পারমিতা হাজরা
বাবা-মায়ের অমতে নিজের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করেছিল ছেলেটি। সে জন্য বিয়ের পর থেকেই বৌমার উপরে শ্বশুর-শাশুড়ির অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতে পারমিতা হাজরা (১৯) নামে ওই তরুণীর ঝুলন্ত দেহ মিলল শ্বশুরবাড়ির থেকে।
বসিরহাটের ষষ্ঠীবরতলার এই ঘটনা তরুণীর বাবা তারকনাথ পরামাণিকের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামী প্রভাকর হাজরা, শ্বশুর সমরেশ হাজরা ওরফে বাপ্পা এবং দেওর দিবাকরকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের বুধবার বসিরহাট এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেলহাজতের নির্দেশ দেন। বুধবার সন্ধ্যায় দেহ নিয়ে থানায় আসেন মেয়ের বাড়ির লোকজন। তাঁদের দাবি, পারমিতার শাশুড়িকেও গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশ জানিয়েছে, তল্লাশি চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁইপালায় বাড়ি তারকনাথবাবুর। তিনি একটি সেলুনে কাজ করেন। দুই মেয়ের মধ্যে বড় পারমিতা। বছর চারেক ধরে পারমিতার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল প্রভাকরের। কিন্তু ছেলের এই সম্পর্কে রাজি ছিল না সমরেশ ও তার স্ত্রী আল্পনা। প্রভাকর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। পুলিশ জানিয়েছে, মাসচারেক আগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন পারমিতা। ফল প্রকাশের দিনই তাঁরা মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন। তারকনাথবাবু এই বিয়ে মেনে নিলেও ছেলের বাড়ির থেকে এই বিয়ে কোনও ভাবেই মানা হয়নি বলে অভিযোগ। পাড়ার লোকেরা ছেলের বাবা-মাকে বোঝালে তারা ছেলে ও বৌকে ঘরে তুলতে রাজি হয়। তারকনাথবাবু জানান, সমরেশ শর্ত দিয়েছিল, অনুষ্ঠান করে বিয়ে হলেই বৌকে সে ঘরে ঢুকতে দেবে।
পুলিশ জানায়, সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে তারকনাথবাবু মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান করেন। কিন্তু ওই তরুণীর উপরে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ।
তারকনাথবাবু পুলিশকে জানান, অজ্ঞাতপরিচয় কেউ একজন মোবাইলে ফোন করে জানান, মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। সে হাসপাতালে ভর্তি। মঙ্গলবার সন্ধে ৭টা নাগাদ বসিরহাট জেলা হাসপাতালে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, মেয়ে মারা গিয়েছে। দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
পারমিতার কাকা মন্টু পরামাণিক জানান, এই বিয়ে কিছুতেই মানতে পারছিল না পারমিতার শ্বশুর-শাশুড়ি এবং দেওর। জামাইকে বললে সে কোনও গুরুত্ব দিত না। তাঁর অভিযোগ, উল্টে পারমিতাকেই মারধর করত জামাই। তিনি বলেন, ‘‘অতিরিক্ত মারধরের ফলে মৃত্যু হয়েছে পারমিতার। এরপরে ওরা ঘরে দেহ ঝুলিয়ে দেয়।’’
অভিযোগ অস্বীকার করে মৃতার শাশুড়ি আল্পনা বলেন, ‘‘আমাদের মেয়ে না থাকায় পারমিতাকে মেয়ের মতো দেখতাম। বেড়াতে যাওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বচসার জেরে ও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে ছেলে এসে দড়ি খুলে বন্ধুর মোটরবাইকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy