Advertisement
১৮ মে ২০২৪

শ্বশুরবাড়িতেই তরুণীর দেহ কবর দিয়ে প্রতিবাদ

সেরিনার কাকা নাজিমুদ্দিন শেখ খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ওই রাতেই সেরিনার স্বামী ও শাশুড়িকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

কবর: এখানেই পোঁতা আছে দেহ। নিজস্ব চিত্র

কবর: এখানেই পোঁতা আছে দেহ। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
কুলপি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:০০
Share: Save:

বিয়ের ছ’মাসের মধ্যে শ্বশুরবাড়িতে এলাকার তরুণীর অপমৃত্যু মানতে পারেননি গ্রামবাসী। খুনের অভিযোগ তুলে তাঁরা প্রথমে ওই বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছিলেন। পরে তরুণীর মৃতদেহ ওই বাড়িরই একটি ঘরে কবর দিয়ে দরজায় ইট গেঁথে প্রতিবাদ জানালেন তাঁরা!

গ্রামবাসীরা মনে করছেন, এ ভাবে কবর দেওয়ার কথা জানাজানি হলে আর কোনও মেয়ের উপরে শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার হবে না। আবার ওই তরুণীর শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও আর ওই ঘরে ঢুকতে সাহস করবেন না। এক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির মনোহরপুর গ্রামের সেরিনা বিবি ওরফে টুম্পা (১৮) নামে ওই তরুণীর অপমৃত্যুতে এ ভাবেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন গ্রামবাসী।

খুনের অভিযোগে অবশ্য ইতিমধ্যেই সেরিনার স্বামী বাদশা শেখ এবং শাশুড়ি মাফিয়া বিবিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, সেরিনার শ্বশুর, ভাসুর এবং ভাসুরের স্ত্রীর বিরুদ্ধেও খুনের অভিযোগ রয়েছে। তারা পলাতক। খোঁজ চলছে।

বাদশা ও সেরিনার বাড়ি কাছাকাছি। বাদশা টোটো চালাত। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই পণের টাকার জন্য সেরিনার উপরে নির্যাতন চালানো শুরু হয় বলে অভিযোগ। তরুণীর বাপেরবাড়ির অভিযোগ, গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে সেরিনা তাঁর মা মেহেরজান বিবির কাছে এসে জানান, শ্বশুরবাড়ি থেকে ২০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু মেহেরজানরা ওই টাকা দিতে পারেননি। সেরিনা ফিরে যান। সে দিন গভীর রাতে সেরিনার ভাসুর সুভান শেখ ওরফে লাল্টুর কাছ থেকে মেহেরজানরা জানতে পারেন, সেরিনা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। তাঁরা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখেন, দেহটি বিছানায় শোয়ানো রয়েছে। খবর যায় পুলিশে। সেরিনার কাকা নাজিমুদ্দিন শেখ খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ওই রাতেই সেরিনার স্বামী ও শাশুড়িকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

কিন্তু গ্রামবাসীদের ক্ষোভ তাতে মেটেনি। ময়নাতদন্তের পরে ১৭ সেপ্টেম্বর সেরিনার দেহ এসে পৌঁছতেই তেতে ওঠে এলাকা। শ’য়ে শ’য়ে গ্রামবাসী সেরিনার শ্বশুরবাড়িতে চড়াও হন। ভাঙচুর চালানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ যায়। পুলিশের সামনেই সেরিনার মৃতদেহ ওই বাড়ির একটি ঘরে কবর দেওয়া হয়। পুলিশের একাংশের দাবি, জনরোষ এতটাই প্রবল ছিল যে সে দিন তাদের কিছু করার ছিল না। পরে কবর দেওয়া নিয়ে কোনও অভিযোগ কেউ করেননি।

সাত দিন পরেও ঘটনাটি নিয়ে চর্চা চলছে গ্রামে। এখনও ওই বাড়ির পিছনের পুকুরে ভাসছে ভাঙা টিভি। গ্রামবাসীদের মধ্যে ইসরাফিল শেখ বলেন, ‘এই খুন আমরা মানতে পারছি না। আশপাশের গ্রামের লোকও ক্ষিপ্ত।’’ আর মেহেরজান বলেন, ‘‘বিয়ের সময়ে ওরা কোনও দাবি করেনি। কিন্তু তারপর যে পণ চাইতে শুরু করবে, কে জানত? ওরা মেয়েকে খুন করল। ওদের শাস্তি চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE