Advertisement
১৬ মে ২০২৪

মেয়াদ উত্তীর্ণ অগ্নি-নির্বাপকের

অসুস্থকে সুস্থ করে তোলা হয় যেখানে কিংবা অপরাধের বিচার করে আইনের রক্ষণাবেক্ষণ হয় যেখানে, সেই সব জায়গাই রয়ে গিয়েছে ঘোর বিপদের মধ্যে। সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আদালত ও জেলা হাসপাতালের আগুন নেভানোর যন্ত্রগুলির মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে অনেক দিন কিন্তু শুধুমাত্র দেখভালের অভাবেই সেগুলি বদলানো হয়নি।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩১
Share: Save:

অসুস্থকে সুস্থ করে তোলা হয় যেখানে কিংবা অপরাধের বিচার করে আইনের রক্ষণাবেক্ষণ হয় যেখানে, সেই সব জায়গাই রয়ে গিয়েছে ঘোর বিপদের মধ্যে। সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আদালত ও জেলা হাসপাতালের আগুন নেভানোর যন্ত্রগুলির মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে অনেক দিন কিন্তু শুধুমাত্র দেখভালের অভাবেই সেগুলি বদলানো হয়নি। ফলে হঠাৎ করে দুর্ঘটনা ঘটলে যা দিয়ে আগুন নেভানোর কথা সেই অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রগুলি কাজ করবে কী না তা নিয়েই রয়ে গিয়েছে সন্দেহ।

ওই দুই জায়গায় কখনও যে আগুন লাগেনি এমনটাও নয়। বেশ কিছু বছর আগে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় বারাসত আদালতের আইনজীবীদের সেরেস্তা। এর পরে ফের নতুন করে গড়তে হয় সেগুলি। সেই সময় বিচার প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হয়। কিন্তু সেই স্মৃতি থেকেও যে শিক্ষা নেওয়া হয়নি এই ঘটনাই তা প্রমাণ।

বারাসতের জেলা আদালতে বিচারালয় ছাড়াও রয়েছে বিচারক, সরকারি কৌঁসুলির চেম্বার। রয়েছে জেলার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, ‘জি আর সেকশন’ এবং বিচারপ্রার্থীদের রাখার ব্যবস্থা। বিশাল আদালত চত্বরে সব মিলিয়ে একশোরও বেশি অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র রয়েছে। সেগুলি কোথাও দেওয়ালে, কোথাও আবার এজলাসের মধ্যেই ঝুলিয়ে রাখা। আদালত চত্বরে ঘুরে দেখা গেল, অধিকাংশেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। কোনওটি ২ বছর, কোনওটি আবার বছরখানেক আগে। অর্থাৎ এত বছর ধরে যন্ত্রগুলি পরীক্ষা করাও হয়নি। কিছু যন্ত্র এতটাই পুরোনো হয়ে গিয়েছে যে কোনও তারিখ বোঝাই যাচ্ছে না।

অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্রের মেয়াদ যে উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে তা জানা নেই জেলা আদালতের কর্তা স্থানীয়দেরই। ওই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি শান্তময় বসু শনিবার বলেন, ‘‘সে কি! খোঁজ নিচ্ছি। আসলে এটা দেখা আমাদের দায়িত্ব নয়, জেলা বিচারকের এক্তিয়ারভুক্ত। সোমবারই তাঁকে সব জানাব।’’

একই অবস্থা বারাসত জেলা হাসপাতালেও। বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের চেম্বার, রোগীদের ওয়ার্ড, বিভিন্ন পরীক্ষার ঘর সর্বত্র ঝুলছে অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র। হাসপাতালের দেওয়ালে-দেওয়ালে লাগানো রয়েছে যন্ত্রগুলি। এই হাসপাতালেও একশোর বেশি অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্র রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ। সেগুলি পরীক্ষা তো দূরের কথা, বিষয়টি জানা নেই কর্তৃপক্ষেরও। হাসপাতাল আসা এক রোগীর কথায়, ‘‘এখানে তো মানুষ চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হতে আসেন। কিন্তু এখানেই যদি এমন মরণ ফাঁদ থাকে তা হলে তো সাংঘাতিক অবস্থা।’’

তবে বারাসত হাসপাতাল-সহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অগ্নি-নির্বাপণ যন্ত্রগুলির যে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে সে কথা জানেন উত্তর ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘আসলে দমকল, পূর্ত দফতরের সঙ্গে একযোগে গোটা জেলার অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হবে। খুব শীঘ্রই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হবে। সে কারণেই মেয়াদ উত্তীর্ণ ওই পুরনো সিলিন্ডারগুলি বদলানো হয়নি।’’

দমকল সূত্রের খবর, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান বা অফিসে মূলত চার রকমের সিলিন্ডারে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকে। যার একটি হল, ফোম। এগুলির এক বছরের সময়সীমা থাকে। তার পরে পুরনো ফোম বাতিল করে নতুন ফোম ভর্তি করতে হয়। দ্বিতীয়টি হল, এবিসি। এটি একটি পাউডার। যা তিন বছর পরে বদলে নতুন পাউডার ভরে ফেলতে হয়। তৃতীয়টি হল, ডিসিপি। অনেকটা এবিসির মতই এই যন্ত্রেও পাউডার থাকে। এটি তিন বছর অন্তর বদলাতে হয়। চতুর্থ প্রক্রিয়াটি হল, কার্বন ডাই অক্সাইড বা সিওটু। এগুলিতে ৫ বছর অন্তর গ্যাস পাল্টাতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে যদি এগুলি নিয়মমাফিক না পাল্টানো হয়, তা হলে আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে তা কাজ না করাই কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fire-extinguisher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE