E-Paper

অধরা ক্ষতিপূরণ, মেলে না পুনর্বাসনও

পলাশ জানান, এক সময়ে তাঁদের পাঁচ বিঘা জমি ছিল। একটা বড় পুকুর ও বড় বাড়ি ছিল। সব গিলে খেয়েছে সমুদ্র।

সমরেশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:৪৭
এমনই দশা এলাকার নদীবাঁধগুলির। নিজস্ব চিত্র

এমনই দশা এলাকার নদীবাঁধগুলির। নিজস্ব চিত্র

ভোট আসে। সেই সঙ্গে আসে প্রতিশ্রুতিও। কিন্তু সে সব আর পূরণ হয় না। ঘর ভাঙার আশঙ্কা নিয়েই রোজ বেঁচে থাকে মৌসুনি দ্বীপের মানুষ।

মৌসুনি দ্বীপের একদিকে বঙ্গোপসাগর, অন্য দিকে চিনাই ও মুড়িগঙ্গা নদী। গত কয়েক বছরে পর পর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত হয়েছে এই দ্বীপ। তছনছ হয়ে গিয়েছে বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা। প্রতি বার প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর জলোচ্ছ্বাসে ছোট হয়ে আসছে দ্বীপের পরিধি। অনেকেরই ভিটেমাটি জলে তলিয়েছে। প্রশাসন থেকে ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন-সহ নানা প্রতিশ্রুতি মিলেছে বার বার। কিন্তু সে সব কিছুই মেলেনি বলেই দাবি স্থানীয় মানুষের। এমনকী, বেহাল বাঁধ মেরামতেও প্রশাসনের তেমন উদ্যোগ নেই বলেই অভিযোগ। পূর্ণিমা-অমাবস্যার কাটালেও নিয়ম করে জল ঢোকে এলাকায়।

মৌসুনির পয়লাঘেরি এলাকায় নদীবাঁধের পাশেই থাকেন পলাশ সাহু। ইয়াসে তাঁর ঘরবাড়ি সব ভেসে গিয়েছিল চিনাইয়ের জলে। বাড়ির অধিকাংশ জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। পলাশের কথায়, “প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিল পুনর্বাসন দেবে। কিন্তু তা মেলেনি আজও। বার বার প্রতিশ্রুতিই মেলে। আর বার বার ঠাঁইনাড়া হতে হয়। ভোট এসে গিয়েছে। এখন অনেকে আসবে, অনেক প্রতিশ্রুতি দেবে, কিন্তু পূরণ হবে না।” পাশের বেহাল বাঁধের দিকে দেখিয়ে হতাশ পলাশ বলেন, “নদীবাঁধের অবস্থাটা দেখেছেন! সামনে দুর্যোগ আসছে, আবার আমরা পুঁটলি গুছিয়ে ত্রাণ শিবিরে চলে যাব।”

পলাশ জানান, এক সময়ে তাঁদের পাঁচ বিঘা জমি ছিল। একটা বড় পুকুর ও বড় বাড়ি ছিল। সব গিলে খেয়েছে সমুদ্র। পলাশের কথায়, “এক সময়ে নিজেদের জমিতে কাজের জন্য শ্রমিক লাগাতে হত। আর এখন পেটের তাগিদে আমরাই এখানে ওখানে দিনমজুরির কাজ করি। সময়ে যদি বাঁধ মেরামতি হত, আমাদের এই অবস্থা হত না।” বছর পঁয়ত্রিশের যুবক আক্ষেপের সুরে জানান, ভোট দিতে যেতে ইচ্ছে করে না। তবু কর্তব্য পালন করতেই যান। বগডাঙা এলাকার বাসিন্দা গোপাল বারুই, অশ্বিনী হাইত, পাঁচুগোপাল খাঁড়ারা জানান, সব দলই মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেয়। এত দিনে প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি। তাই আর ভোট দিতে যেতে ইচ্ছে করে না।

এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, দুর্যোগের স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেননি দ্বীপবাসী। অনেক জমি চলে গিয়েছে নদীগর্ভে। নোনা জলে ডুবে থেকে নষ্ট হয়েছে অনেক জমি। সর্বস্বান্ত হয়েছেন কৃষকেরা। দ্বীপ এলাকার অধিকাংশ মানুষই কাজের সন্ধানে ভিন্ রাজ্যে চলে গিয়েছেন। যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা কেউ মিন ধরে, কেউ দিনমজুরি করে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছেন।

নামখানার বিডিও শান্তনু সিংহ ঠাকুর বলেন, “বালিয়াড়া, বাগডাঙা, পয়লা ঘেরি, কুসুমতলা এলাকার নদী বাঁধ মেরামতির জন্য সেচ দফতরকে বলা হয়েছে। অনুমোদন মিললে কাজ শুরু হবে। অনেক পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি। তাঁদের পুনর্বাসনও দেওয়া যায়নি। তাঁদের তালিকা তৈরি করে ত্রাণ ও আবাসন দফতরে পাঠানো আছে। দফতর থেকে সাহায্য মিললে সকলে পাবেন।” স্থানীয় বিজেপি নেতা অনুপ সামন্ত বলেন, ‘‘দ্বীপ এলাকার নদীবাঁধ মেরামত বা নতুন তৈরির জন্য যে অর্থ বরাদ্দ হয়, তার পুরো টাকা খরচ হয় না। কাটমানি হিসেবে কিছু টাকা তৃণমূল নেতাদের পকেটে চলে যায়। ফলে বাঁধের কাজ ঠিক হয় না। বেহাল বাঁধের জন্য আতঙ্কে দিন কাটে বাসিন্দাদের।’’ নামখানা ব্লক তৃণমূল সভাপতি ধীরেন দাসের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘নদীবাঁধের ভাঙন সারা বছর লেগেই আছে। বিশেষ করে নামখানা ব্লকে মৌসুনি দ্বীপ, ঈশ্বরীপুর,নাদাভাঙা ও হরিপুর এলাকার বাঁধের অবস্থা সত্যি খারাপ। সামনে দুর্যোগের আগে বেশি খারাপ অবস্থা কয়েকটি বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করেছে সেচ দফতর। বাকিগুলির কাজ তাড়াতাড়ি শুরু হবে।’’ বিরোধীদের অভিয়োগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরকারকে বদনাম করার জন্য ওরা মিথ্যা বলছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mousuni Island Rehabilitation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy