের অন্দরে অস্বস্তি অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভায়

কাকে ছেড়ে কাকে টিকিট

কার মান রাখতে গিয়ে কার গোঁসা হয়, তা ভেবে জেরবার অশোকনগর-কল্যাণগড় এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের নির্দেশ, বর্তমান কাউন্সিলরদের টিকিট দিতে হবে। সংরক্ষণের ফলে কেউ যদি নিজের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে না পারেন, তা হলে তাঁকে পাশের ওয়ার্ডের জন্য টিকিট দেওয়া যেতে পারে। অথবা পুরনো ওয়ার্ডে ওই কাউন্সিলরেরই আত্মীয়-স্বজন বা তাঁর সুপারিশ মতো অন্য কাউকে প্রার্থী করতে হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
অশোকনগর শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০১:২০
Share: Save:

কার মান রাখতে গিয়ে কার গোঁসা হয়, তা ভেবে জেরবার অশোকনগর-কল্যাণগড় এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব।

দলের নির্দেশ, বর্তমান কাউন্সিলরদের টিকিট দিতে হবে। সংরক্ষণের ফলে কেউ যদি নিজের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে না পারেন, তা হলে তাঁকে পাশের ওয়ার্ডের জন্য টিকিট দেওয়া যেতে পারে। অথবা পুরনো ওয়ার্ডে ওই কাউন্সিলরেরই আত্মীয়-স্বজন বা তাঁর সুপারিশ মতো অন্য কাউকে প্রার্থী করতে হবে। কিন্তু দলের এই নীতি মেনে চলতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে অশোকনগর-কল্যাণগড়ে।

এ বার আসন সংরক্ষণের ফলে বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর তাঁদের জয়ী হওয়া ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারছেন না। তাঁরা চাইছেন, পাশের অন্য কোনও ওয়ার্ডে দাঁড়াতে। কিন্তু সমস্যা হল, সংরক্ষণের ফলে যে সব কাউন্সিলর অন্য ওয়ার্ডে দাঁড়াতে চাইছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেই সব ওয়ার্ডেও দলীয় কাউন্সিলর রয়েছেন। তাঁদের পুনর্বাসন কোথায় দেওয়া হবে, তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হচ্ছে।

যদিও দলীয় প্রার্থী বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান তথা অশোকনগরের বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, “দলের গাইড লাইন মেনেই প্রার্থী বাছাই করা হবে। এখনও পর্যন্ত ৬০ শতাংশ প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা চলছে। চেষ্টা করা হচ্ছে, সব বর্তমান কাউন্সিলরকে প্রার্থী করার। তবে বয়সজনীত, অসুস্থতা বা পাশের ওয়ার্ড দূরে হয়ে যাওয়ার কারণে হয় তো দু’এক জন বর্তমান কাউন্সিলর টিকিট না-ও পেতে পারেন।”

১৯৬৮ সালে তৈরি ওই পুরসভায় প্রথম ভোট হয় ১৯৮১ সালে। ২০১০ সালের আগে পর্যন্ত বামেদের দখলে ছিল এই পুরসভা। গত ভোটে ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে (এ বার বেড়ে হয়েছে ২৩টি) তৃণমূলের দখলে আসে ২০টি ওয়ার্ড। বাকি দু’টি ওয়ার্ড (১০ ও ২২ নম্বর) পায় সিপিএম।

সংরক্ষণের ফলে যাঁরা নিজেদের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারছেন না, তাদের মধ্যে অন্যতম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকার। এ ছাড়াও আছেন প্রভাবশালী কাউন্সিলর অমল দে, শ্রীকান্ত চৌধুরী, নান্টুরঞ্জন রায়।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্রীকান্ত চৌধুরী। এ বার তাঁর আসনটি তফসিলি সংরক্ষিত হয়েছে। ফলে তিনি নিজের জয়ী হওয়া ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারছেন না। তাঁর বাড়ি পাশের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি চাইছেন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়াতে। কিন্তু ১৬ নম্বরেও দলীয় কাউন্সিলর গায়ত্রী মুখোপাধ্যায় রয়েছেন। ওই ওয়ার্ডটি এ বার সাধারণ হিসাবে সংরক্ষিত। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর গায়ত্রীদেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর স্বামী অসীম মুখোপাধ্যায় বলেন, “গায়ত্রীকে এ বার প্রার্থী করা হবে কিনা, সেটা দল ঠিক করবে। তবে প্রার্থী করলে উনি দাঁড়াবেন।” ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমল দে। ওয়ার্ডটি এ বার তফসিলি সাধারণের জন্য সংরক্ষিত। তাঁর বাড়ি পাশের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডটি এ বার সাধারণ হিসাবে সংরক্ষিত। কিন্তু ২০ নম্বর ওয়ার্ডেও রয়েছেন দলীয় কাউন্সিলর মলিনা সরকার। তাঁর কী হবে? তা নিয়ে অবশ্য অমলবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এখানেই শেষ নয়। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান প্রবোধ সরকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ওয়ার্ডটি এ বার মহিলা সাধারণ হিসাবে সংরক্ষিত হয়েছে। তিনি নিজে ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ২ নম্বর ওয়ার্ডটি সাধারণ হিসাবে সংরক্ষিত। সাধারণ ভাবে ২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রবোধবাবু প্রার্থী হন, সেটা চাইছেন তাঁর অনুগামীরা। কিন্তু ২ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় কাউন্সিলর আছেন শেফালি দাস। তাঁকে সরানোর ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। প্রবোধবাবু বলেন, “দলকে জানিয়ে দিয়েছি, ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে আমাকে দল যেখানে প্রার্থী করবে, সেখানেই আমি প্রার্থী হতে প্রস্তুত।” দলের নির্দেশ মেনে প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে প্রবোধবাবু বলেন, “দলের নির্দেশ মেনে কোনও ওয়ার্ডে প্রার্থী বাছাই করতে সমস্যা হলে, তা দলকে জানানো হবে।” ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চিরঞ্জীব সরকার। তাঁর ওয়ার্ডটি এ বার মহিলা তফসিলি হিসাবে সংরক্ষিত হয়েছে। তিনি নিজের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারছেন না। কিন্তু তাঁর জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও ওয়ার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।

একে তো সব কাউন্সিলরকে আসন দিতে হিমসিম অবস্থা, তার উপরে জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছে, দু’টি আসন টিএমসিপির জন্য রাখতে হবে।

প্রার্থী বাছাই নিয়ে হাতাহাতি
নিজস্ব সংবাদদাতা • অশোকনগর

প্রার্থী বাছাই নিয়ে বৈঠক ভেস্তে গেল দু’দল তৃণমূল কর্মীর মধ্যে হাতাহাতির জেরে। ১৫ মার্চের মধ্যে জেলা কমিটির কাছে প্রাথমিক নামের তালিকা পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু অশোকনগর-কল্যাণগড়ের ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়নি। এ জন্য বাড়তি দু’দিন দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ২৩টি ওয়ার্ডের জন্য এখানে ১২২২ জনের নাম এসেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকায়। কচুয়া মোড়ে একটি লজে এ দিন ৫, ৯, ১০ এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনায় বসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। পুরপ্রধান সমীর দত্ত, উপ পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার এবং প্রার্থী নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় বিধায়ক ধীমান রায় ছিলেন সেখানে। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রবোধববাবুর গোষ্ঠী যে প্রার্থিতালিকা দেয়, তা মানতে আপত্তি ছিল সমীরবাবুর-ঘনিষ্ঠদের। স্থানীয় রাজনীতিতে এই দুই নেতা বিরুদ্ধ গোষ্ঠী বলেই পরিচিত। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে হাতাহাতি বেধে যায়। পুলিশ আসে। সভা ভন্ডুল হয়। প্রবোধবাবু এবং সমীরবাবু দু’জনেই দাবি করেছেন, সভায় বহিরাগতরা ঢুকে পড়ায় সভা বাতিল করতে হয়েছে। ধীমান রায়ের কথায়, “কিছু ভুল বোঝাবুঝি আছে। তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE