E-Paper

এসআইআর-এর চাপে শিক্ষকহীন স্কুল, রাঁধুনি পড়াচ্ছেন ছোটদের

মৌসুনি দ্বীপের প্রত্যন্ত এই বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১৫ জন। কিন্তু এই ছোট্ট স্কুলই আশ্রয় গ্রামে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৩০
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ক্লাসরুমে শিশুরা বসে, সামনে দাঁড়িয়ে রাঁধুনি দিদি। দূরে, গ্রামের বাইরে মাঠে ঘুরে ঘুরে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করছেন তিন শিক্ষক!

এই পরিস্থিতি মৌসুনি দ্বীপে। স্কুল চলছে, কিন্তু পড়াশোনা নেই। শিক্ষকেরা আছেন, কিন্তু স্কুলে নেই। শিক্ষকের অভাবে মিড-ডে মিলে রান্না করা হাতেই তুলে নিতে হচ্ছে চক-ডাস্টার। পরীক্ষা দরজায়, অথচ কুসুমতলা পশ্চিম অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দিন কাটাচ্ছে শিক্ষক-বিহীন ক্লাসে।

মৌসুনি দ্বীপের প্রত্যন্ত এই বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ১৫ জন। কিন্তু এই ছোট্ট স্কুলই আশ্রয় গ্রামে। তিন জন শিক্ষক থাকলেও সকলেই এখন ব্যস্ত এসআইআর-এর কাজে। ক্লাসরুমে এসে বসে থাকছে পড়ুয়ারা। কয়েক দিন ধরে ঠিক মতো মিড-ডে মিলও দিতে পারেনি রাঁধুনি। সারা দিন বসে থাকা, দুষ্টুমি করা আর মাঝে মধ্যে কান্নাকাটি— এই দৃশ্যই এখন নিয়মিত হয়ে গিয়েছে ওই স্কুলে।

এ অবস্থায় শিশুদের দেখভালের ভার এসে পড়ে রাঁধুনি অনুমতি মণ্ডলের উপরে। রান্নার কাজ সামলে, কখনও চাল-ডাল ধুয়ে, কখনও আনাজ কেটে, আবার কখনও চক-ডাস্টার হাতে নিয়ে পড়ুয়াদের সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে তাঁকেই। অনুমতির কথায়, ‘‘শিক্ষক নেই, তাই বাচ্চাদের একা রাখা যায় না। তারা দুষ্টুমি করলে আঘাত পেতে পারে। আমি যা একটু জানি, মুখে মুখে পড়িয়ে দিই। কাজটা আমার নয়, কিন্তু শিশুদের ফেলে রাখা যায় না।’’

তাঁর এই দায়বদ্ধতা গ্রামবাসীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে জমছে ক্ষোভ। অভিভাবক প্রতিমা মণ্ডল, করুণা মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘রাঁধুনি দিদি চেষ্টা করছেন ঠিকই, কিন্তু বাচ্চাদের তো নিয়মিত পড়াশোনা দরকার। সামনে পরীক্ষা, কিন্তু ক্লাসই তো হচ্ছে না!’’ এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘দ্বীপ এলাকায় থাকি বলেই কি আমাদের সন্তানদের কম গুরুত্ব দেওয়া হবে? অবিলম্বে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ বা অন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা করা হোক।’’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ প্রামাণিক অবশ্য পরিস্থিতিকে সাময়িক বলে ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘আমরা এসআইআর-এর কাজের চাপের মধ্যেও স্কুলে ঢুকে হাজিরা দিচ্ছি। এসআইআর-এর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই নিয়মিত ক্লাসে ফিরতে পারব বলে আশা করছি।’’

নামখানার বিডিও সুব্রত মল্লিক বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। ওই সার্কলে স্কুলের যিনি এসআই আছেন, ওঁর সঙ্গে কথা বলে কিছু ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা আমরা দেখছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mousuni Island School Teachers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy