Advertisement
E-Paper

টুকরো ছবি জুড়েই মায়া-কোলাজ মেলার

বেলা একটু বাড়তে স্নানের ভিড়ও বাড়ে। সৈকতের এক প্রান্তে পরপর খুপরি ঘর, পোশাক পরিবর্তনের। কিন্তু অধিকাংশ পুণ্যার্থীই সে দিকে ঘেঁষছেন না বিশেষ। সৈকতের উপরেই সেরে ফেলছেন কাজ।

মকর সংক্রান্তির আগে সাগর পারে যজ্ঞ।

মকর সংক্রান্তির আগে সাগর পারে যজ্ঞ। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

সম্রাট মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:৩৩
Share
Save

“মরদ? ক্যায়া হোগা মরদসে? হাম চার সহেলি হি আয়ে হ্যায়। কাফি হ্যায়।”

আকাশ ফর্সা হচ্ছে সবে। দিগন্তরেখায় লেপ্টে আছে সেঁকা টোম্যাটো রঙা ভোরের সূর্য। সাগরতটে স্নানের তোড়জোড় পুণ্যলোভাতুর আট থেকে আশির। তবে, ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় চার দিকে আলসেমি ছড়িয়ে আছে ঝরা পাতার মতো। তারই মধ্যে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন রাজস্থানের বারমের সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দা বীণাদেবী চৌহান। এক দিকে হরিনাম, অন্য দিকে অনুপ জালোটার মীরার ভজন। মাঝের চিলতে পরিসরে বসে খঞ্জনি বাজাচ্ছেন হাড় জিরজিরে চেহারার এক প্রবীণ সাধু। তাঁরই সামনে বসে রাজস্থানের চার বান্ধবী। তাঁদের সঙ্গে পুরুষ সঙ্গী কেউ নেই শুনে আগন্তুক প্রশ্নকর্তার চোখে সামান্য বিস্ময় খেলে গিয়েছিল হয়তো। যা লক্ষ করেছিলেন তিনি। তাতেই ছিটকে এল কথাটা।

‘চাক দ্য পেট্রিয়ার্কি’র মতো স্লোগান লেখা কোনও পোস্টার হয়তো এ তল্লাটের হাওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে দোল খাবে না। তবু এ-ও কি কম পাওনা! বীণাদেবীর কথার খেই ধরেই পাশ থেকে বান্ধবী অহল্যা মিষ্টি করে হাসেন। সুপুরি জাতীয় কিছু একটা মুখে পুরে বলেন, “লুগাই (স্ত্রী) নহি, সির্ফ সহেলি।”

বেলা একটু বাড়তে স্নানের ভিড়ও বাড়ে। সৈকতের এক প্রান্তে পরপর খুপরি ঘর, পোশাক পরিবর্তনের। কিন্তু অধিকাংশ পুণ্যার্থীই সে দিকে ঘেঁষছেন না বিশেষ। সৈকতের উপরেই সেরে ফেলছেন কাজ। পুণ্যার্থীদের তাঁবুতে নাকি জায়গা থাকা সত্ত্বেও সেখানে তাঁদের ঢুকতে দিচ্ছিলেন না এক দল লোক। তাঁরা কারা, তা অবশ্য জানা গেল না। তবে, সে খবর মেলা কর্তৃপক্ষের কানে যেতেই ঘোষণা হল, এমন কিছু ঘটলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। যদিও শাহি স্নানের আগের দিনও ভিড়ের বহর অন্যান্য বারের তুলনায় বেশ কম।

ভেজা বালির উপর দিয়ে খুব ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিল প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি হাত-পেডালের একটি ট্রাইসাইকেল। তাতে আসীন প্রৌঢ় অরুণ দাস। পাকা দাড়ি আর গেরুয়া বসনে পাক্কা সন্ন্যাসীর মতোই চেহারা তাঁর। এক কালে নাকি বিরাট জটাও ছিল রানাঘাটের একটি মন্দিরের পূজারী, বছর পঞ্চান্নের অকৃতদার এই প্রৌঢ়ের। এখন কেটে ফেলেছেন।

মকর সংক্রান্তির আগে সাগর পারে যজ্ঞ।

মকর সংক্রান্তির আগে সাগর পারে যজ্ঞ। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

অসুবিধা হয় না?

মৃদু হেসে প্রৌঢ় বলেন, ‘‘না না, অসুবিধা তেমন হয় না। এ তো আমার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। এটা চালিয়েই তো রানাঘাট থেকে এখানে এলাম। চার দিন সময় লাগল। এতে চড়ে বহু জায়গায় গিয়েছি। এক বার তো ছ’দিন ধরে চালিয়ে কামাখ্যাতেওপৌঁছে গিয়েছিলাম।’’

এর পরে কুম্ভেও যাবেন নাকি?

একটু ভেবে নিয়ে অরুণ বলেন, ‘‘ইচ্ছে তো আছে খুবই। দেখি, কী হয়। এটা চালিয়েই চলে যাব ইলাহাবাদে (অধুনা প্রয়াগরাজ)। আসলে ওই সমস্ত হাইওয়েতে খুব জোরে গাড়ি চলে তো। তাই একটু বুঝেশুনে চালাতে হয়। সব সময়ে বেরিয়ে পড়া যায় না। ফাঁকা সময় দেখে চালাই। তাতে সময়ও লেগে যায় অনেকটা।’’ অরুণকে দেখে কি হঠাৎ ‘অভিযান’-এর সৌমিত্রের কথা মাথায় খেলে গেল? সেই আত্মবিশ্বাস। সেই বলিষ্ঠ চোয়াল। সেই দৃঢ় চিত্ত।

কথা শেষ হলে বিদায় নেওয়ার পরে পেশাদার খবর-করিয়ে পিছন ফিরে দেখতে পায়, অনন্ত জলরাশির দিকে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে আছেন প্রৌঢ়। চোখেমুখে ঘোর লাগা এক মৌনতা। সেই জলে তখন খেলে বেড়াচ্ছে শেষ পৌষের এক মায়া-সকাল। বেয়াড়া হাওয়ায় দোল খেতে খেতে টুংটাং শব্দ তুলতে থাকে ট্রাইসাইকেলের পিছনে বাঁধা গেরস্থালির নানা সরঞ্জাম। পেডালে হাত রাখেন প্রৌঢ়। চাকা গড়াতে থাকে আবার।

পশ্চিমে নয়, পুবের দিকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Gangasagar Mela 2025 gangasagar

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}