Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
শিক্ষা-চিন্তা/৩
South 24 Parganas

Education: বহু স্কুলে অনুমোদন মিললেও চালু করা যাচ্ছে না বিজ্ঞান বিভাগ

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চলা এই স্কুলে বহু বছর ধরে স্থায়ী ভাবে কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দিলীপ নস্কর
দক্ষিন ২৪ পরগনা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৪৫
Share: Save:

দীর্ঘদিন ধরেই স্কুলগুলিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে। অন্য দিকে, অবসর ও বদলির কারণে ক্রমেই কমছে শিক্ষকের সংখ্যা। মূলত, প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলি থেকেই বদলির প্রবণতা বেশি। আবার নিয়োগের সময়েও এই স্কুলগুলিতে আসতে চান না বেশিরভাগ শিক্ষক।

হাইস্কুলে পূর্ণ সময়ের শিক্ষক মাত্র ৩ জন। তাঁদের মধ্যে ২ জন বদলির আবেদন করেছেন। সেই পর্ব সমাধা হলে পড়ে থাকবেন মাত্র এক জন। আর আছেন ৬ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক। স্কুল খুললে ৪০০ ছাত্রছাত্রীকে কী ভাবে সামলানো যাবে, তা জানেন না সাগর ব্লকের ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের ঘোড়ামারা হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত চলা এই স্কুলে বহু বছর ধরে স্থায়ী ভাবে কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। ৬ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক দিয়ে পঠনপাঠন চলছে। তাঁদের সাম্মানিক ভাতা দিতে হচ্ছে অভিভাকদের চাঁদার টাকায়।

এমনিতেই গরিব মানুষের বসবাস এলাকায়। তাঁদের অনেকের চাঁদা দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি সুজিত কর বলেন, ‘‘এমনিতেই দীর্ঘদিন সে ভাবে নিয়োগ হয়নি। দ্বীপ এলাকার স্কুল বলে অনেকে আসতে চান না। অথচ এই দ্বীপে একটাই হাইস্কুল। শিক্ষক নিয়োগের জন্য বহুবার দফতরে আবেদন করেও সুরাহা হয়নি।’’

একই অবস্থা নামখানার মৌসুনি কোঅপারেটিভ হাইস্কুলের। স্থায়ী পদ রয়েছে ২৬টি। আছেন মাত্র ১২ জন। প্রায় ১৩০০ ছাত্রছাত্রী আছে স্কুলে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিনয় শী বলেন, ‘‘নদীঘেরা এই দ্বীপে আসতে চান না কেউ। পঠনপাঠন চালাতে সমস্যা হচ্ছে।’’

মন্দিরবাজারের কাদিপুকুর নস্কর হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রী সাড়ে ৪০০ জন। স্থায়ী শিক্ষক পদ ১৩ জনের। আছেন মাত্র ৭ জন। গণিত ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাত্র এক জন। তিনি আবার বদলির আবেদন করেছেন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপ্তিময় মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় আংশিক সময়ের শিক্ষক দিয়ে গণিত ও ভৌতবিজ্ঞান পড়ানোর ব্যবস্থা করব, সেই উপায়ও নেই। ১০ বছর ধরে এই বিভাগে শিক্ষক নেই। এলাকায় বিজ্ঞান বিভাগে পাশ করা শিক্ষকই পাওয়া যায় না। এই পরিস্থিতিতে স্কুল চালাতে সমস্যা হচ্ছে। জেলা স্কুল পরিদর্শককে সমস্যার কথা জানিয়েছি।’’

সাগরের খানসাহেব আবাদ হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৪৪১ জন। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চলা ওই স্কুলের স্থায়ী পদ রয়েছে ২৭ জনের। শিক্ষক আছেন ২২ জন। সর্বশিক্ষা মিশনের নিয়ম অনুযায়ী, ৪০ জন ছাত্রছাত্রী পিছু একজন করে শিক্ষক ধরলে প্রায় ৩৬ জন শিক্ষক দরকার। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব দাস বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগের জন্য বহুবার আবেদন করেছি। কিন্ত এখনও পর্যন্ত শিক্ষক না পাঠানোয় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’’

সাগরের ধবলাট লক্ষ্মণপরবেশ হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৪১৩ জন। স্থায়ী পদ রয়েছে ৩৯ জন। শিক্ষক রয়েছেন ২৮ জন। প্রধান শান্তনু গায়েন বলেন, ‘‘এমনিতেই দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। আবার গ্রামের স্কুল বলে অনেকেই বদলি হতে চান।’’

সাগরের হরিণবাড়ি যুধিষ্ঠির আদর্শ শিক্ষায়তনে ২০১০ সালে পদার্থ বিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন এবং রসায়ন বিভাগের অনুমতি পায়। রসায়ন বিভাগ কিছুদিন আংশিক সময়ের শিক্ষক দিয়ে চালানোর পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মথুরাপুর ২ ব্লকের পুরন্দরপুর এইচএইচডি হাইস্কুলে ২০১২ সালে বিজ্ঞান বিভাগ অনুমোদন পায়। কিন্ত শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় বিজ্ঞান বিভাগ চালুই করা যায়নি বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন দাস। স্কুলে বর্তমানে ৫৩০ জন ছাত্রছাত্রী। স্থায়ী শিক্ষক পদ ১৯ জনের। রয়েছেন মাত্র ১৩ জন। এর মধ্যে একজন বদলির আবেদন করেছেন।

পাথরপ্রতিমার কামদেবপুর স্নেহবালা মিলন বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রী ১,৭১৯ জন। স্থায়ী পদ রয়েছে ২৮ জনের। রয়েছেন ১৯ জন শিক্ষক। এদের মধ্যে ২ জন বদলির আবেদন করেছেন। বদলি হলেই ১৭ শিক্ষক নিয়ে চালাতে হবে স্কুল। পাথরপ্রতিমা জি প্লটের সীতারামপুর মিলন বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে প্রায় দেড় হাজার পড়ুয়া। স্থায়ী পদ ৩৯ জনের। শিক্ষক রয়েছেন ২৭ জন। এর মধ্যে ৩ জন বদলির আবেদন করেছেন।

শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে জানতে জেলা স্কুল পরিদর্শকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর মেলেনি মেসেজেরও। (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE