Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

লঞ্চে পৌঁছলেন ওসি,  গ্রামের স্কুলে বসল থানা

স্বুলের বারান্দায় টেবিল-চেয়ার পেতে সে কথা শুনছিলেন পুলিশ আধিকারিকেরা। আশেপাশে বেশ ভিড় জমেছে। সকলেই নানা আর্জি নিয়ে এসেছেন। রবিবার দুপুরে সন্দেশখালির মণিপুর প্রাথমিক স্কুলের জমে উঠেছিল ভ্রাম্যমাণ থানার কাজ।

থানার-কাজ: গ্রামে এল পুলিশ। — নিজস্ব চিত্র

থানার-কাজ: গ্রামে এল পুলিশ। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৯
Share: Save:

কাঁচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন মহিলা। বললেন, ‘‘স্বামীর বজ্জাতি দিন দিন বাড়ছে। ওকে একটু টাইট দিতে হবে, বড়বাবু।’’

স্বুলের বারান্দায় টেবিল-চেয়ার পেতে সে কথা শুনছিলেন পুলিশ আধিকারিকেরা। আশেপাশে বেশ ভিড় জমেছে। সকলেই নানা আর্জি নিয়ে এসেছেন।

রবিবার দুপুরে সন্দেশখালির মণিপুর প্রাথমিক স্কুলের জমে উঠেছিল ভ্রাম্যমাণ থানার কাজ।

তবে দিকে অনেকেই পুলিশ আসছে শুনে ভয়ে ভয়ে ছিলেন। গ্রামে রটে গিয়েছিল, লোক লস্কর নিয়ে লঞ্চে থানার বড়বাবু আসছেন দুষ্কৃতী ধরতে। পুলিশ কাকে ধরবে, কেন ধরবে, কিছুই কূলকিনারা করতে পারেননি গ্রামের মানুষ। কানাঘুষো চলছিল। তবে পরে জানা যায়, দুষ্কৃতী ধরতে নয়, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের সুবিধার জন্যই এক দিনের জন্য থানাকে উঠিয়ে আনা হয়েছে স্কুলের বারান্দায়।

টাকার অভাবে, নদী পেরিয়ে পৌঁছনোর ঝক্কির ভয়ে অঅনেকে নানা সমস্যায় থানা পর্যন্ত পৌঁছন না। অনেকে দুষ্কৃতীদের হুমকি উপেক্ষা করে থানায় যেতে ভয়ও পান। সন্দেশখালি থানার ওসি হিসাবে কাজ করতে গিয়ে এমন নানা অভিজ্ঞতা হয়েছে সৌম চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি পরিকল্পনা করেন, সপ্তাহে এক দিন থানা বসবে প্রত্যন্ত গ্রামের কোনও স্কুল, মাঠ বা গাছতলায়। তারই সূচনা হল এ দিন। অফিসার, পুলিশকর্মী, সিভিক ভলান্টিয়ার, চাইন্ড লাইনের সদস্যদের নিয়ে লঞ্চে থানা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উজিয়ে দুর মণিপুর গ্রামে আসেন সৌম্যবাবু।

বড় কলাগাছি নদী হয়ে তুষখালি ঘাটে নেমে মোটর বাইকে মণিপুর প্রাথমিক স্কুলে পৌঁছন সকলে। স্কুলের বারান্দায় শুরু হয় থানার কাজকর্ম। সঙ্গে ছিল সচেতনতা শিবির। স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান শিবাণী সর্দারের উপস্থিতিতে গ্রামের মানুষ আসেন নানা অভিযোগ নিয়ে।

শিবিরে জনা তিরিশ মানুষ জমি-সংক্রান্ত অভিযোগ করে সুরাহার দাবি জানান। মহিলা এবং স্কুল পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বারীন মুন্ডা, রত্না দাস, রতন মণ্ডল, কমলি সর্দারের কথায়, ‘‘গ্রামে এ ভাবে থানা এসে হাজির হওয়ায়া খুবই সুবিধা হল। তা ছাড়া, গ্রামে পুলিশ এলে দুষ্কৃতীরাও ভয়ে থাকবে।’’

এ দিন যে সব পড়ুয়ারা এসেছিল, তাদের বোঝান হয়, মোবাইলের ব্যবহার থেকে কী ভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়া যায়। সে সব থেকে নিজেদের কী ভাবে সুরক্ষিত রাখা যাবে, সে ব্যাপারেও সচেতন করেন ‘পুলিশ কাকুরা’। কী ভাবে শিশু ও মহিলা পাচার রোখা সম্ভব, তা নিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিরা। অনেকে আবার এর আগে থানায় গিয়ে দায়ের করা অভিযোগের অগ্রগতির নিয়ে খোঁজ-খবর করেন। সৌমবাবু বলেন, ‘‘গ্রামের থানায় কাজ করার সুবাদে দেখেছি, অনেকেই নানা কারণে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অভিযোগ নিয়ে থানা পর্যন্ত পৌঁছন না। বিশেষ করে নদী-জঙ্গলে ঘেরা সন্দেশখালির মানুষের এ ব্যাপারে অনীহা আছে। অনেকে ভয়ও পান।’’ তাঁদের সুবিধার কথা ভেবেই সপ্তাহে অন্তত এক দিন বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে সেখানকার মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনে সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Complaints School Police Station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE