Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Drinking Water Crisis

কেনা জলই ভরসা বাগদার বেশিরভাগ পরিবারের

বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ আটকে থাকলেও, জলজীবন প্রকল্পের টাকা পেয়ে গিয়েছে রাজ্য। কিন্তু তারপরেও কি গ্রামে গ্রামে জল সরবরাহের কাজে গতি এসেছে? পঞ্চায়েত ভোটের আগে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার

জল কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

জল কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক Sourced by the ABP

সীমান্ত মৈত্র  
বাগদা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৩ ০৭:৪৮
Share: Save:

পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছয়নি অনেক বাড়িতে। যেখানে পোঁছেছে, সেখানেও নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত জল মেলে না বলে অভিযোগ। ফলে পানীয় জল কিনেই খেতে হয় বাগদা ব্লকের বেশিরভাগ মানুষকে। আর্সেনিকপ্রবণ এই ব্লকে পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে প্রশাসন কেন উদাসীন, সেই প্রশ্ন উঠছে।

এই পরিস্থিতিতে এলাকায় বহু জলের কারখানা গজিয়ে উঠেছে। সেই জল বাড়িতে পৌঁছে দেন কারবারিরা। এ ছাড়া, বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় সজল ধারা প্রকল্পের জলের প্লান্টও বসানো হয়েছে। সেখান থেকেও অনেকে জল কিনে খান। অনেকে টিউবওয়েলের জল পান করেন। তবে বাসিন্দাদের দাবি, পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়িতে জল না আসা পর্যন্ত পানীয় জলের সমস্যা মিটবে না।

সম্প্রতি হেলেঞ্চা পঞ্চায়েতের মণ্ডপঘাটা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, গাড়ি করে পানীয় জল ভর্তি ড্রাম নিয়ে এসে বিক্রি করছেন এক যুবক। তিনি জানালেন, স্থানীয় দেয়ালদহ এলাকার একটি পানীয় জলের কারখানা থেকে জল আনেন। ২০ লিটার জলের দাম ১২ টাকা। বিজলি রায় নামে এক মহিলা বলেন, “বাড়িতে এখনও পানীয় জলের লাইন যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে কেনা জলের উপরেই আমাদের ভরসা করতে হয়।” তবে কারখানার এই জল পরিস্রুত কিনা, আর্সেনিকমুক্ত কি না, তা কেউ জানে না। সীমা মিস্ত্রি নামে এক মহিলার কতায়, “প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে সজল ধারা প্রকল্পের জল কিনে আনতে হয়। এক ড্রাম জলের মূল্য ৬ টাকা। সপ্তাহে ৬ ড্রাম জল লাগে।” মহিলারা জানালেন, পানীয় জল কিনে খেলেও রান্নার কাজে বাড়ির বা এলাকার সাধারণ টিউবওয়েলের জলের উপরে ভরসা করতে হয়। পাইপলাইনে জল এলে সেই সমস্যা মিটবে।

ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, বাগদা, রণঘাট, সিন্দ্রাণী-সহ কয়েকটি পঞ্চায়েতের কিছু এলাকায় বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও গ্রামের মানুষের অভিজ্ঞতা বেশ খারাপ। বাগদার দীনবন্ধু হীরা বলেন, “বাড়ি বাড়ি যে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে, সেই জল পানীয়ের উপযুক্ত নয়। দিন কয়েক আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, ওই জল যেন আমরা না খাই। সজল ধারা প্রকল্পের জল কিনে খেতে হয় আমাদের।” সিন্দ্রাণী এলাকার বাসিন্দা বিপ্রজিৎ দাস বলেন, “জলের সংযোগ যে সব বাড়িতে আছে, সেখানে জল খুব ধীর গতিতে আসে এবং অনিয়মিত। মানুষের প্রয়োজন মেটে না। আমরা জল কিনে খাই।”

বাগদার বিডিও সৌমেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “জল জীবন মিশন প্রকল্পে বাগদা ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার ১৫টি প্রকল্প চলছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। এখনও কোনও পঞ্চায়েতেই ১০০ শতাংশ বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিছু বাড়িতে দেওয়া গিয়েছে।” ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে বাঁশঘাটা এবং গাদপুকুরিয়া এলাকায় দু’টি ওভারহেড রিজার্ভার বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিজেপির অমৃতলাল বিশ্বাস বলেন, “কেন্দ্র অনেক আগে টাকা দেওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দিতে ব্যর্থ। কিছু বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হলেও তা থেকে জল পড়ে না।” বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা রায়ের কথায়, “ব্লক জুড়ে এখন পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। চেষ্টা করছি দ্রুত বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দিতে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drinking Water Crisis Bagda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE