E-Paper

টাকা এলেও থমকে আছে বহু কাজ, ক্ষুব্ধ গ্রামের মানুষ 

পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কোটি কোটি টাকা এসে পড়ে আছে জেলায়। দ্রুত সে টাকা কী ভাবে খরচ হবে, তা ভেবে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রশাসনের কর্তাদের কপালে। খরচ করার জন্য নতুন নতুন প্রকল্পের সন্ধান চলছে। অথচ, গ্রামের মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে, অজস্র কাজ বাকি পড়ে আছে চতুর্দিকে। পরিস্থিতির খোঁজ নিলেন আমাদের প্রতিবেদকেরা।  

নবেন্দু ঘোষ 

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:০১
An image of village

—প্রতীকী চিত্র।

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত গ্রামের যে সমস্ত সরকারি পরিকাঠামো গ্রামীণ এলাকার মানুষের প্রয়োজনে আসে, তার বহু ক্ষেত্রে নড়বড়ে অবস্থা বলে জানাচ্ছেন অনেকে। অথচ, রাজ্য সরকারের কাছে টাকা থাকলেও কাজ তেমন চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ।

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দুলদুলি, গোবিন্দকাটি, যোগেশগঞ্জ,কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকায় শ্মশানঘাটের সমস্যা বহু বছর ধরে। এলাকায় কোথাও কোনও পরিকল্পিত শ্মশানঘাট নেই। বহু মানুষ নদীর পাড়ে অথবা নিজের বাড়ির কোনও প্রান্তেও দাহকাজ সারেন। কোথাও কোথাও শ্মশানঘাট থাকলেও দাহ করার জায়গায় ছাউনি নেই। বৃষ্টি হলে সৎকারে বেগ পেতে হয়।

বহু রাস্তায় আলোয নেই। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি রাস্তা হল হাসনাবাদ-নেবুখালি রোড, হাসনাবাদ থেকে নিতাই মোড়, দুলদুলি-সামসেরনগর রোড। ব্লকের প্রধান এই তিনটি রাস্তার বড় অংশ জুড়ে আলোর ব্যবস্থা নেই। বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’একটি জায়গায় শুধু চোখে পড়ে। হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি ১, সন্দেশখালি ২ ব্লক, মিনাখাঁ, হাসনাবাদ ব্লকের প্রায় সব পঞ্চায়েত এলাকার বেশিরভাগ রাস্তা আলোহীন। আবার আলো লাগালেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দ্রুত তা খারাপ হয়ে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।

সন্দেশখালি ১, সন্দেশখালি ২, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ ব্লকের প্রায় সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকার অলিগলি থেকে শুরু করে বড় রাস্তা বেহাল। সন্দেশখালি ২ ব্লকের কোরাকাটি পঞ্চায়েতের ধুচনিখালি ৫ নম্বর পাড়া থেকে উত্তর কোরাকাটি হাইস্কুল পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার ইটের রাস্তা যাতায়াতের অযোগ্য। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ধুচনিখালি বাজার থেকে ধুচনিখালি ৩ নম্বর চক পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ঢালাই রাস্তা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। একই অবস্থা এই পঞ্চায়েতের একাধিক রাস্তার।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রের অবস্থাও তথৈবচ। সন্দেশখালি ২ ব্লক জুড়ে অন্তত ৩৪টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রেরও ভগ্নদশা দীর্ঘ সময় ধরে। কোরাকাটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সহ কয়েকটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো দুর্বল।

শিক্ষাক্ষেত্রেও পরিকাঠামো জরাজীর্ণ। কোরাকাটি পঞ্চায়েতের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিড ডে মিলের খাওয়ার ঘরের ছাউনি ইয়াসের পর থেকে বেহাল। সংস্কারও হয়নি। তুষখালি বাসন্তী প্রভা এসএসকে, তুষখালি রামকৃষ্ণ এসএসকে, পূর্ব তুষখালি কাছারিপাড়া আদিবাসী এফপি স্কুল-সহ একাধিক স্কুলের মিড ডে মিলের খাওয়ার ঘরের ছাউনি নেই।

সন্দেশখালি ১, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ সহ বিভিন্ন ব্লকের অনেক মানুষ আজও বাড়িতে পাকা শৌচাগার পাননি। তাই কেউ কেউ খালে-বিলে যান। শৌচকর্মে বিড়ম্বনার শেষ নেই বাড়ির মহিলাদের। গোটা সন্দেশখালি ১ ব্লকে অন্তত ৩০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ভগ্নদশা। খোলা আকাশের নীচে পড়াশোনা, রান্নাবান্না চলে। দীর্ঘ দিন ধরে কেন্দ্রগুলি সংস্কার হচ্ছে না।

হিঙ্গলগঞ্জ-সহ হাসনাবাদ সন্দেশখালি ১, সন্দেশখালি ২ ব্লকের বহু গ্রামে পানীয় জলের কষ্ট রয়েছে। জল কিনে খান অনেকে। একটিমাত্র কলের উপরে নির্ভরশীল গ্রামের বহু মানুষ। সেই সঙ্গে রয়েছে নদীবাঁধ ভাঙার সমস্যা।

প্রশাসন সূত্রের খবর, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা দু’ভাবে পাওয়া যায়। একটি টায়েড বা শর্তযুক্ত টাকা। অন্যটি আনটায়েড বা শর্তবিহীন টাকা। টায়েড ফান্ডের টাকা নিকাশি ও পানীয় জলের জন্য ব্যয় করতে হয়। আনটায়েড ফান্ডের টাকায় বাকি উন্নয়নের কাজ করা যায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি বছরে অর্থ কমিশনের মোট বরাদ্দের ৭০ শতাংশ পায় পঞ্চায়েত। ১৫ শতাংশ করে পায় পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ। মোট টাকার ৬০ শতাংশ পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা, শৌচালয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো নির্ধারিত কিছু খাতে খরচ হয় (টায়েড ফান্ড)। বাকি ৪০ শতাংশ খরচ হয় রাস্তাঘাট, কালভার্ট, ছোট সেতু তৈরি বা মেরামত করতে, আলো লাগানোর মতো বিভিন্ন খাতে (আনটায়েড ফান্ড)।

এ ছাড়া, নিয়ম অনুযায়ী এক বছর আগে বার্ষিক কাজের পরিকল্পনা করে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদের তরফে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। সেই সঙ্গে অনুমোদনের জন্য জেলায় পাঠানো হয়। এরপরে কেন্দ্র থেকে টাকা আসে ধাপে ধাপে। সম্প্রতি নতুন পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন হয়েছে। গত বোর্ডের নির্ধারিত প্রকল্পের ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গেলেও বর্তমান পঞ্চায়েত বোর্ডের পদাধিকারীরা অনেক জায়গায় সে সব কাজে বাধা দিচ্ছেন বলে প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর। ফলে অনেক কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ। ওই সব খাতে টাকাও খরচ করা যাচ্ছে না।

বিজেপি নেতা তুলসী দাস বলেন, "কেন্দ্র টাকা পাঠাচ্ছে, আর রাজ্যের পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির দখল করে থাকা তৃণমূলের নেতারা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা তৈরি করছেন। মানুষের জন্য কাজ হতে দিচ্ছেন না। তাই টাকা কেন্দ্র পাঠালেও রাজ্য কাজ করতে পারছে না।"

হিঙ্গলগঞ্জের তৃণমূলের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল অবশ্য বলেন, "কোনও পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির অদক্ষতা, পরিকল্পনার অভাব থাকতে পারে। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন।" বিধায়কের কথায়, ‘‘গ্রামে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। আধিকারিকদেরও সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে।’’

বসিরহাটের মহকুমাশাসক আশিস কুমারকে বার বার ফোনে করা হলেও উত্তর মেলেনি। মেসেজরও জবাব দেননি তিনি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rural Bengal West Bengal government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy