বহু অভিযোগ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়েই। নিজস্ব চিত্র।
দুপুর ১২টা। লাঠিভর দিয়ে এক বৃদ্ধ পেটে ব্যথা নিয়ে এলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কোনও চিকিৎসক নেই। ফার্মাসিস্ট তাঁকে ওযুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। অথচ বহির্বিভাগে তখন রোগী দেখার সময়। বাগদা ব্লকের কনিয়াড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বেশির ভাগ সময়ই ওই ফার্মাসিস্টই রোগীদের চিকিৎসা করেন।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, সোম ও বুধবার চিকিৎসক বহির্বিভাগে রোগী দেখতে আসেন। আর কখনও সখনও শুক্রবার করেও আসেন। তা ছাড়া, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি নার্সেরও দেখা মেলে না। বাগদার বিএমওএইচ প্রণব মল্লিক বলেন, ‘‘ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসককে আগে নাটাবেড়িয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও রোগী দেখতে হতো। ফলে তিনি কনিয়াড়ায় রোজ আসতে পারতেন না। এখন নাটাবেড়িয়াতে আর ওই চিকিৎসককে রোগী দেখতে হয় না। ফলে তিনি কনিয়াড়ায় সোম থেকে শনিবার পর্যন্তই রোগী দেখতে পারবেন।’’
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে গরু চড়ে বেড়াচ্ছে। পাঁচটি কোয়ার্টার ভগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে। দরজা জানালা ভেঙে গিয়েছে। সেগুলিতে আগাছায় ভরা। সাপেদের আনাগোনাও রয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গায়ে ঘুঁটে দেওয়া হয়েছে।
এলাকার লোকজন জানালেন, এক সময়ে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী— সকলেই থাকতেন। ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্য পরিষেবা মিলত। ছিল রোগী ভর্তির ব্যবস্থা। প্রসবও করানো হতো। কিন্তু বহু বছর হল সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অথচ ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেই নির্ভর করেন আশপাশের কয়েক হাজার মানুষ। দিন কয়েক আগে সর্বক্ষণ চিকিৎসকের দাবিতে এলাকার মানুষ পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন জ্বর, সর্দি কাশি, পেটের অসুখ ক্রিমি, সুগার, প্রেসারের ওষুধ দেওয়া হয়। তবে সাপে কাটা বা কুকুরে কামড়ানোর প্রতিষেধক পাওয়া যায় না। যে দিন চিকিৎসক আসেন, সে দিন বহির্বিভাগে ১০০-১৫০ রোগী আসেন দেখাতে। বাসিন্দারা জানান, যে দিন চিকিৎসক আসেন সে দিনও দুপুরের পরে তিনি চলে যান। ফলে বিকেলের পরে হাতুড়ে চিকিৎসক ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। এখান থেকে বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল বা বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় আঠারো কিলোমিটার। রাত-বিরেতে গাড়ি জোগাড় করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া খুবই সমস্যার। বিশেষ করে প্রসূতিদের নিয়ে আরও সমস্যা হয়। হাসপাতালের পথে সন্তান প্রসবের ঘটনাও ঘটেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy