Advertisement
E-Paper

হামলা চালাবে দুষ্কৃতীরা, গুজবে ছড়াল আতঙ্ক

কোথায় ‘গব্বর’? কোথায় ‘রঘু ডাকাত’? জানে না কেউ। তবু হামলার আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে গোপালনগরের গ্রামের পর গ্রাম।

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৩০

কোথায় ‘গব্বর’? কোথায় ‘রঘু ডাকাত’? জানে না কেউ। তবু হামলার আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে গোপালনগরের গ্রামের পর গ্রাম।

কোথাও কানাকানি, ‘রাত নামলেই ওরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হানা দেবে।’ কোথাও ফিসফাস, ‘ওই তো খালের ধারে রাতের বেলা দেখা গিয়েছে কয়েকটা মুখোশ পরা লোককে।’ গলা নামিয়ে কাউকে বলতে শোনা গেল, ‘শুনেছি হামলা চালানোর পরে মহিলাদের সঙ্গে নাকি বিশ্রী ব্যবহার করছে ডাকাতেরা।’

মঙ্গলবার থেকে চলছে এই পরিস্থিতি। জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা পড়েছেন আতান্তরে। কারণ, তাঁরা তো জানেন, নেহাতই গুজব থেকেই পরিস্থিতি। কোনও বড় অপরাধ হয়নি। না তো কেউ হুমকি দিয়েছে, না কোনও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

বুধবার রাত থেকে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোটা থানা এলাকায় গাড়িতে মাইক বেঁধে চলছে। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, তাঁরা যেন কোনও গুজবে কান না দেন। গুজব না ছড়ান। কিছু দেখলেই যেন পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।’’ পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে বৃহস্পতিবার বনগাঁ বিডিও অফিসে স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা বৈঠক করেছেন।’’ বনগাঁর মহকুমা শাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের ফোন নম্বর মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ এসডিপিও অনিল রায় জানিয়েছেন, গুজব যারা ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।

মানুষের মনে ভরসা জোগাতে বুধবার রাতভর বনগাঁর এসডিপিও গাইঘাটার সিআই পার্থ সান্যাল, গোপালনগর থানার ওসি অয়ন চক্রবর্তী বাহিনী নিয়ে এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। রাত জেগেছেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তথা গোপালনগরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাসও। শীতের রাতে মোটরবাইকে করে বহু গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষকে বলেছেন, গুজবে কান দেবেন না। ভয় পাবেন না। কোথাও কোনও দুষ্কৃতীর দেখা মেলেনি।

কিন্তু বোঝালেই আর বুঝছে ক’জন। মঙ্গল ও বুধবার রাতে বহু ফোন পেয়েছে পুলিশ। কেউ আতঙ্কিত গলায় জানিয়েছেন, ‘‘স্যার, ডাকাতদের দেখা মিলেছে। একটু আসবেন এ দিকে?’’ কেউ বলেছেন, ‘‘পাশের গ্রামে ঘোরাঘুরি করছে ওরা। জলদি আসুন।’’ কিন্তু কোথায় কী! পুলিশ গিয়ে দেখেছে, সব ভোঁ ভাঁ।

এমনই ফোন পেয়ে পার্থবাবুর নেতৃত্বে পুলিশ বুধবার রাতে গিয়েছিল বেলতায়। গ্রামবাসীরা রাত জেগে লাঠিসোঁটা নিয়ে পাহারা দিচ্ছিলেন। পুলিশ জানতে চায়, দুষ্কৃতীরা কোথায়? মাঠের মধ্যে দিয়ে তারা চলে গিয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু তন্নতন্ন করে খুঁজেও সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েনি পুলিশের। ওসি অয়নবাবুর কাছে ফোনে খবর আসে, মানিককোল গ্রামের একটি বাড়িতে ডাকাতি হচ্ছে। পুলিশ গিয়ে জানতে পারে, কেউ নাকি দরজায় টোকা দিয়েছিল। বাড়ির লোকজন চেঁচিয়ে ওঠায় দুষ্কৃতীরা গাড়ি নিয়ে পালিয়েছে।

হরিশপুর, বেলতা, দিঘারি, মানিককোল, কানসোনা, বৈরামপুর, বেলেডাঙা, বাটকেমারি, ফলেয়া, শুভরত্নপুর, গঙ্গানন্দপুর গোপালনগর, পাল্লা, চৌবেড়িয়া, আকাইপুর, নচিডাঙা, খবরাপোরের মতো বহু গ্রামে এই পরিস্থিতি। অনেক এলাকায় গ্রামের মানুষ নিজেরাই রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। অচেনা মুখ দেখলেই নানা প্রশ্ন করা হচ্ছে। মদ্যপদের তো দেদার জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে।

Miscreants
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy