Advertisement
০৭ মে ২০২৪

হাসপাতালের রাস্তায় শুয়ে অসুস্থ

বাড়ি-জমি বিক্রি করে সব টাকা তুলে দিয়েছিলেন বড় ছেলের হাতে। অভিযোগ, টাকা হাতে পেয়ে সত্তরোর্ধ্ব বাবাকে একা ফেলে পালিয়েছে সেই ছেলে। ছেলের হাতে ‘প্রতারিত’ অভিমন্যু কুণ্ডু নামে ওই বৃদ্ধ গত তিন দিন ধরে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ঢোকার মুখের রাস্তায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন।

তখনও পড়ে রয়েছেন বৃদ্ধ। —নিজস্ব চিত্র।

তখনও পড়ে রয়েছেন বৃদ্ধ। —নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪০
Share: Save:

বাড়ি-জমি বিক্রি করে সব টাকা তুলে দিয়েছিলেন বড় ছেলের হাতে। অভিযোগ, টাকা হাতে পেয়ে সত্তরোর্ধ্ব বাবাকে একা ফেলে পালিয়েছে সেই ছেলে।

ছেলের হাতে ‘প্রতারিত’ অভিমন্যু কুণ্ডু নামে ওই বৃদ্ধ গত তিন দিন ধরে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ঢোকার মুখের রাস্তায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। দৃষ্টিতে অসহায়তা। যাঁরা পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছেন তাঁদের অনেকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না। কেউ কেউ দুঃখ প্রকাশ করছেন। কিন্তু বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য কেউ এগিয়ে আসছেন না। এই ঘটনারই সাক্ষী রইল বসিরহাট জেলা হাসপাতাল। আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে ফোন করা হলে ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস। পুলিশের মধ্যস্থতায় হাসপাতালে ভর্তি হন অভিমন্যুবাবু।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধের নাম অভিমন্যু কুণ্ডু। বাদুড়িয়া পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের পুঁড়োর তিন নম্বর কলোনিতে থাকতেন তিনি। সেখানেই একটি চায়ের দোকান চালাতেন। দিন তিনেক আগে বসিরহাট জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে এসে বসে পড়েন। সঙ্গে কেউ ছিল না। তার পর থেকে ওখানেই পড়ে ছিলেন। কেউ তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।

কী ভাবে এই অবস্থা হল অভিমন্যুবাবুর? পুলিশ জানায়, মাস আটেক আগে বড় ছেলে অচিন্ত্য কুণ্ডুর পরামর্শে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিজেদের বসতবাড়ি এবং জমি বিক্রি করে দেন অভিমন্যুবাবু। বড় ছেলের প্রস্তাবে সায় ছিল না তাঁর স্ত্রী চায়নাদেবীর এবং ছোট ছেলে সুকান্ত কুণ্ডুর। স্বামীর উপরে রাগ করে ছোট ছেলেকে নিয়ে বসিরহাটের ভ্যাবলা স্টেশন এলাকায় ঘর ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন চায়নাদেবী। বাবাকে নিয়ে বনগাঁয় থাকতে শুরু করে বড় ছেলে অচিন্ত্য। সেখান থেকে তাঁরা কলকাতার ইস্টার্ন বাইপাসের ধারে বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু সেখানে দিন কয়েক থাকার পরে বাবাকে সেখানে একা রেখে উধাও হয়ে যায় বড় ছেলে। ছেলে ফিরে না আসায় অভিমন্যুবাবু গ্রামে ফিরে আসেন। কিন্তু গ্রামে থাকার জায়গা কোথায়? মাথা গোজার ঠাঁইটুকু তো আগেই বিক্রি করে টাকা দুই ছেলেকে দিয়ে দিয়েছেন। সঙ্গী হিসেবেও কেউ নেই। তত দিনে শারীরিক এবং মানসিক দু’দিক থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। কেউ খেতে দিলে খান, না হলে উপোস করে কাটান। এই ভাবেই চলছিল।

বাদুড়িয়া পুরসভার উপ পুরপ্রধান তথা ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মানুষটিকে চিনি। এলাকায় ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু নিজের বড় ছেলে তাঁকে ঠকিয়েছে। গ্রামবাসীরা তাঁর বড় ছেলের নামে থানায় অভিযোগও করেছিলেন। কিন্তু সে এখনও ধরা পড়েনি। আমরা অভিমন্যুবাবুকে কয়েক বার কম্বল, খাবার দিয়ে সাহায্য করেছি।’’

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় একজন বৃদ্ধ হাসপাতাল চত্বরে পড়ে থাকলেও কেন ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সঙ্গে কেউ না থাকলে কাউকে ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এই নিয়ম কতখানি যুক্তিসঙ্গত? এই কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দীপেন্দুবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনাটি মর্মান্তিক। আমি বাইরে থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেছি বৃদ্ধের চিকিৎসায় যেন কোনও অসুবিধা না হয়। পুলিশকে বলা হয়েছে বৃদ্ধের সন্তান এবং স্ত্রীর খোঁজ করতে।’’

বসিরহাট থানার এক কর্তা জানান, বৃদ্ধের ছেলে এবং স্ত্রীর খোঁজ চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sick elderly Hospital MLA Rescued
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE