Advertisement
E-Paper

ফণা তুলবে কে কখন?

কেউ কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে। কেউ ঘুরছে ঘরময়। কেউ পায়ের উপর দিয়ে হঠাৎ সুর সুর করে চলে যাচ্ছে। কখনও তাড়া করছে, কখনও স্রেফ ভয় দেখাতে চেয়ারের তলায় বসে ফণা তুলছে— গোসাবা বিডিও অফিস, সরকারি কোয়ার্টার, থানা— সব জায়গাতেই দিনে দুপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাপের দল। সন্ধে ঘনালে যাদের আবার ভয়ে-শ্রদ্ধায় ‘লতা’ নামেই ডাকেন মানুষজন

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৬ ০৬:৩৪
অঙ্কন: নির্মাল্য প্রামাণিক।

অঙ্কন: নির্মাল্য প্রামাণিক।

কেউ কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে। কেউ ঘুরছে ঘরময়। কেউ পায়ের উপর দিয়ে হঠাৎ সুর সুর করে চলে যাচ্ছে। কখনও তাড়া করছে, কখনও স্রেফ ভয় দেখাতে চেয়ারের তলায় বসে ফণা তুলছে— গোসাবা বিডিও অফিস, সরকারি কোয়ার্টার, থানা— সব জায়গাতেই দিনে দুপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাপের দল। সন্ধে ঘনালে যাদের আবার ভয়ে-শ্রদ্ধায় ‘লতা’ নামেই ডাকেন মানুষজন।

দিন কয়েক আগে এক সন্ধ্যার কথা। বিডিও অফিসের কোয়ার্টারে ফিরে বাথরুমে স্নান করতে গিয়েছিলেন এক কর্তা। প্রবল গরম। গুন গুন করে গান ধরে কর্তাটি গায়ে জল ঢালতে যাবেন, অমনি চোখ পড়ল বালতির হাতলে পেঁচিয়ে আছে একটি কেউটে সাপ। আর্তচিৎকার করে কলঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসেন তিনি। তাঁর চিৎকারে কোয়ার্টারের অন্য আবাসিকেরা ছুটে আসেন। অনেক চেষ্টা করে সাপটিকে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে ঘরছাড়া করা হয়।

দিন কয়েক আগে গোসাবা থানার এক অফিসার ডিউটি শেষে থানায় বসেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ঘুম জড়ানো চোখে হঠাৎ খেয়াল করেন, পায়ের সামনে ফণা তুলে একটি সাপ! তার মেজাজ বোঝা দায়। ‘উরে বাপ‌্স’ বলে চেয়ারের উপরে পা তুলে বসেন অফিসার। ভুঁড়ির জন্য দেদার হাঁসফাঁস করছিলেন ওই অবস্থায়। কিন্তু পা নামারো জো নেই। অন্য পুলিশকর্মীদের ডাকাডাকি করেন তিনি। শেষে লাঠি দিয়ে বের করা হয় সাপটিকে। একের পর এক এ ধরনের ঘটনায় ব্লক অফিস এবং থানার কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেকেই স্টাফ কোয়ার্টার ছাড়তে চাইছেন।

এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, গোরু-সাপ-বাঘের নামের প্রথম অক্ষর জুড়েই ‘গোসাবা’ নামকরণ হয়েছিল। এই জনপদে গোরু তো যত্রতত্র দেখা যায়ই। বাঘও মাঝে মধ্যে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। তবে সব থেকে বেশি হল সাপের উপদ্রব। অতীতে এখানে সর্পদষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গোসাবা থানার এক অফিসার রসিকতা করে বললেন, ‘‘পুলিশের ভয়ে চোর-ডাকাত পালায়। কিন্তু পুলিশকে এখন সাপের ভয়ে পালাতে হচ্ছে! কখন নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে পড়ছে, টেরও পাচ্ছি না।’’ গোসাবা বিডিও অফিসের এক কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘দূরত্বের কারণে বাড়ি থেকে রোজ অফিসে আসা সম্ভব নয়। বৌ-বাচ্চাকে নিয়ে অফিস কোয়ার্টারেই থাকি। কিন্তু বর্যা পড়তে না পড়তেই যে ভাবে সাপের আনাগোনা বেড়েছে, তাতে মনে হচ্ছে বদলির আবেদন করতে হবে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোসাবা ব্লকের আশপাশে আরামপুর, মালোপাড়া-সহ কয়েকটি গ্রামে বহু বছর ধরে পুকুর, মাঠ, জঙ্গলের মধ্যে কেউটে, চন্দ্রবোড়া-সহ অনেক বিষধর সাপের বাস। ওই সব এলাকায় জনবসতি বেড়েছে। তাই সামান্য বৃষ্টি হলেই সাপ বেরিয়ে মাটির বাড়ির খড়ের চাল থেকে শুরু করে বাথরুমের বালতিতে আশ্রয় নিচ্ছে। সন্ধে নামলে এই এলাকায় কেউ টর্চের আলো ছাড়া বাইরে বেরোতে সাহস পান না। আপাতত কোনও এক বাবুরাম সাপুড়ের জন্য অপেক্ষায় গোসাবাবাসী।

বিডিও তাপসকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘যে ভাবে সাপের উপদ্রব বাড়ছে, তাতে কর্মীরা সত্যিই আতঙ্কিত। কখনও বেসিনে, কখনও বাথরুমে সাপের দেখা মিলছে।’’ তিনি জানান, সাপ নিয়ে কাজ করে, ক্যানিঙের এমন একটি সংগঠনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অফিস চত্বরে ছড়ানো হচ্ছে কার্বলিক অ্যাসিড, ফিনাইল। চলছে আবর্জন সাফাই।

ক্যানিঙের একটি যুক্তিবাদী সংগঠনের সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্য জানান, বর্ষার সময়ে গোসাবায় সাপের উপদ্রব বরাবরই বেশি। কারণ, বৃষ্টির সময়ে বাতাসে জলীয় বাষ্প বাড়লে সাপেদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। তারা তখন বাইরে বেরিয়ে আসে। তবে বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সাপের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, কেউ যেন সাপ দেখলে তাকে না মারেন।

মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক ইন্দ্রনীল সরকার বলেন, ‘‘মহকুমার প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে গ়ড়ে ৫ থেকে ৬ জন সর্পদ্রষ্ট রোগী আসেন।’’ তবে সাপের উপদ্রবের মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টি ভেনাম মজুত আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। যুক্তিবাদী সমিতি এবং হাসপাতালে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাপের কামড় খেলেও কেউ যেন ভুলেও ওঝা-গুণিনের দোরে না ছোটেন। রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে আনাই এ ক্ষেত্রে একমাত্র কর্তব্য।

Gosaba snake
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy