Advertisement
১৭ জুন ২০২৪
Cyclone Remal

রেমালের আতঙ্ক, প্রস্তুতি প্রশাসনের

পয়লা জুন রাজ্যে সপ্তম দফার ভোট রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকায়।

হাসনাবাদ পঞ্চায়েত এলাকায় নদীর পাশের বাসিন্দাদের এনডিআরএফ সদস্যরা সতর্ক করছেন ঘূর্ণিঝড় নিয়ে।

হাসনাবাদ পঞ্চায়েত এলাকায় নদীর পাশের বাসিন্দাদের এনডিআরএফ সদস্যরা সতর্ক করছেন ঘূর্ণিঝড় নিয়ে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৪ ০৯:২৫
Share: Save:

যে দিন ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পড়েছিল উপকূলে, তিন বছর পরে ঠিক সেই দিনই আর এক ঘূর্ণিঝড় রেমাল আছড়ে পড়ার কথা। আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, আজ রবিবার বিকেল থেকে একাধিক জেলায় শুরু হবে ঝড়-বৃষ্টি। সোমবার ভোর রাতে বাংলাদেশের খেপুপাড়া ও সাগরদ্বীপের মাঝে আছড়ে পড়তে পারে এই ঘূর্ণিঝড়।

রবি ও সোমবার দু'দিনই দুই ২৪ পরগনায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ চার জেলায় কমলা সতর্কতা জারি হয়েছে। নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ায় নিষেধ করার পাশাপাশি শনিবার থেকেই দুই জেলার উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মাইকে প্রচার করছে প্রশাসন। নদীবাঁধের পাশে নিচু এলাকায় বসতি থাকলে সেখান থেকে কী ভাবে মানুষজনকে দ্রুত সরিয়ে আনা হবে তার মহড়াও হয়েছে এ দিন।

পয়লা জুন রাজ্যে সপ্তম দফার ভোট রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকায়। দুই জেলারই বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলির কয়েকটিতে ভোটে জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। রেমালের কোপে বানভাসি হলে এলাকার লোকজনকে যাতে কাছাকাছি স্কুল ভবনে রাখা যায়, তার ব্যবস্থাও সেরে ফেলেছে প্রশাসন।

দুর্যোগ মোকাবিলায় দুই ২৪ পরগনায় জেলা প্রশাসনের কর্তারা জরুরি বৈঠক করেছেন। সুন্দরবন পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার সহ পূর্ত, জনস্বাস্থ্য কারিগরি, স্বাস্থ্য, সেচ, বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিদের সঙ্গে কাকদ্বীপ মহকুমাশাসকের দফতরে বৈঠক করেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা। তিনি বলেন, ‘‘ঝড় আছড়ে পড়লে তা মোকাবিলার জন্য সব রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।’’

কাকদ্বীপ মহকুমাশাসকের দফতরে কন্ট্রোল খুলে গোটা জেলার পরিস্থিতি নজরদারি করা হচ্ছে। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে ক্যানিং মহকুমাশাসক এবং গোসাবা ও বাসন্তী ব্লক অফিসেও। এনডিআরএফ-এর (জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী) একটি বৈঠকে এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা ও কুলতলি আর উত্তরে হিঙ্গলগঞ্জকে বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গোসাবায় এনডিআরএফ-এর পঁচিশ জনের একটি দলের সঙ্গে সমন্বয় রাখছেন হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা।

কাকদ্বীপ মহকুমা প্রশাসন ঘোড়ামারা, মৌসুনি, ফ্রেজারগঞ্জ, গোবর্ধনপুর এলাকায় বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েছে। ঘোড়ামারা দ্বীপ-সহ অন্য উপকূল এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জল ও শুকনো খাবার শনিবার বিকেলেই পাঠানো হয়েছে। পর্যাপ্ত জেনারেটর, আলোর ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

রবিবার সকাল থেকে কাকদ্বীপ মহকুমা এলাকার সমস্ত ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়েছে প্রশাসন। এ দিকে, গোসাবা ব্লক প্রশাসনও পরিস্থিতি বুঝে খেয়া চলাচল বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছে। কাকদ্বীপ, সাগরেও দু’টি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দল প্রস্তুত রয়েছে। সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, “ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে উপকূল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে আনা হবে। সুন্দরবন এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত করা হয়েছে।”

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনও তৎপর রয়েছে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য। এ নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক করা হয়েছে। মাইকে সচেতনতা প্রচার চালানো হচ্ছে উপকূল এলাকাগুলিতে। হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি ১, সন্দেশখালি ২ ব্লকে ২৪ ঝড়ের কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।

জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম পদক্ষেপ করা হয়েছে। জেলার উপকূল এলাকায় মাইকে প্রচার করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। তবে এখনই ত্রাণ শিবিরে কাউকে নিয়ে আসা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে। সেচ দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।’’ হাসনাবাদ ব্লকেও পৌঁছেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দল। পাশাপাশি, ফেরিঘাটগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে, ঝড় হলে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Remal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE