অসীমা প্রামাণিক
মঙ্গলবার রাতে সারা ক্ষণ টিভিতে সাঁতরাগাছি ফুটব্রিজের ঘটনা দেখেছি আর ভেবেছি, সাধারণ মানুষের প্রতি কোনও দায়িত্ববোধই কি রেলের নেই? একের পর এক নির্দোষ মানুষের প্রাণ চলে যাচ্ছে। রেলের আধিকারিকদের কি কোনও অনুশোচনাই হয় না! ওঁদেরও তো পরিবার রয়েছে। তা হলে কাজের ক্ষেত্রে এই গাফিলতি কেন! সাঁতরাগাছি স্টেশন দিয়ে কত যাত্রী যাওয়া-আসা করেন। একসঙ্গে তিনটি ট্রেন চলে এলে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, তা কি রেলের কর্তারা জানতেন না? তা হলে আচমকা ঘোষণা করে পরপর তিনটি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢোকানো হল কেন?
রেলের ফুটব্রিজগুলি এখন মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে আমার। সাধারণ মানুষের কোনও নিরাপত্তা নেই। একের পর এক দুর্ঘটনায় তা প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। এখন রেলের ফুটব্রিজের নীচে দিয়ে যাওয়া হোক বা উপর দিয়ে— কোনওটাই কি আর নিরাপদ?
গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর আমি ও আমার মা অসীমা প্রামাণিক (৪৩) পুজোর বাজার করতে মদারহাটের নায়েবপাড়ার বাড়ি থেকে বারুইপুর স্টেশন বাজারে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে দু’জন গল্প করতে করতে আসছিলাম। বারুইপুর রেলস্টেশন ব্রিজের তলায় আমি একটু এগিয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ একটা ধপাস আওয়াজ আর মায়ের আর্তনাদ। পিছন ঘুরে দেখি মায়ের গায়ের উপরে একটা বড় সিমেন্টের চাঙড় পড়ে রয়েছে। আর এক মহিলাও পাশে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। পরে বুঝতে পারি, রেলের ফুটব্রিজ থেকে চাঙড়টি খসে পড়েছে। বারুইপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পরই মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
ঘটনার পরে আমরা জিআরপি-তে গিয়ে অভিযোগ করেছিলাম। রেলের অফিসারদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলাম। বলা হয়েছিল, রেলের তরফে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। ক্ষতিপূরণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পরে প্রায় এক মাস পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত রেলের কোনও অফিসার অবশ্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
আমার মা সংসারে এক মাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। আমার ভাই অভিজিৎ কলেজে পড়ে। বাবা অসুস্থ। আমরা সব কিছুই রেল কর্তাদের জানিয়েছি। তাঁরা শুধু আশ্বাস দিয়েছেন।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত কিছুই করেননি। ভাইয়ের একটা চাকরির জন্যও বলেছিলাম। আমরা বারুইপুরে রেল পুলিশের অফিসে গিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু বলা হয়, সময়মতো যোগাযোগ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy