Advertisement
E-Paper

এক কাপ চা খেয়ে গুনতে হচ্ছে চাঁদা 

এক পুজো উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘পুজোর যা খরচ, তাতে রাস্তা থেকে চাঁদা না তুললে সামাল দেওয়া যাবে না।’’ এ ভাবে চাঁদা তোলা আইনসম্মত নয়, এ কথা জানাতে ওই উদ্যোক্তার সাফাই, ‘‘আমরা তো কাউকে জোর করছি না। খুশি হয়ে যে যা দিচ্ছেন, তাই নিচ্ছি। কেউ দিতে না চাইলে, তাঁদের যেতে দেওয়া হচ্ছে।’’

সমীরণ দাস

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০৯
পথ-জুড়ে: চায়ের বদলে চাঁদা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

পথ-জুড়ে: চায়ের বদলে চাঁদা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

রাস্তায় যেখানে-সেখানে গাড়ি থামিয়ে চলছে কালীপুজোর চাঁদা আদায়। জয়নগর-কুলতলির বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে এই ছবি। জয়নগরের গোচরণ, দক্ষিণ বারাসত, বহড়ু থেকে শুরু করে কুলতলির জামতলা পর্যন্ত একাধিক জায়গায় ছোট-বড় গাড়ি দাঁড় করিয়ে অবাধে টাকা তুলছেন পুজো উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটিকে চাঁদা দিতে দিতে বিরক্ত গাড়ি চালকদের একাংশ।

কেন এ ভাবে চাঁদা তোলা হচ্ছে?

এক পুজো উদ্যোক্তার কথায়, ‘‘পুজোর যা খরচ, তাতে রাস্তা থেকে চাঁদা না তুললে সামাল দেওয়া যাবে না।’’ এ ভাবে চাঁদা তোলা আইনসম্মত নয়, এ কথা জানাতে ওই উদ্যোক্তার সাফাই, ‘‘আমরা তো কাউকে জোর করছি না। খুশি হয়ে যে যা দিচ্ছেন, তাই নিচ্ছি। কেউ দিতে না চাইলে, তাঁদের যেতে দেওয়া হচ্ছে।’’

কিন্তু চাঁদা যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁরা সকলেই কি খুশি হয়েই দিচ্ছেন?

জয়নগরের দক্ষিণ বারাসত মোড়ে এক পণ্যবাহী ট্রাকের চালক বলেন, ‘‘কী করে খুশি হব বলুন? দু’এক জায়গায় দিতে হলে তা-ও মানা যায়। জামতলা থেকে দক্ষিণ বারাসত পর্যন্ত ন’দশ জায়গায় চাঁদা দিলাম। ১০ টাকা করে দিলেও তো একশো টাকার ধাক্কা। আরও কত জায়গায় দিতে হবে কে জানে!’’

কুলতলির জামতলা মোড়ে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি জানালেন কৈখালিতে সপরিবার ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। চাঁদার দেওয়ার জন্য দশ-বারো জায়গায় দাঁড়াতে হল। তাঁর কথায়, ‘‘আদায়কারীরা খুব একটা জবরদস্তি করছেন না ঠিকই, কিন্তু এত জায়গায় দাঁড়াতে দাঁড়াতে আসাটাও তো বিরক্তিকর।’’

বেআইনি হলেও চাঁদা আদায়ের অভিনব কৌশল নিয়েছে দক্ষিণ বারাসতের জো়ড়াপোল যুবগোষ্ঠী। ভোর হতে না হতেই ফ্লাস্কে চা ভরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি থামিয়ে চালক-খালাসিদের চা খাওয়াচ্ছেন ক্লাবের সদস্যেরা। সেই সঙ্গেই বিল কেটে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ওই পুজো কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘ভোরের দিকে এক কাপ চা পেলে অনেকেই খুশি হন। যিনি হয় তো ১০ টাকা চাঁদা দিতেন, চা খেয়ে তিনিই খুশি ২০ টাকা দিয়ে যাচ্ছেন।’’ কিন্তু চা খেয়েও যাঁরা চাঁদা দিতে চাইছেন না, তাঁদের কি জোর করা হচ্ছে? চাঁদা আদায়কারী দলের দাবি, প্রায় সকলেই সানন্দে চাঁদা দিচ্ছেন। একান্ত কেউ দিতে না পারলে তাঁদের জোর করার প্রশ্নই নেই। তবে এক চালকের বক্তব্য, ‘‘দশ-বিশ জন ঘিরে ধরে চা খাওয়ালে বিশ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে যাবে না, এমন বুকের পাটা আর ক’টা লোকের আছে!’’

চা-খাইয়ে চাঁদা তোলা বিষয়ে কী বলছে পুলিশ?

এ নিয়ে আলাদা করে মন্তব্য করতে চায়নি জয়নগর থানা। থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রাস্তায় দাঁড়িয়ে চাঁদা তোলাটা বেআইনি। সেটা যে ভাবেই হোক। এটা রুখতে অভিযান শুরু হবে। অনেককে সতর্ক করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ভাঙার খবর এলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কিন্তু পুজো তো এসেই গেল। গত কয়েক দিন ধরেই তো চলছে এই কাণ্ড। এত দিনে নতুন করে কী আর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ, বেজার মুখে বললেন এক ট্রাক চালক।

জয়নগর থানা সূত্রে খবর, চাঁদার জন্য জুলুমবাজি করা যাবে না বলে কয়েক দিন আগে একটি মিটিংয়ে এলাকার সব পুজো কমিটিকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাস্তায় চাঁদা তোলার ঘটনা নজরে এলেই সতর্ক করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এই এলাকা থেকে চাঁদার জন্য জুলুমবাজির কোনও অভিযোগ আসেনি বলেই জানাচ্ছেন থানার আধিকারিকেরা। এলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিচ্ছেন তাঁরা।

Irritation Fundraising Kali Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy