Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Scam

Scam: ৫০ কোটির কেলেঙ্কারি,  জড়াচ্ছে নেতাদের নামও

তদন্তকারীরা জানান, অরিন্দমের বাবা একটি সংস্থা চালু করেছিলেন কয়েক বছর আগে। নাম ছিল, ‘কাকদ্বীপ রুরাল ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।’

নজরে: অরিন্দমের এই অফিস থেকে চলত কারবার।

নজরে: অরিন্দমের এই অফিস থেকে চলত কারবার। নিজস্ব চিত্র।

সমরেশ মণ্ডল
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২২ ০৭:০৭
Share: Save:

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা খুলে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা চক্রের হদিশ পেয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে অফিসটি সিল করা হয়েছে। এজেন্টরা অনেকেই এলাকা ছাড়া। তদন্তকারীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কিছু রাজনৈতিক নেতার নামও উঠে আসছে প্রতারণার ঘটনায়। তাঁদের অনেকেও এলাকা ছেড়েছেন বলে জানতে পারছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কারও নাম সামনে আনতে চাইছে না পুলিশ।

‘কাকদ্বীপ স্বনির্ভর গোষ্ঠী’ নামে ওই সংস্থার আধিকারিক অরিন্দম পন্ডাকে শুক্রবার সুন্দরবন পুলিশ জেলার তদন্তকারী অফিসারেরা দমদম বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে। ধরা পড়ে তাপস বেরা নামে হারউড কোস্টাল থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ার। তাদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

কাকদ্বীপের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা অভিযুক্তদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। সংস্থার মূল অফিস সিল করে দিয়েছি। প্রতারণাচক্রে আর কারা জড়িত, সেই খোঁজ চলছে।’’

এ বিষয়ে কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‘কী হয়েছে না হয়েছে, আমি কিছু জানি না। যারা টাকা দিয়েছে, তারা নিজের উদ্যোগে দিয়েছে, তারা বুঝবে।’’ কিন্তু বেশ কয়েকজন নেতা নামও তো প্রতারণা-চক্রে জড়িত আছে বলে জানা যাচ্ছে। মন্টুরামের জবাব, ‘‘এ সব আমার জানার দরকার নেই। যে দোষ করবে, সে শাস্তি পাবে। দল এ ব্যাপারে কোনও প্রভাব বিস্তার করবে না। এ ব্যাপারে দল কিছু জানেও না।’’

তদন্তকারীরা জানান, অরিন্দমের বাবা একটি সংস্থা চালু করেছিলেন কয়েক বছর আগে। নাম ছিল, ‘কাকদ্বীপ রুরাল ডেভলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।’ অরিন্দম সেখানে বাবার সঙ্গে কাজ করত। কাশীনগরে, যেখানে অরিন্দমের বাড়ি, সেখানে একটি স্কুল আছে অরিন্দমের পরিবারের।

২০১২ সালে ‘কাকদ্বীপ স্বনির্ভর গোষ্ঠী’ তৈরি করে অরিন্দম। মাইক্রোফিনান্স ব্যবসা শুরু করে। গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের ঋণ দেওয়া হত। প্রায় ৭০ জনকে টোটো কেনার জন্য ঋণ দেওয়া হয়। কেউ টাকা জমা রাখলে ৫ বছরে দ্বিগুণ দেওয়া হত বলে প্রতিশ্রুতিও দিত অরিন্দমরা।

২০২০ সালে আমপানে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অরিন্দম বিদেশি এক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রচুর টাকা অনুদান জোগাড় করে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের নতুন বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। শুরুতে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কিছুদিনের মধ্যে অরিন্দম ৪০-৫০-৮০ হাজার টাকা তুলতে শুরু করে লোকের কাছ থেকে। বলা হয়, বিনিময়ে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকার ইমারতি দ্রব্য দেওয়া হবে।

২০১৯ সালে কাকদ্বীপ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নতুন ঝাঁ চকচকে অফিস তৈরি হয় কাকদ্বীপ নতুন রাস্তার পেট্রল পাম্পের কাছে। বাড়ি তৈরির জন্য সস্তায় ইমারতি দ্রব্য দেওয়া হবে বলে প্রচার চলত সেখান থেকে। এককালীন ৪০ হাজার টাকা জমা করলে ৮০ হাজার টাকার ইমারতি দ্রব্য দেওয়া হবে বলা হয়। ৮০ হাজার টাকা জমা করলে ২ লক্ষ টাকার ইমারতি দ্রব্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মেলে। প্রথম প্রথম কয়েকজন সেই সুবিধা পেয়েছিলেন।

প্রচার হতে থাকে সংস্থার কথা। এজেন্ট রেখে সুন্দরবন এলাকার মানুষের থেকে মোটা টাকা তোলা শুরু হয়। কাকদ্বীপ, নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমায় ছড়িয়ে ছিল অরিন্দমদের এজেন্টরা। চিটফান্ডের আদলে বিষয়টি চলতে থাকে বলে অভিযোগ।

২০২১ সালের পর থেকে প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। একাধিক অভিযোগ হয় থানায়। গা ঢাকা দেয় অরিন্দম। বন্ধ হয়ে যায় অফিস। ততদিনে এলাকা থেকে অবশ্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা তোলা হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। অরিন্দমের অফিসে প্রায় ৭০ জন চাকরি করতেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতন মিলত।

সংস্থায় কাজ করতেন আশিস বেতাল। তিনি বলেন, ‘‘মূলত কাগপত্র দেখাশোনা করতাম। বিদেশি সংস্থা টাকা দিচ্ছে বলে শুনতাম। কিন্তু কোথা থেকে কারা টাকা দিত, তা বলা হত না। আনুমানিক ১৬ হাজার মানুষ এখানে টাকা জমা দিয়েছিলেন বাড়ি তৈরির সামগ্রী পাওয়ার আশায়।’’

সূত্রের খবর, কাকদ্বীপ ছাড়াও নদিয়া, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একাধিক অফিস ছিল সংস্থার। পুরুলিয়ার নামবাজার, বাঁকুড়ার সারেঙ্গায় অফিস ছিল বলেও জানা যাচ্ছে। তদন্তকারীদের দাবি, কাকদ্বীপ নতুন রাস্তা থেকে কামারহাট পর্যন্ত সাত জায়গায় নামে-বেনামে জমি কেনা আছে অরিন্দমের। দু’টি বিল্ডার্সের দোকানও খোলে।
অরিন্দমের সংস্থায় টাকা দিয়ে প্রতারিতদের একজন নামখানার বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘সংস্থার এক এজেন্টকে ৮০ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু বাড়ি তৈরির সামগ্রী পাইনি। এজেন্টকে ফোন করলে উনি ফোন ধরেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Scam Political Leaders
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE