Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

লালারসের নমুনা দিতে সমস্যা গোবরডাঙায়, পুরোদমে সচল হাসপাতালের দাবি 

এই মুহূর্তে করোনার পরীক্ষার জন্য গোবরডাঙা পুরসভা এলাকায়  লালারস সংগ্রহের কোনও ব্যবস্থা নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা 
গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২০ ০৭:৩০
Share: Save:

করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে গোবরডাঙা পুরসভা এলাকায়। সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গি।

গোবরডাঙা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার পর্যন্ত পুরসভা এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ জন। এখন অ্যাক্টিভ রোগী ৯ জন।

এই পরিস্থিতিতে শহরবাসী ফের একবার পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের দাবি তুলেছেন। তাঁরা চাইছেন, গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটিকে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসাবে তৈরি করা হোক। একই সঙ্গে হাসপাতাল থেকেই উপসর্গ থাকা মানুষের লালারস সংগ্রহের দাবি তুলেছেন তাঁরা।

এই মুহূর্তে করোনার পরীক্ষার জন্য গোবরডাঙা পুরসভা এলাকায় লালারস সংগ্রহের কোনও ব্যবস্থা নেই। বাসিন্দারা জানালেন, করোনার উপসর্গ থাকা মানুষের করোনার পরীক্ষা করাতে লালারস দিতে যেতে হচ্ছে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল বা মছলন্দপুর ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে। গোবরডাঙা থেকে ওই হাসপাতাল দু'টির দূরত্ব ১৩ এবং সাড়ে ৯ কিলোমিটার। যেখানে যেতে হলে ব্যক্তিগত ভাবে গাড়ি ভাড়া করে যেতে হচ্ছে। লকডাউনে অনেকেই রুজিরোজগার হারিয়েছেন। ফলে টাকা খরচ করে অনেকেই যেতে পারছেন না। অভিযোগ, হাসপাতালে গেলেও দিনের দিন লালারস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। একাধিক দিন যেতে হচ্ছে।

গোরবডাঙায় গ্রামীণ হাসপাতালটিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসাবে তৈরির দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছে গোবরডাঙা পৌর উন্নয়ন পরিষদ। পরিষদের সহ সভাপতি পবিত্র মুখোপাধ্যায় বলেন, "করোনা ও ডেঙ্গি ছড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা চাই গোরবডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হিসাবে ঘোষণা করে এখানেই লালারস সংগ্রহের ব্যবস্থা করুক রাজ্য সরকার। মছলন্দপুর গ্রামীণ হাসপাতালে দৈনিক ৫ জনের বেশি মানুষের লালারস সংগ্রহ করা হয় না। ফলে গোবরডাঙা থেকে মানুষ সেখানে গেলেও সমস্যায় পড়ছেন।"

গোবরডাঙা পুরসভার পুরপ্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা তৃণমূল নেতা শঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য লালারস সংগ্রহের দাবি জানিয়ে আমরা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে চিঠি দিচ্ছি। আমরাও চাই এখান থেকে লালারস সংগ্রহ হোক।"

২০১৪ সালের ৪ নভেম্বর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালের রোগী ভর্তির ব্যবস্থা বা ইনডোর বিভাগ। এরপর অনেক আন্দোলন, অনেক দাবি জানানো সত্ত্বেও হাল ফেরেনি হাসপাতালের। বরং ধীরে ধীরে চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। একজন চিকিৎসক সপ্তাহের তিন-চার দিন বহির্বিভাগে রোগী দেখতেন। হাসপাতালটি জেলা পরিষদ পরিচালিত। হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু করার দাবিতে দলমত নির্বিশেষে শহরবাসী সরব হন। সেই দাবি অবশ্য আজও মেটেনি।

২০ ফেব্রুয়ারি গোবরডাঙা হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পরিষদ। পরিষদ জানায়, হাসপাতালটির দায়িত্বভার জেলা পরিষদের হাত থেকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে দেওয়া হবে। যত দিন তারা দায়িত্ব ভার নিচ্ছে না তত দিন জেলাপরিষদ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পরিষেবা চালু করবে। হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ১০টি শয্যা দেওয়া হচ্ছে বলেও ঘোষণা করা হয়। পরে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল চালু করবে।

এপ্রিল মাস থেকে হাসপাতালে বহির্বিভাগ চালু হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চিকিৎসকেরা বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন। কিছু ওষুধপত্র দেওয়া হচ্ছে। রাতে অবশ্য কোনও চিকিৎসক থাকেন না। পরিষেবাও মেলে না। করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে, বিশেষ করে রাতে মানুষকে দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বিজেপির গোবরডাঙা শহর পৌর মণ্ডলের সভাপতি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা পেতে নাজেহাল হচ্ছেন। আমরা সর্বদল বৈঠকে দাবি জানিয়েছি, এখানে লালারস সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করা হোক। হাসপাতালটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপে তৈরি করা হোক।" গোবরডাঙা হাসপাতাল বাঁচাও কমিটির আহ্বায়ক বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘করোনা, ডেঙ্গি নিয়ে মানুষ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। চিকিৎসা পরিষেবা নেই। কয়েক দিন আগে অসুস্থ এক ব্যক্তি চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিংহোমে ঘুরেছেন। শেষে তিনি মারা গিয়েছেন। গোবরডাঙায় পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল থাকলে তাঁকে হয় তো এ ভাবে মরতে হত না। আমরা চাই দ্রুত এটি স্টেট জেনারেল হাসপাতাল হিসাবে তৈরি করা হোক।’’

জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ জ্যোতি চক্রবর্তী জানান, প্রথমে ঠিক ছিল, ছ’মাস তাঁরা হাসপাতালটি চালাবেন। করোনা পরিস্থিতিতে সেটি আরও ছ’মাস বাড়ানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে হাসপাতাল নিয়ে সব পরিকল্পনা খানিকটা থমকে গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Gobardanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE