Advertisement
০৭ মে ২০২৪

টোপ দিয়ে নারী পাচার চক্রের হদিস

মাস দুয়েক আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল গাইঘাটার বছর চোদ্দোর এক কিশোরী। তাকে উদ্ধারের জন্য তদন্তে নেমে পুলিশ হদিশ পায় রানাঘাটের নারী পাচার চক্রের এক সদস্যার। সেই মহিলাকে ফোনে এক কিশোরীকে নাচতে নামানোর টোপ দিয়ে পাচার হয়ে যাওয়া গাইঘাটার ওই কিশোরীকে রানাঘাট থেকে তো পুলিশ উদ্ধার করলই, খোঁজ মিলল একটি আন্তঃরাজ্য নারী পাচার চক্রেরও। গ্রেফতার করা হল চক্রের সঙ্গে জড়িত দুই মহিলাকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৫ ০০:২০
Share: Save:

মাস দুয়েক আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল গাইঘাটার বছর চোদ্দোর এক কিশোরী। তাকে উদ্ধারের জন্য তদন্তে নেমে পুলিশ হদিশ পায় রানাঘাটের নারী পাচার চক্রের এক সদস্যার। সেই মহিলাকে ফোনে এক কিশোরীকে নাচতে নামানোর টোপ দিয়ে পাচার হয়ে যাওয়া গাইঘাটার ওই কিশোরীকে রানাঘাট থেকে তো পুলিশ উদ্ধার করলই, খোঁজ মিলল একটি আন্তঃরাজ্য নারী পাচার চক্রেরও। গ্রেফতার করা হল চক্রের সঙ্গে জড়িত দুই মহিলাকে।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম লালি সিংহ এবং প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস। লালির বাড়ি গাইঘাটার নাইগাছিতে। প্রিয়াঙ্কার বাড়ি রানাঘাটের আনুলিয়ায়। সেখান থেকেই গত ২০ জুন ওই কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। তখন প্রিয়াঙ্কাকে ধরা যায়নি। রবিবার ফের রানাঘাটে অভিযান চালিয়ে প্রিয়াঙ্কাকে ধরা হয়। প্রিয়াঙ্কার স্বামী শিবু বিশ্বাস ওই চক্রের অন্যতম পাণ্ডা। তার সহযোগিতাতেই লালি ওই কিশোরীকে উত্তরপ্রদেশে নিয়ে গিয়েছিল। শিবু পলাতক।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধু ওই দুই মহিলাই নন, তদন্তে নেমে ওই পাচার চক্রের আরও কয়েক জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

ওই কিশোরীর বাড়িও নাইগাছিতে। তার বাবা মারা গিয়েছেন। মা বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। কিশোরী দিদিমার কাছে মানুষ। পুলিশকে দিদিমার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, গত ২৩ এপ্রিল লালি ওই কিশোরীকে নিয়ে বাইরে যায়। তার পর থেকে দু’জনের খোঁজ মিলছিল না। তদন্তে নেমে পুলিশ লালির মায়ের কাছ থেকে তার ফোন নম্বর পায়। জানতে পারে লালি ভিন্ রাজ্যে নাচের অনুষ্ঠান করে। এক তদন্তকারী পুলিশ অফিসার অন্য পরিচয়ে লালিকে ফোন করে জানান, তার পরিচিত এক কিশোরীকে নাচতে পাঠাতে চান। লালি সেই টোপ গেলে। সেই সময় লালি উত্তরপ্রদেশে ছিল। সেখানে সে কিশোরীকে নিয়ে আসতে বলে।

গত ১৮ জুন জেলা পুলিশের একটি দল উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়া জেলার রামপুর কারখানা এলাকায় হানা দেয়। পরের দিন স্থানীয় পোখরবিন্দা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে খুশরুদ্দিন নামে এক নারী পাচার চক্রের পাণ্ডার ডেরায় লালির খোঁজ মেলে বলে পুলিশ জানায়। কিন্তু কিশোরীর সন্ধান মেলেনি। এর পরে লালিকে জেরা করেই পুলিশ প্রিয়াঙ্কা এবং ওই কিশোরীর কথা জানতে পারে। ট্রানজিট রিমান্ডে পুলিশ রবিবার লালিকে গাইঘাটায় নিয়ে আসে। ধৃতদের সোমবার সোমবার বনগাঁ আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। কিশোরী বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেয়।

ওই কিশোরী বলে, ‘‘লালি নাচের অনুষ্ঠান, ভাল খাবার এবং মোটা টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখানোয় কিছু না বুঝেই আমি বেরিয়ে গিয়েছিলাম। জানতাম না উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। ওখানে আপত্তিকর ভাবে নাচতে হতো। যে বাড়িতে থাকতাম, সেখানে অনেক কাজ করতে হতো। বাড়ি ফিরতে চেয়েও পারিনি।’’ যদিও লালি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিয়োগ অস্বীকার করে পুলিশের কাছে দাবি করেছে, ওই কিশোরীই তার সঙ্গে জোর করে গিয়েছিল। তাকেও এক সময়ে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে উত্তরপ্রদেশে নাচের আসরে নামানো হয়েছিল।

তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা জানান, উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও খুশরুদ্দিনের বিহার ও মধ্যপ্রদেশেও আস্তানা রয়েছে।

নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার আরও কিছু কিশোরী ও তরুণীকেও সে উত্তরপ্রদেশে পাচার করেছে বলে জানা গিয়েছে। আর্থিক অনটনের সুযোগ নিয়ে গরিব পরিবারের মেয়েদের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ভিন্ রাজ্যে নিয়ে গিয়ে দেহ ব্যবসায় নামানোয় দীর্ঘদিন ধরেই এ রাজ্যে নারী পাচার চক্র সক্রিয়। এই চক্রটির হদিশ পাওয়ার পরে পুলিশের দাবি, এই কাজের সঙ্গে জড়িত আরও অনেকের খোঁজ মিলবে। উদ্ধার করা যাবে আরও অনেক মেয়েকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE