Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শিশুখাদ্যের ব্যবস্থা নেই, অভিযোগ ত্রাণশিবিরে

দুই মহকুমায় ত্রাণশিবির এবং রান্না করা খাবার বিতরণকেন্দ্র (কমিউনিটি কিচেন) চালু করা হয়েছে মোট ১০টি। গত কয়েক দিন ধরে সেগুলি চললেও বাচ্চাদের খাবার পাওয়া যাচ্ছে না ডায়মন্ড হারবার এবং কাকদ্বীপের বেশিরভাগ শিবিরে।

কী খাবে কোলের সন্তান? চিন্তায় মায়েরা।—নিজস্ব চিত্র।

কী খাবে কোলের সন্তান? চিন্তায় মায়েরা।—নিজস্ব চিত্র।

শান্তশ্রী মজুমদার
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫০
Share: Save:

দুই মহকুমায় ত্রাণশিবির এবং রান্না করা খাবার বিতরণকেন্দ্র (কমিউনিটি কিচেন) চালু করা হয়েছে মোট ১০টি। গত কয়েক দিন ধরে সেগুলি চললেও বাচ্চাদের খাবার পাওয়া যাচ্ছে না ডায়মন্ড হারবার এবং কাকদ্বীপের বেশিরভাগ শিবিরে। বড়দের প্রয়োজনের দিকে নজর দিলেও বাচ্চাদের কথা কেউই সে রকম ভাবে ভাবেননি। ঝড়জলে রান্না করার পরিস্থিতি নেই। উনুন ডুবেছে জলের তলায়। অনেক জায়গায় দুধের শিশুদের খাবার না পেয়ে বিপদে পড়েছেন বাবা-মায়েরা। সব জায়গাতেই বিষয়টি হয় ‘জানা নেই’, না হলে ‘কেউ বলেনি’ বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছেন কর্তৃপক্ষ।

ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লকের পারুলিয়া-কালীচরণপুর প্রাথমিক স্কুলে শনিবার দুপুর থেকে খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির। কোটালের জলে এলাকায় জল ঢুকে বাড়িঘর ডুবে বিপদে ৬০টি পরিবার। এই শিবিরে মোট ২৩০ জন রয়েছেন। স্থানীয় জামাইপাড়ার বাসিন্দা জয়ন্তী দাস, সুন্তিয়া হালদার, মৌসুমী দাস, রাজশ্রী বাগরা জানালেন, কোলে সন্তান রয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে এলাকার বিধায়ক সকলকে শিশুদের খাবারের জন্য বলেছেন। কিন্তু আলাদা কোনও খাবার পাওয়া যায়নি। বড়দের রান্না করা খাবার ছোট বাচ্চাদের দেওয়া মুশকিল বলে জানালেন ওই মায়েরা।

কেন দুধের বাচ্চাদের আলাদা খাবার দেওয়া হচ্ছে না?

ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লকের বিডিও নির্মাল্য বাগচি বলেন, ‘‘শনিবার থেকে ক্যাম্প চালু হলেও আমাদের জানানো হয়েছে রবিবার দুপুরে। তবে রবিবারই বাচ্চাদের জন্য দুধ কিনে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এখানে রয়েছে ৬৯ জন। তারমধ্যে অনেকেই দুধের শিশু। তবে অন্যান্য খাবার, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই এখানে। রবিবার জেলা সদর থেকে পাঠানো বাচ্চাদের পোশাকও পাঠানো হয়েছে শিবিরে।

কাকদ্বীপের নামখানা ব্লকে নদীঘেরা মৌসুনি দ্বীপের প্রচুর মানুষ জলমগ্ন। মৌসুনি পঞ্চায়েতের বালিয়াড়া বাজার এলাকায় কিশোর হাইস্কুল, অত্রাঃ অবৈতনিক বিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে শিবির। কিন্তু দু’দিন থেকে এখানেও বাচ্চাদের খাবার দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত প্রধান শেখ ইলিয়াস বলেন, ‘‘প্রায় ২০০ বাচ্চা রয়েছে এই শিবিরগুলিতে। কিন্তু বাচ্চাদের খাবার তো আসেনি। তবে চেষ্টা করছি ব্লক থেকে যাতে ব্যবস্থা করা যায়।’’ এর মধ্যে অনেকেই কোলের বাচ্চা।

ত্রাণ নিয়েও ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। তাঁদের দাবি ত্রাণের চেয়েও বড় বেশি প্রয়োজন সময়ে নদীবাঁধগুলির মেরামতি।

নামখানা ব্লকেরই নারায়ণপুর অঞ্চলে ত্রাণ শিবির খুলে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে এলাকায় নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জল ঢুকে পড়ার জন্য। শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত এখানে রোজ প্রায় ২৫০ জনের রান্না হয়েছে। কিন্তু শিশুদের আলাদা করে বেবিফুড দেওয়া হয়নি কেন?

বিডিও তাপস মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের না জানালে আমরা কী ভাবে ব্যবস্থা করব? জলমগ্ন হয়ে ত্রাণশিবিরে আসা মানুষদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রাখা হচ্ছে।’’এখানে বাচ্চাদের মুড়ি-বাতাসা এবং দুপুরে রান্না করা খাবার খেতে দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, ৭০টি বাচ্চার মধ্যে ৩৫ জনের বয়স ৫ বছরের নীচে। কেন এদের আলাদা খাবার দেওয়ার বিষয়ে জানানো হয়নি বিডিও অফিসে?

পঞ্চায়েত প্রধান পবিত্র মণ্ডলের দাবি, দুধের বাচ্চা নিয়ে বাবা-মায়েরা এখানে খাবার নিতে আসেননি। তা ছাড়া, রবিবার থেকেই শিবির বন্ধ করা হয়েছে জল নেমে যাওয়ার জন্য।

ডায়মন্ড হারবারের মথুরাপুর ২ ব্লকে কাশীনগর এবং নন্দকুমারপুরেও খোলা হয়েছে ত্রাণশিবির। এখানেও শিবিরগুলিতে রয়েছেন কয়েকশো মানুষ এবং শ’দেড়েক শিশু। তার মধ্যে বেশ কিছু দুধের শিশু রয়েছে। অভিযোগ, শিবিরগুলিতে শিশুদের দুধ কয়েকটি পরিবারের হাতে পৌঁছয়নি। তবে তা মানছেন না বিডিও মোনালিসা তিরকে। তাঁর কথায়, ‘‘এ রকম কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। সরকারি তরফে প্রচুর স্টক আমাদের কাছে রয়েছে। যেখানে যেমন প্রয়োজন হচ্ছে সেখানে দেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE