Advertisement
E-Paper

বিষ ছড়াচ্ছে গুজব, মার খেল পুলিশও

এত দিন ছিল স্রেফ গুজব। যা মাইকে প্রচার করেও সামলাতে নাজেহাল হচ্ছিল পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে ঠিক যে ভয়টা পাচ্ছিলেন পুলিশ কর্তারা, সেটাই ঘটে গেল মঙ্গলবার। কোথাও ছেলেধরা, কোথাও চোর সন্দেহে চলল গণপিটুনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে মার খেতে হল পুলিশকেও।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১৮
গাইঘাটায় ভাঙচুর পুলিশের গাড়ি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

গাইঘাটায় ভাঙচুর পুলিশের গাড়ি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

এত দিন ছিল স্রেফ গুজব। যা মাইকে প্রচার করেও সামলাতে নাজেহাল হচ্ছিল পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে ঠিক যে ভয়টা পাচ্ছিলেন পুলিশ কর্তারা, সেটাই ঘটে গেল মঙ্গলবার। কোথাও ছেলেধরা, কোথাও চোর সন্দেহে চলল গণপিটুনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে মার খেতে হল পুলিশকেও।

মঙ্গলবার গাইঘাটার শশাডাঙায় ছেলেধরা সন্দেহে এক প্রৌঢ়াকে মারধর করে জনতা। পুলিশ এলে দু’টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। ৪ পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন।

অন্য দিকে, এ দিনই বসিরহাটের বড়গোবরা গ্রামে শিশুপাচারকারী সন্দেহে এক তরুণীকে মারধর করার জন্য তেড়ে গিয়েছিল গ্রামবাসীরা। পুলিশ সময় মতো হাজির হয়ে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে তাঁকে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক শ্রেণির মানুষ গুজব ছড়ানো শুরু করেছে। এর ফলে উত্তেজনার ছড়াচ্ছে। গুজব এমন পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে যে, অভিভাবকেরা শিশুদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এমনকী, বাড়ির কাছেই মাঠে খেলতে যাচ্ছে না ছেলেমেয়েরা। সন্ধে নামলে রাস্তাঘাট সুনসান হয়ে যাচ্ছে গাইঘাটা, গোপালনগর, হাবরা, বসিরহাট-সহ উত্তর ২৪ পরগনা এবং লাগোয়া নদিয়া জেলার কিছু এলাকায়। অপরিচিত কাউকে দেখলেই শিশুপাচারকারী, চোর সন্দেহ করছে এলাকার মানুষ। যারা গুজব রটাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।

গাইঘাটার ঘটনাটি ঘটে সাড়ে ১০টা নাগাদ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে বারাসতের বাসিন্দা এক মহিলা শশাডাঙায় এসেছিলেন ভিক্ষে করতে। কিছু লোকের ধারণা হয়, প্রৌঢ়া ছেলেধরা। মুহূর্তে সে কথা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। মহিলাকে ধরে শুরু হয় মারধর।

শশাডাঙা জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক টুটুনকুমার দত্ত বলেন, ‘‘স্কুলে এসে দেখি, স্কুল চত্বরে এক মহিলাকে ঘিরে রেখেছে লোকজন। চারদিক থেকে রব উঠছে, ওকে মেরে ফেল, মেরে ফেল। আমি কোনওমতে মহিলাকে আমার ঘরে নিয়ে আসি।’’

ইতিমধ্যে, সুটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুব্রত নায়েকের নেতৃত্বে পুলিশ আসে। তাঁরা প্রধান শিক্ষকের ঘর থেকে ওই মহিলাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু হয়। পুলিশ কর্মীদের মারধর করা হয়। স্কুলের দরজা ভেঙে জনতা ওই প্রৌঢ়াকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ইটের ঘায়ে জখম হয়েছেন সুব্রতবাবু ছাড়া আরও ৩ পুলিশ কর্মী। পথিক মাল নামে এক কনস্টেবলের হাত ফেটে রক্ত বেরোয়। পরে গাইঘাটা থানা থেকে আর পুলিশ গিয়ে মহিলাকে উদ্ধার করে আনে। ফাঁড়িতে আসেন মহিলার ছেলে-মেয়ে। ছেলে বলেন, ‘‘মাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও ভিক্ষে করতে বেরোতেন। আমার মা ছেলেধরা নন।’’

মঙ্গলবার দুপুরে বাগদার বাণেশ্বরপুর বাজার এলাকায় তিন অচেনা যুবককে পোশাক পরিবর্তন করতে দেখে লোকজন ধরে নেয়, তারা জঙ্গি। শুরু হয় মারধর। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে আনে। প্রতিবাদে হেলেঞ্চা-দত্তফুলিয়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই তিন যুবকের মধ্যে একজন বাংলাদেশি। সে চোরাপথে এ দেশে ঢুকে গোপালনগরের মেহেরপুরে ছিল। এ দিন বাকি দুই দালালের সঙ্গে সে চোরাপথে দেশে ফিরবে বলে রনঘাট সীমান্তের দিকে যাচ্ছিল।

স্রেফ সন্দেহের বশেই সোমবার রাতে রানাঘাট শহরে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন তিন ব্যক্তি। দু’জন কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। অপরিচিত মুখ দেখে জেরা শুরু করে এলাকার বাসিন্দারা। তারপরেই শুরু হয় মারধর। তৃতীয় ব্যক্তি এলাকারই। রাতে খাওয়ার পরে পায়চারি করতে বেরিয়েছিলেন। এলাকার লোকজন তাকেও চোর সন্দেহে মারধর দেয়। তিনজনই হাসপাতালে ভর্তি।

Police Beaten
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy