Advertisement
E-Paper

ধূমপান বন্ধ করে কবে সচেতন হবে মানুষ

বিশ্বের নানা প্রান্ত যখন তামাক বর্জন দিবসে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করল, সেখানে বহু মানুষ থেকে গেলেন সেই তিমিরেই। নাগাড়ে চলল ধূমপান, রাস্তাঘাট চিত্রিত হল জর্দা, গুটখার পিকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০২:১১
বিরাম নেই সুখটানে। বনগাঁয় নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

বিরাম নেই সুখটানে। বনগাঁয় নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

বিশ্বের নানা প্রান্ত যখন তামাক বর্জন দিবসে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করল, সেখানে বহু মানুষ থেকে গেলেন সেই তিমিরেই। নাগাড়ে চলল ধূমপান, রাস্তাঘাট চিত্রিত হল জর্দা, গুটখার পিকে।

মঙ্গলবার বনগাঁ শহরের ব্যস্ততম জনপথ বাটারমোড়ে দেখা গেল, যশোর রোডের পাশে দাঁড়িয়ে বহু মানুষ সিগারেটে সুখটান দিচ্ছেন। যশোর রোড ধরে এগিয়ে দেখা গেল সড়কের পাশে একটি চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে দুই যুবক সিগারেট ধরাচ্ছেন। ভ্যান যেতে যেতেও দেখা গেল সিগারেটে টান মারার দৃশ্য। তবে আনন্দবাজারের পাতায় তামাকবিরোধী নানা খবরাখবর নিয়ে আলোচনাও কানে এল। কিন্তু সেটুকুই সার। এক যুবক কাগজের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বললেন, ‘‘কাগজ পড়েই যদি সিগারেট ছাড়তে পারতাম, তা হলে তো সিগারেটের প্যাকেটের ছবি দেখে অনেক আগেই ছাড়া উচিত ছিল।’’ শোনা গেল রসালো মন্তব্যও। কলেজ পড়ুয়া এক তরুণ সিগারেটে টান মারতে মারতেই পাশের সঙ্গিণীকে বললেন, ‘‘যারা এ সব লিখেছে, তারা বুঝি কেউ সিগারেট খায় না!’’ বলাইবাহুল্য, তরুণীটি কিছুক্ষণ আগেই ছেলেটিকে সিগারেট না ধরানোর অনুরোধ করেছিলেন।

বনগাঁ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ঘুরে অবশ্য তামাক সেবনের ছবি দেখা যায়নি। জানা গেল, অতীতে বনগাঁ স্টেশনে যাত্রীরা সিগারেট-বিড়ি খেতেন। এখন তা প্রায় বন্ধ। এর পিছনে জিআরপি-র লাগাতার ধড়পাকড় অন্যতম কারণ। কেউ জ্বলন্ত সিগারেট হাতে ধরা পড়লে ৪০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। তবে গোবরডাঙা প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখা গেল প্রকাশ্যে ধূমপান চলছে। বিক্রিও হচ্ছে। এক বিক্রেতার কাছে জানাতে চাওয়া হল, এখানে সিগারেট ধরালে গোলমাল হবে না তো? ‘‘বরাভয় ভঙ্গীতে হাত তুলে বিক্রেতা জানিয়ে দিলেন, কুছ পরোয়া নেই। দেখুন না, কত লোকে তো খাচ্ছে!’’

বনগাঁ মহকুমা আদালত চত্বরে দেখা গেল একই চিত্র। এক যুবক আবার কলার উঁচিয়ে বললেন, ‘‘আগে সরকার যত্রতত্র সিগারেট-বিড়ি-গুটখা বিক্রি বন্ধ করুক। তা হলে লোকেও আর এ ভাবে খেতে পারবে না।’’ বোঝাতে চেষ্টা করা হয়েছিল, সব কাজই যদি সরকার করে দেবে, তা হলে নাগরিক হিসাবে আমাদের কি কিছুই দায় নেই? তবে যুবকের উদ্ধত ভাবভঙ্গী দেখে তাঁর সুখটানে ব্যাঘাত ঘটানোর আর সাহস হল না।

বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবসে ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন এলাকাতেও চিত্রটা কিছুমাত্র আলাদা নয়। সরকারি অফিস চত্বর, হাসপাতাল চত্বর, স্টেশন— সর্বত্রই চলছে ধূমপান। প্ল্যাটফর্মের উপরে লাইন দিয়ে সাজানো রয়েছে পান, বিড়ি, গুটখা।

তবে সম্প্রতি ক্যানিং থানার পুলিশ থানা চত্বরে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছে। গোটা থানা চত্বরকে ‘ধূমপান বর্জিত এলাকা’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। বোর্ডও লাগানো হয়েছে এ নিয়ে। এ বিষয়ে ক্যানিঙের এসডিপিও সৌম্য রায় বলেন, ‘‘সম্প্রতি আমরা ক্যানিং থানাকে ধূমপান বর্জিত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করেছি। তা ছাড়া, প্রকাশ্যে তামাক, গুটখা ঝুলিয়ে রেখে দোকানদারদের বিক্রি করতেও নিষেধ করি। প্রকাশ্যে ধূমপান করার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সাবধানও করি।’’ মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য আবার বলেন, ‘‘আমার অফিস চত্বরে সিসিটিভি লাগানো আছে। কর্মীদেরও বারণ করা আছে, অফিসের মধ্যে ধূমপান না করার জন্য। তা ছাড়া, আমরা সরকারি অফিসে কর্মীদের প্রকাশ্যে ধূমপান করতে নিষেধ করি।’’ ক্যানিং হাসপাতালের সুপার অর্ঘ্য রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও সরকারি নির্দেশিকা নেই। সে ক্ষেত্রে কেউ যদি হাসপাতাল চত্বরে প্রকাশ্যে ধূমপান করেন, তা হলে কী ব্যবস্থা নেব?’’ তা ছাড়া, আমাদের তেমন লোকজনও নেই যে নিয়মিত নজরদারি চালাবে।’’ যদিও তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি হাসপাতালের বেড়ে শুয়ে ধূমপান করেন, সে ক্ষেত্রে আমরা তাঁকে নিষেধ করি।’’

রেল পুলিশের দাবি, ক্যানিং প্ল্যাটফর্ম চত্বরে ধূমপান করতে বারণ করা হয়। কেউ ধরা পড়লে জরিমানাও করা হয়। হকারদের প্ল্যাটফর্মে গুটখা, বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করতে দেওয়া হয় না। তবে পুলিশ কর্তাদের মতে, কেউ লুকিয়ে-চুরিয়ে বিক্রি করতেও পারে। সে দিকে লক্ষ্য রাখা হবে।

smoking effects bad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy