২০০৬ সালে বাম আমলে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কাঠাখালির উপরে হাসনাবাদ সেতুর কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। কথা ছিল তিন বছরে সেতুর কাজ শেষ করে এক গাড়িতে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ যেতে পারবেন কলকাতায়। কিন্তু ছ’বছর পরে জানা যায় দু’টি থাম আকেজো। তা ভেঙে নতুন করে তিনটি পিলার করতে হবে। খরচ বেড়ে ১০০ কোটি হয়। ভেঙে পড়েন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি জানতে পারেন। একাধিক বাস্তুকারকে ডেকে দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন।
নানা টালবাহানার পরে নদীর মধ্যে ৩৫ মিটার উচুঁ দু’টি পিলার ভেঙে ফেলা হয়। মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতুটি লম্বায় ৮৬৪ মিটার। মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতায় আগের ঠিকাদার বদলে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে সেতু নির্মাণের কাজে গতি আনা হয়। হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘সেতুর উদ্বোধন হলে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের যাতায়াতের যেমন সুবিধা হবে, তেমনই ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হবে। দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়ি নিয়ে নেবুখালি পৌঁছতে পারবেন। সেখানে সাহেবখালি নদী পেরিয়ে কিছুটা গেলেই সুন্দরবনের কাছে পৌঁছতে পারবেন। সে দিকে লক্ষ্য রেখে নেবুখালিতে আরও বেশি করে ভেসেল চালানো হবে।’’
এই সেতু হলে নেবুখালি থেকে সরাসরি বসিরহাট জেলা হাসপাতাল কিংবা কলকাতায় যেতে পারবেন মানুষ। কৃষকেরা গাড়িতে করে আনাজ ফসল নিয়ে শহরের বাজারে সময় মতো পৌঁছতে পারবেন। এতে গরিব মানুষ উপকৃত হবেন। এলাকার মানুষ খুশি এই সেতু তৈরি হওয়ায়। গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি রক্ষিত, আনন্দ পালিত, স্বপ্না মণ্ডলরা বলেন, ‘‘হাসনাবাদ সেতু আমাদের স্বপ্ন। তবে যে ভাবে বিভিন্ন কারণে বার বার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল তাতে স্বপ্ন পূরণে বাধা পড়ছিল। এখন সেতুর কাজ শেষ হওয়ায় এক কথায় সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ খুশি।’’ জেলার পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘হাসনাবাদ সেতু উদ্বোধনের পরে নেবুখালি থেকে যাতে বাসে সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষরা সরাসরি বারাসত কিংবা ধর্মতলা চলে আসতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ — ছবি: নির্মল বসু