ভরদুপুরে হঠাৎ ফোন পেলেন এক ব্যক্তি। ওপারে থাকা মহিলা ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে জানান, ওই ব্যক্তির ক্রেডি়ট কার্ডটি অব্যবহৃত রয়েছে। সেটি বদলে নতুন কার্ড দেওয়া হবে। সে জন্য ব্যাঙ্ক থেকে একটি নম্বর পাঠানো হবে। ওই ব্যক্তি তাঁদের সেই নম্বরটি জানালেই নতুন কার্ড পাবেন।
রাজি হয়ে যান ব্যারাকপুরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি। তার মাসুল তিনি টের পান শুক্রবার। ব্যাঙ্ক থেকে পাঠানো ক্রেডিট কার্ডের বিলে লেখা রয়েছে, ৬ এপ্রিল (যে দিন ফোন এসেছিল) তিনি ২০ হাজার টাকার কেনাকাটা করেছেন! অথচ ওই ব্যক্তি বলছেন, তিনি ক্রেডিট কার্ডটি ব্যবহারই করেননি!
ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, কার্ড বদলানোর নামে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে কেনাকাটার সময়ে দেওয়া ‘ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড’ (ওটিপি) হাতিয়ে নিয়েছে জালিয়াতেরা। ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয়ে ফোন করেছিল তারাই। এ নিয়ে ব্যারাকপুর কমিশনারেটেও যোগাযোগ করেছেন ওই গ্রাহক। ব্যাঙ্ক তাঁর কার্ডটি ব্লক করেছে। তদন্তও শুরু হয়েছে।
ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, ওই টাকা তিন দফায় হাতানো হয়। ৩০০০ টাকা দিয়ে অনলাইনে রিচার্জ করা হয়েছে। বাকি ১৭ হাজার একটি অনলাইন বাজারে খরচ করা হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের মতে, অনলাইনে জিনিস কেনার পাশাপাশি টাকা সরানোও যায়। প্রযুক্তির ভাষায় সেটির নাম ‘ওয়ালেট ট্রান্সফার’। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়ে থাকতে পারে।
বস্তুত, ফোন করে কার্ডের তথ্য হাতানো এবং তা দিয়ে জালিয়াতি নতুন নয়। গত বছর ঝাড়খণ্ড থেকে এমনই একটি জালিয়াতির দলকে ধরে কলকাতা পুলিশের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা।
পুলিশের বক্তব্য, এমন ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই পুলিশ ও ব্যাঙ্কের তরফে এসএমএস পাঠিয়ে গ্রাহকদের বলা হচ্ছিল, ফোনে তাঁরা যেন ব্যক্তিগত ও গোপন তথ্য (কার্ড নম্বর, পিন, ওটিপি, সিভিভি নম্বর) না জানান। এ নিয়ে টিভিতে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। ‘‘তা সত্ত্বেও অনেকেই নিজেদের গোপন তথ্য দিচ্ছেন। তা থেকেই জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে।’’— মন্তব্য এক পুলিশকর্তার।
ব্যারাকপুরের ওই ব্যক্তি জানান, ফোনে তাঁকে কার্ডের নম্বর ও অন্য তথ্য জানানো হয়েছিল। তাতেই তাঁর বিশ্বাস জন্মায়। তাই এসএমএসে ওটিপি খেয়াল করেননি তিনি। ধাপে ধাপে তিন বার ওটিপি হাতিয়ে নেয় জালিয়াতেরা। পুলিশকর্তারা অবশ্য বলছেন, ব্যাঙ্কের পাঠানো যে কোনও এসএমএস-ই খুঁটিয়ে পড়া উচিত। টাকা লেনদেনের পরেও ওই ব্যক্তি এসএমএস পেয়েছিলেন, তা-ও দেখা উচিত ছিল। তা না করে তিনিই বিপদ ডেকে এনেছেন।
যদিও এই জালিয়াতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিযোগকারীও। তিনি বলছেন, অন্য ক্ষেত্রে জালিয়াতেরা কার্ডের তথ্য ও সিভিভি নম্বর চায়। কিন্তু তাঁর দাবি, এ ক্ষেত্রে তারা তা চায়নি। এই প্রসঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার কার্ডের তথ্য ব্যাঙ্ক থেকে জালিয়াতেরা পেল কী করে? কার্ড পাওয়ার পর থেকে আমি কোনও দিন তা ব্যবহারই করিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy