তছনছ: স্বরূপনগরে রাস্তায় উপড়ে পড়েছে গাছ ও বিদ্যুতের খঁুটি।
ঝড়-বৃষ্টিতে বিদ্যুতের ছিঁড়ে যাওয়া তারে জড়িয়ে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। দুই মহিলা-সহ আহত পাঁচ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর ও বাদুড়িয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম দীপঙ্কর মণ্ডল (৩৭)। বাড়ি স্বরূপনগরের বালতি গ্রামে। আহত দুই মহিলার বাড়ি স্বরূপনগরেরই বিথারি গ্রামে। বাকি তিন জন বাদুড়িয়ার বাসিন্দা। আহতদের বসিরহাট জেলা ও বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। স্বরূপনগরের বিডিও রথীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘‘মঙ্গলবার বিকেলের ঝড়-বৃষ্টিতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বরূপনগর ব্লকে সাড়ে তিনশোর উপরে বাড়ি সম্পূর্ণ এবং এক হাজারের উপরে বাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বহু গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে।’’
বুধবার স্বরূপনগরে গিয়ে দেখা গেলে, ঝড়ে সব থেকে ক্ষতি হয়েছে সীমান্তবর্তী কৈজুড়ি, বালতি-নিত্যানন্দকাটি, স্বরূপনগর ও বাংলানি পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা। স্থানীয় রমেন সর্দার বলেন, ‘‘বিকেলের দিকে হঠাৎ করে শুরু হওয়া ঝড়ের তাণ্ডবে এলাকা তছনছ হয়ে দিয়েছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’’
বাদুড়িয়াতেও বহু গাছ ও মাটির বাড়ি ভেঙেছে। কোথাও মাটির বাড়ির খড়ের কিংবা টালির চাল উড়ে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। বসিরহাটের খোলাপোতা পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুর, বাদুড়িয়ার ফতুল্লপুর বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। মহকুমা প্রশাসনের দাবি, বুধবার সকাল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পলিথিন, ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বিদ্যুতের খুঁটি মেরামতি ও ভেঙে পড়া গাছ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে।
দেগঙ্গায় ভেঙে পড়েছে কলাগাছ।
একই চিত্র দেখা গিয়েছে হাবরা পুর এলাকায়ও। বিকেলের ঝড়ে ঘরের উপরে গাছের ডাল ভেঙে পড়ায় দুই মহিলা জখম হয়েছেন। প্রচুর বাড়ি-ঘর ভেঙেছে। বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ উপড়ে পড়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, জখম দুই মহিলা হাসপাতালে ভর্তি। বুধবার সকালে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওই সব এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে তাঁদের টিন ও ঘর মেরামতির জন্য জন্য আর্থিক সাহায্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘২০০টি টিন দেওয়া হয়েছে। ঘর মেরামতির জন্য বিধায়ক তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্যও করা হয়েছে। ওই পরিবারগুলিকে দশ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।’’
পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ৪৩টি বাড়ি ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। জখম দু’জনের চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ হাবরার পাশাপাশি গাইঘাটা ব্লকেও বেশ কিছু বাড়ি ভেঙে পড়েছে। গাইঘাটার শ্রীপুরে দোকান চাপা পড়ে এক ব্যক্তি জখমও হয়েছেন।
ঝড়ে উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কয়েকটি ব্লকের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কলা, পেঁপে, ওলের পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে আমের ফলনেও। উপড়ে পড়েছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। বাজ পড়ে পুড়েছে মাঠের ধানের গোলা। ক্ষতির পরিসংখ্যান জানতে বুধবার এলাকা পরিদর্শন করেছেন কৃষি ও উদ্যান পালন দফতরের কর্মীরা।
জেলা উপকৃষি অধিকর্তা অরূপ দাস জানান, মূলত উদ্যান ফসলের ক্ষতি হয়েছে। জেলার উদ্যান দফতরের আধিকারিক হৃষীকেশ খাঁড়া বলেন, ‘‘কৃষি ও উদ্যান পালন দফতরের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জমি পরিদর্শন করছেন। রিপোর্ট হাতে এলে ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে।’’
ছবি: নির্মল বসু ও সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy