এক...দুই...তিন....চার।
টানা চার দিন ধরে পড়াশোনা শিকেয়। প্রধান শিক্ষকের আচার-আচরণ না-পসন্দ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকার। দুর্নীতির অভিযোগও আছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। তাঁর অপসারণ চেয়ে গত চার দিন ধরে অবস্থান-বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আর তারই জেরে স্কুলে এসেও টইটই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছেলের দল। পড়াশোনার নামগন্ধ নেই। দিনভর স্রেফ দুষ্টুমি আর হইচই।
এই পরিস্থিতিতে তিতিবিরক্ত অভিভাবকদের একটা বড় অংশ। স্কুলের প্রাক্তনীরাও শিক্ষকদের এই আচরণে হতাশ। তাঁদের একটাই বক্তব্য, যা-ই ঘটুক না কেন, স্কুলে পড়়াশোনা লাটে তুলবেন কেন শিক্ষকেরা? তা হলে কী উদাহরণ তাঁরা তৈরি করছেন পড়ুয়াদের সামনে? শিশুমনে কী প্রভাব পড়বে এর?
এই প্রেক্ষিতেই সোমবার সকালে ক্যানিঙের তালদি মোহনচাঁদ হাইস্কুলে অভিভাবক, প্রাক্তন পড়ুয়াদের একাংশ এবং ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুলের শিক্ষকদের কথা কাটাকাটি হয়। ক্ষিপ্ত পড়ুয়ারা স্কুলে ভাঙচুর করে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসেন ক্যানিং ১ বিডিও বুদ্ধদেব দাস ও ক্যানিং থানার ওসি আশিস দাস। মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলে আগামী বৃহস্পতিবার একটি বৈঠক করা হবে। খুব শীঘ্র এই সমস্যার সমাধান হবে।’’
বৃহস্পতিবার থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয়কুমার নস্করের অপসারণ চেয়ে ও তার বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক কাজের অভিযোগ তুলে স্কুলের প্রায় ৩০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। বিডিও, এআই, ওসিরা গিয়েও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেননি। পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য এ দিন অভিভাবক ও প্রাক্তন ছাত্রেরা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে যান। এরপরেই শুরু হয় বচসা। পড়ুয়ারা স্কুলে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। বিক্ষোভের মুখে পড়ে স্কুলের শিক্ষিকারা কান্নাকাটি শুরু করেন। পুলিশ আসে।
বুদ্ধদেববাবু জানান, আপাতত স্কুলের পঠনপাঠন স্বাভাবিক করার জন্য তিনি শিক্ষকদের অনুরোধ করেছেন। শেষ পর্যন্ত শিক্ষকেরা তাঁদের অবস্থান তুলে দুপুরের পর থেকে ক্লাস শুরু করেন।
তবে সমস্যার এখানেই শেষ নয়। এরপরে আবার ছাত্রদের একাংশ স্কুলের গেটের সামনে অবস্থানে বসে। তাদের দাবি, আগে স্কুলের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। তারপরে ক্লাস শুরু হবে। তাদের বক্তব্য, এর আগেও শিক্ষকেরা এ রকম আন্দোলন করেছেন। বিডিও, ওসি গিয়ে ছাত্রদের আশ্বাস দেন, এমন পরিস্থিতি যাতে ফের না তৈরি হয়, সে দিকে নজর দেওয়া হবে। এরপরেই অবস্থান ওঠে।
অভিভাবক অর্ঘ্য হালদার, হীরেন নাইয়ারা জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহ শিক্ষকদের মধ্যে যদি কোনও সমস্যা থেকে থাকে, তা হলে তা নিজেদের মধ্যে বসে মিটিয়ে নেওয়া ভাল। কিন্তু এ ভাবে স্কুলে আন্দোলন করে ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করা উচিত নয়। এই আন্দোলন করতে গিয়ে ছাত্ররা স্কুলের সম্পত্তি নষ্ট করছে। তা-ও মেনে নেওয়া যায় না। প্রাক্তন এক ছাত্রের কথায়, ‘‘ক্লাস হচ্ছে না দেখে পড়ুয়ারা স্কুলে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ক্লাসে বসে নানা দুষ্টুমি করছে। সে সব জানতে পেরে সহ্য করা মুশকিল। এই স্কুলের সঙ্গে আমাদের অনেকেরই আবেগ জড়িয়ে।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের পক্ষে সুপ্রকাশ পোদ্দার বলেন, ‘‘মহকুমাশাসকের আশ্বাসের পরে আপাতত আন্দোলন বন্ধ করে পঠন পাঠনের কাজ করব।’’ যদিও সমস্যার সমাধান না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে এ দিন কোনও ভাবে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে এর আগে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।