Advertisement
১১ মে ২০২৪

শীতে খোলা বারান্দায় বৃদ্ধা, ফেরাল পুলিশ

‘ভাগের মা’ হয়েই দিন কাটাচ্ছিলেন বৃদ্ধা। তিন ছেলের কেউই মায়ের দায়িত্ব নিতে চান না।

এই দোকানের বারান্দাতেই ছিলেন বৃদ্ধা

এই দোকানের বারান্দাতেই ছিলেন বৃদ্ধা

  নিজস্ব সংবাদদাতা
হাবড়া শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৯
Share: Save:

‘ভাগের মা’ হয়েই দিন কাটাচ্ছিলেন বৃদ্ধা।

তিন ছেলের কেউই মায়ের দায়িত্ব নিতে চান না। কখনও ভাড়াবাড়িতে, কখনও এখানে-সেখানে থাকতে হয় মাকে।

হাবড়া পুর এলাকার ঘটনা। সেখানেই বিরাশি বছরের ওই বৃদ্ধার ছোট ছেলের বাড়ি। স্বামী মারা গিয়েছেন কয়েক বছর আগে। পড়শিদের দাবি, তারপর থেকেই ছেলেরা মায়ের দায়িত্ব একে অন্যের ঘাড়ে ঠেলতে ব্যস্ত। তিন ছেলের কারও অবশ্য টাকার অভাব নেই। কিন্তু অশক্ত মায়ের দায়িত্ব নেওয়ার বেলাতেই তাদের যত সমস্যা। চার মেয়েরাও কেউ মায়ের খোঁজ নেন না।

তিন-চার দিন ধরে বৃদ্ধার ঠাঁই হয়েছিল ছোট ছেলের বাড়ির কাছে একটি মুদি দোকানের খোলা বারান্দায়। এটা ওটা খেতে দিয়েছেন পড়শিদেরই কেউ কেউ। শীতের রাতে গায়ে একটা কাঁথাও জুটেছিল বৃদ্ধার। কিন্তু খোলা বারান্দার কনকনে ঠান্ডায় তাতে শীত আর বাগ মানে কই!

বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ এলাকার লোকজন খবরটা হাবড়া থানার আইসি গৌতম মিত্রের কানে তোলেন। থানার এক অফিসার গিয়ে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে তাঁর ছোট ছেলের বাড়িতেই রেখে আসেন। ছেলেকে পুলিশ কড়া ভাষায় জানিয়ে এসেছে, মায়ের কোনও অযত্ন হলে এ বার আইনি পদক্ষেপ করা হবে।

ছোট ছেলে পুলিশকে জানিয়েছে, নাতি ও পরিবারের অন্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন মা। সে কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েছেন পড়শিরা। তাঁদের অভিজ্ঞতা, ছোট বৌমাই নিত্য দিন শাশুড়ির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। বৃদ্ধার বড় ছেলে পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘‘মা নিজেই বাড়িতে থাকতে চান না। বলেন, আমায় টাকা দিলেই হবে। মাকে তাই টাকা দেওয়া হত। খাওয়ার ব্যবস্থা এবং টাকা দেওয়ার কাজটা বরাবর আমিই করি।’’ বড়ছেলের বক্তব্য, ‘‘যা হওয়ার হয়ে ঘটে গিয়েছে। এখন থেকে মাকে আর কাছ ছাড়া করব না।’’ বৃদ্ধা আপাতত বড়ছেলের কাছেই গিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এত কিছুর পরেও মায়ের মুখ থেকে ছেলেদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি বেরোয়নি। থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হলেও বৃদ্ধা শুধুই ঘাড় নেড়ে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সকালে রোদে তেমন অসুবিধা হত না বারান্দায় থাকতে। রাতে একটু কষ্ট হত। ভেবেছিলাম, ছোট নাতিটাকে দেখতে পাব। তাই ছোট ছেলের বাড়ির কাছেই থেকে গিয়েছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Civic Issues Community Old Person Winter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE