Advertisement
০৪ মে ২০২৪

লক্ষ্মীপুজোকে ঘিরে সম্প্রীতির মেলা 

হাবড়া থানার বাঘাডাঙা এলাকার পাড়ুইপাড়ার কয়েক’শো পরিবারের মানুষ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল লক্ষ্মীপুজো।

মেলায় গ্রামবাসী। ছবি: সুজিত দুয়ারি

মেলায় গ্রামবাসী। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র
হাবড়া শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৩৪
Share: Save:

দুর্গা নয় লক্ষ্মীপুজোই এখানকার প্রধান উৎসব। লক্ষ্মীপুজোকে কেন্দ্র করেই মেতে ওঠেন গ্রামের নূর ইসলাম, প্রশান্ত, আমিনা, প্রণতিরা। এই পুজো ঘিরে সাতদিন মেলাও চলে।

হাবড়া থানার বাঘাডাঙা এলাকার পাড়ুইপাড়ার কয়েক’শো পরিবারের মানুষ নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল লক্ষ্মীপুজো। গ্রামের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দাবি, পাঁচশো বছর পুরনো তো হবেই এই লক্ষ্মীপুজো।

রবিবার থেকে এ বারও শুরু হয়েছে মেলা। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ মেলা দেখতে ভিড় করেন। স্থানীয় লোকজনই পুজো ও মেলার আয়োজক। বাঁধা হয়েছে মঞ্চ। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছে।

এখানে একটি স্থায়ী লক্ষ্মী মন্দির রয়েছে। অতীতে মন্দিরটি ছিল মাটি ও খড়ের। কয়েক বছর আগে সেটি পাকা মন্দির তৈরি হয়েছে। মন্দিরের পাশে রয়েছে প্রাচীন একটি তেঁতুলগাছ। গ্রামের মানুষ জানালেন, এলাকার মানুষের কাছে প্রধান উৎসব লক্ষ্মীপুজো। এই সময় সকলে নতুন জামা কাপড় কেনেন। আত্মীয় স্বজনেরা এখানে বেড়াতে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ প্রশান্ত পাড়ুই বলছিলেন, ‘‘আমার পূর্ব পুরুষেরাও বলে যেতে পারেননি কবে থেকে মেলা শুরু হয়েছিল। চল্লিশ বছর ধরে সক্রিয় ভাবে মেলার আয়োজন করেছি। এখন বর্তমান প্রজন্মের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।’’ বৃদ্ধ নিতাই পাড়ুই বললেন, ‘‘আমাদের পুজো জাগ্রত। দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ এখানে এসে মানসিক করেন।’’

পুজো নিয়ে গ্রামের মানুষের অহঙ্কারও রয়েছে। কর্মসূত্রে যাঁরা অন্যত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন তাঁরাও বছরের এই সময়ে বাড়ি ফেরেন। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজোতে ওই গ্রামের মানুষ সে ভাবে সাড়া দেন না। নতুন পোশাক কেনার রেওয়াজও রয়েছে লক্ষ্মীপুজোতে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় চলে যাত্রা, বাউল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

নূর ইসলাম, সাবিনারাও এই পুজোর জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা লক্ষ্মী পুজোর জন্য অপেক্ষা করে থাকি। সারা বছর যেখানেই থাকি না কেন এই সময়ে আমরা বাড়ি ফিরবই।’’ প্রবীণ মানুষেরা জানান, ‘‘লক্ষ্মী পুজোই আমাদের কাছে দুর্গা পুজো। শুনেছি অতীতে গ্রামের মানুষকে অনটন ও দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। লক্ষ্মী পুজো শুরু পর থেকে সেই অনটন কেটে গিয়েছে। গ্রাম থেকে অভাব দূর হয়ে গিয়েছে।’’

আমিনা বলেন, ‘‘আনন্দের কোনও রঙ হয় না। তাই আমরাও উৎসবে সামিল হই। ওই পুজো সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।’’ দলপতি পাড়ুই নামে এক বৃদ্ধা বলছিলেন, ‘‘চল্লিশ বছর আমার বিয়ে হয়েছে। বছরের এই সময়টা খুব আনন্দে কাটে আমাদের। কত জায়গা থেকে কত লোকজন আসেন। তাঁদের সঙ্গে গল্প মেলামেশা করি। একসঙ্গে যাত্রা দেখি। বছর ভর এই পুজোর অপেক্ষায় থাকি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Laxmi Puja Hindu Muslim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE