Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বিপদ ঘটলে কতটা সক্রিয় দুই ২৪ পরগনার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর

ডুবুরি নয়, ভরসা জেলে

পুরো দস্তুর বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর আছে এ রাজ্যে। আছেন এক মন্ত্রী। জেলায় জেলায় শাখা-প্রশাখা ছড়ানো দফতরের। কিন্তু দরকারের সময়ে তারা কতটা সক্রিয়, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। মুর্শিদাবাদের ঘটনার পরে সেই দফতরের হাল হকিকত খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার।উত্তর ২৪ পরগনার প্রতিটি ব্লকে খাতায় কলমে রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ। কিন্তু সেগুলির বাস্তব চিত্রটা এমনই। নেই কোনও আধুনিক সরঞ্জাম, পেশাদার ডুবুরি অমিল।

উদ্ধার: মুর্শিদাবাদে বাস দুর্ঘটনার পরে দীর্ঘক্ষণ দেখা মেলেনি বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের। প্রাথমিক ভাবে ভরসা ছিলেন সাধারণ মানুষই। সোমবার দুর্ঘটনার পরে ছবিটি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক।

উদ্ধার: মুর্শিদাবাদে বাস দুর্ঘটনার পরে দীর্ঘক্ষণ দেখা মেলেনি বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের। প্রাথমিক ভাবে ভরসা ছিলেন সাধারণ মানুষই। সোমবার দুর্ঘটনার পরে ছবিটি তুলেছেন গৌতম প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র
হাবরা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:১৮
Share: Save:

গত বছরের কথা। অশোকনগরে ঝিলে ডুবে গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। তাঁর খোঁজে বিডিও অফিসে ডুবুরির আবেদন করেছিল পুলিশ। ডুবুরি ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল। কিন্তু পর দিন! সেই ডুবুরি দিয়েও কাজ হয়নি। শেষে স্থানীয় মানুষজনই উদ্ধার করেছিলেন তলিয়ে যাওয়া দেহ।

উত্তর ২৪ পরগনার প্রতিটি ব্লকে খাতায় কলমে রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ। কিন্তু সেগুলির বাস্তব চিত্রটা এমনই। নেই কোনও আধুনিক সরঞ্জাম, পেশাদার ডুবুরি অমিল। অন্যান্য পরিকাঠামোর অবস্থাও তথৈবচ। মুর্শিদাবাদে বাস দুর্ঘটনার পরে উত্তর ২৪ পরগনায় বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে উঠে এসেছে এই ছবি।

প্রয়োজনে পুলিশ বা সাধারণ মানুষ, কেউই বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে দ্রুত সাহায্য পান না বলে অভিযোগ। কোনও নদী বা পুকুরে কেউ ডুবে গেলে বিপর্যয় মোকাবিলা দলের বদলে পুলিশ স্থানীয় জেলেদের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়। ফেলা হয় মাছ ধরার জাল। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ডুবুরি কখন আসবেন, কোথায় তাঁদের পাওয়া যাবে, বা এলেও তাঁরা দেহ খুঁজে পাবেন কিনা, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের সন্দেহ আছে। পুলিশও ততটা ভরসা করে বলে মনে হয় না।

জেলার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের থেকে যাঁদের পাঠানো হয়, তাঁদের কাছে আধুনিক সরঞ্জাম থাকে না। ডুব সাঁতার ছাড়া তাঁরা বিশেষ কিছু জানেনও না। ওঁদের থেকে গ্রামের জেলেরা অনেক ভাল ভূমিকা পালন করেন।’’ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিডিও বিষয়টি স্বাকীর করে বলেন, ‘‘এটা বাস্তব যে, ব্লকে কোনও ডুবুরি থাকে না। কোনও ঘটনা ঘটলে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করতে হয়। ডুবুরি আসতে দেরিও হয়ে যায়।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, কিছু সিভিক ভলান্টিয়ারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা থানায় না থাকলে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে দেরি হয়।

অশোকনগরের মতো আড়াই বছর আগে হাবরায় আরও একটি ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। কালী প্রতিমা বিসর্জনে গিয়ে ডুবে যান এক যুবক। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে দীর্ঘ সময় পরেও কোনও ডুবরি ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। শেষে পুলিশ স্থানীয় মানুষ এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের জলে নামিয়ে ছিল। পরে গভীর রাতে বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে বিপর্যয় মোকাবিলার প্রশিক্ষণ নেওয়া চার যুবককে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল।

এই ধরনের ঘটনা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসনের দাবি, বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। যে কোনও বিপর্যয় মোকাবিলা করতে তাঁরা পুরো প্রস্তুত। জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘গত বছর ৭৮ জনকে ডুবুরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতি দু’মাস অন্তর পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা হয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একটি কর্মশালারও আয়োজন হচ্ছে।’’ ডুবরিদের জন্য আধুনিক সরঞ্জামও কেনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রশিক্ষিত ডুবুরিদের যোগাযোগ নম্বর, নাম-ঠিকানা থানা এবং ব্লক প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে।’’

জেলাশাসক অবশ্য যে তথ্যই দিক না কেন, বিপদে জেলেরাই সাধারণ মানুষের ভরসা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Diver Fishermen Disaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE