Advertisement
E-Paper

‘রাইটার’ পাওয়া যায় বুঝি, জানতই না প্রিয়তোষ

প্রিয়তোষের উচ্চতা মেরেকেটে ফুট তিনেক। হাতের সব ক’টা আঙুল এবং পা বাঁকা। কোনও রকমে হাঁটতে পারে মাইতির চক এলাকার প্রিয়তোষ দাস। জটিল প্রতিবন্ধকতা নিয়েই সে এ বার মাধ্যমিকে বসেছে।

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০০:৩১
পরীক্ষার-পথে: মায়ের সঙ্গে প্রিয়তোষ। —নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষার-পথে: মায়ের সঙ্গে প্রিয়তোষ। —নিজস্ব চিত্র

পাড়ার ভ্যানওয়ালা কাকু কোলে করে স্কুলের বারান্দা পর্যন্ত তুলে দিয়ে গেল। পরীক্ষার হলে ঢুকে উনিশ বছরের প্রিয়তোষ নিজেই কোনও রকমে টেনে হিঁচড়ে বসার বেঞ্চে তুলল নিজেকে। জটিল হাড়ের রোগে আক্রান্ত কালীনগর দ্বারিকানাথ ইন্সটিটিউশনের ওই ছাত্র এ বার মাধ্যমিক দিচ্ছে কাকদ্বীপ বীরেন্দ্র বিদ্যানিকেতন থেকে। পরিবারের অজ্ঞতা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের নজর না দেওয়ার জন্য একজন ‘রাইটার’ (সহকারী লেখক) জোটেনি তার।

প্রিয়তোষের উচ্চতা মেরেকেটে ফুট তিনেক। হাতের সব ক’টা আঙুল এবং পা বাঁকা। কোনও রকমে হাঁটতে পারে মাইতির চক এলাকার প্রিয়তোষ দাস। জটিল প্রতিবন্ধকতা নিয়েই সে এ বার মাধ্যমিকে বসেছে। আর পাঁচটা সাধারণ ছাত্রছাত্রীর মতোই কোনও সাহায্য ছাড়া পরীক্ষা দিয়েছে।

বীরেন্দ্র বিদ্যানিকেতনের শিক্ষকেরা তা দেখে অবাক। প্রধান শিক্ষক দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘ছেলেটি খুবই লড়াই করছে। ওর জন্য আমাদের সহানুভূতি রয়েছে।’’

সোমবার বাংলা পরীক্ষা শেষ হলে তার মা বিউটি দাস তাকে নিতে এসেছিলেন। জানালেন, চার ভাইবোনের মেজ প্রিয়তোষ। ভাই পরিতোষ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। সে-ও একই রোগে আক্রান্ত। দরিদ্র পরিবার। বাবা প্রকাশ দাস ট্রলারকর্মী। বাড়িতে প্রিয়তোষ এবং তার ভাইয়ের চিকিৎসার পিছনেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। তার মধ্যেও পড়াশোনা বজায় রেখেছে সে। বিউটিদেবী তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষার পর ছেলে বলছে, টানা লিখতে গিয়ে হাত ব্যাথা করছে। কারণ ওর হাড় জন্ম থেকেই নরম। একটা যদি লেখকের ব্যবস্থা হত তাহলে ভাল হত।’’ প্রিয়তোষের দাবি, স্কুল থেকে কোনও দিনই জানানো হয়নি, রাইটার নিতে পারে সে। পরীক্ষাকেন্দ্রে এসে সে কথা জানতে পারে ছেলেটি। ‘রাইটার’ পেতে গেলে তথ্য বোর্ডে পাঠিয়ে আগাম অনুমোদন নিতে হয়।

কালীনগর দ্বারিকানাথ ইন্সটিটিউশনের প্রধান শিক্ষক সুরজিৎ দাস বলেন, ‘‘প্রিয়তোষ ক্লাসে কখনও পরীক্ষার সময়ে ‘রাইটার’ চায়নি। মাধ্যমিকের সময়েও কিছু বলেনি। আমরাও তাই ওর আত্মবিশ্বাসের উপরে ভরসা করেছিলাম। তবে দেখছি যদি পর্ষদের বিশেষ অনুমোদন কিছু পাওয়া যায়।’’ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের জেলা আহ্বায়ক অজিত নায়েক বলেন, ‘‘স্কুল দ্রুত আবেদন করুক পর্ষদের কাছে। আমরা বিশেষ ব্যবস্থা করার আর্জি জানাব।’’ কলকাতার এক সরকারি স্কুলের প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘‘বিশেষ ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি সুযোগ সুবিধা পায় এ ধরনের ছাত্রেরা। কিন্তু সে জন্য স্কুলকে উদ্যোগী হতে হয়। পর্ষদকেও দায়িত্ব নিতে হবে।’’

৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও রাইটার ছাড়াই পরীক্ষা দিল উত্তর ২৪ পরগনার মহিষপোতার দেবকৃষ্ণ মৈত্র। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ওই পড়ুয়ার মনের জোর প্রশংসা করার মতো। সে ঠিক করে বসতেও পারে না। সেই অবস্থায় ‘রাইটার’ ছাড়াই পরীক্ষা দিচ্ছে।

সহ প্রতিবেদন: সুপ্রিয় তরফদার

Education Madhyamik Examination Physically Challenged প্রিয়তোষ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy