Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
মোবাইল লুকোনো ছিল চালের ড্রামে
Murder

murder: যৌন অত্যাচারের জেরেই স্বামীকে খুন, দাবি স্ত্রীর

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ভাত ও শাকের সঙ্গে সামান্য সামান্য বিষ মিশিয়ে কিছুদিন ধরে খাওয়ানো হচ্ছিল আমিনুরকে।

জোহরা বিবি।

জোহরা বিবি। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:৩০
Share: Save:

স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে পরিবারে অশান্তি ছিলই। স্ত্রীর অভিযোগ, ইদানীং যৌন উত্তেজনাবর্ধক ওষুধপত্র খেয়ে নানা ভাবে নির্যাতন শুরু করেছিলেন স্বামী। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় মহিলা জানিয়েছে, সে সবের জেরেই স্বামীকে খুনের ষড়ষন্ত্র করে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে। খাবারে কীটনাশক মিশিয়ে খাওয়ানো হতে থাকে। কয়েকদিন পরে মারা যান বছর ঊনপঞ্চাশের আমিনুর মোল্লা। স্বামী অত্যাচার করতেন বলে জোহরা বিবি যে দাবি করেছে, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গাইঘাটার সুবিদপুরের ওই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে আমিনুরের স্ত্রী জোহরা ও তার প্রেমিক বাবলু সর্দারকে। বুধবার তাদের বনগাঁ আদালতে তোলা হলে বিচারক ৬ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আমিনুরের দেহ কবর থেকে তুলে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বছর আটেক আগে আমিনুরের বাড়িতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিল স্থানীয় যুবক বাবলু। পরিচয় হয় জোহরার সঙ্গে। অভিযোগ, দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।

সে কথা জানতে পারেন আমিনুর। যা নিয়ে অশান্তি চলছিল। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ অগস্ট দুপুরে আমিনুর নিজের বাড়িতে মারা যান। আচমকা প্রবল জ্বর আসে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা যান তিনি। প্রথা মেনে দেহ কবরস্থ করা হয়।

পরিবারের লোকজন এই মৃত্যু অসুস্থতাজনিত বলেই মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেয় একটি মোবাইল ফোন।

৬ অগস্ট শেষকৃত্যের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পরে সন্ধের দিকে আমিনুরের ছেলে আরিফ বাবার ঘরে খোঁজাখুঁজি করছিলেন। বাবার কোনও জিনিসপত্র পাওয়া যায় কি না দেখছিলেন। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, চালের ড্রামে তিনি একটি মোবাইল ফোন খুঁজে পান। ফোনটি নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করতে গিয়ে একটি কল রেকর্ডিং শোনেন। ওই রেকর্ডিং (যার সত্যতা খতিয়ে দেখেনি আনন্দবাজার) শুনে পরিবারের লোকজন আন্দাজ করেন, ফোনটি জোহরার। বাবলুর সঙ্গে মিলে সে-ই খুনের ছক কষেছিল বলে কথোপকথন থেকে জানা যায় বলে অভিযোগ। দু’জনের সম্পর্কের কথাও অজানা ছিল না কারও। ফলে সন্দেহ গাঢ় হয়। কিছুদিন আগে জোহরা বনগাঁয় গিয়ে বাড়ি ভাড়া করে বাবলুর সঙ্গে থাকত। পরে স্বামী বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাকে নিয়ে আসে। অভিযোগ, তারপরেও বাবলুর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলত জোহরা।

ওই ফোন উদ্ধারের পরে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিশ গ্রেফতার করে দু’জনকে।

কী ভাবে খুন করা হল আমিনুরকে?

বাবলু সর্দার।

বাবলু সর্দার। ফাইল চিত্র।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ভাত ও শাকের সঙ্গে সামান্য সামান্য বিষ মিশিয়ে কিছুদিন ধরে খাওয়ানো হচ্ছিল আমিনুরকে। দিন সাতেক পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। মারা যান। পুলিশ জানিয়েছে, মাসখানেক আগে বেড়ি গোপালপুর এলাকার একটি সারের দোকান থেকে কীটনাশক কিনেছিল বাবলু। ফোন করে জোহরাকে সে প্রায়ই ‘কাজ শুরু’ করতে চাপ দিত।

পুলিশকে জোহরা জানিয়েছে, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় সে বাবলুর সঙ্গে থাকতে শুরু করে। কিন্তু পরে স্বামী ফের বাড়ি নিয়ে যান। তারপর থেকে আমিনুর তার উপরে নির্যাতন করতেন। যৌন উত্তেজক ওষুধ খেয়ে নির্যাতন শুরু করেন। সে কথা জেনে বাবলু আমিনুরকে খুনের পরিকল্পনা করে। অমত করেনি জোহরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE