Advertisement
E-Paper

মাকে পুঁতবে বলে গর্ত খোঁড়ে ছেলে

মাকে খুন করে দেহ বস্তায় পুরে ফেলেছিল ছেলে আর তার বন্ধু। দেহ লোপাটের জন্য আগে থেকে বাড়ির পাশে গর্তও খুঁড়ে রেখেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে লোকজন বুঝে ফেলায় বস্তা-বন্দি দেহ ফেলে পালায় দুই কিশোর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০২:১৩
ভিড়: সোমাদেবীর বাড়ির সামনে ভিড়। ছবি: দিলীপ নস্কর

ভিড়: সোমাদেবীর বাড়ির সামনে ভিড়। ছবি: দিলীপ নস্কর

মাকে খুন করে দেহ বস্তায় পুরে ফেলেছিল ছেলে আর তার বন্ধু। দেহ লোপাটের জন্য আগে থেকে বাড়ির পাশে গর্তও খুঁড়ে রেখেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে লোকজন বুঝে ফেলায় বস্তা-বন্দি দেহ ফেলে পালায় দুই কিশোর। তবে ধরা পড়েছে। পুলিশের অনুমান, মায়ের কাছে নেশার টাকা চেয়ে পেত না একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ছেলে। সেই রাগেই খুন করেছে মাকে।

বৃহস্পতিবার রাতে খুনের ঘটনাটি ঘটে ডায়মন্ড হারবারের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ধনবেড়িয়া গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম সোমা হালদার (৩৩)। শুক্রবার ধৃতদের ডায়মন্ড হারবার আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের হোমে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ডায়মন্ড হারবারের এই ঘটনায় বিস্মিত পুলিশ কর্তারা। কারণ, মাকে খুনের অভিযোগে যে বছর সতেরোর ছেলেটিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, সে পড়ে ডায়মন্ড হারবারের একটি স্কুলে। পড়াশোনাতেও খারাপ নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। মাধ্যমিকে ভাল ফল করে কমার্স নিয়ে পড়ছিল। ছেলেটির যে বন্ধু খুনের অভিযোগে ধরা পড়েছে, সেই ছেলেটিও ডায়মন্ড হারবারের অন্য একটি স্কুলে কলা বিভাগে পড়াশোনা করে। রায়দিঘিতে বাড়ি হলেও সে থাকে ধনবেড়িয়ায় মামা বাড়িতে।

সোমা হালদার (৩৩)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমাদেবীর স্বামী গৌতম কলকাতায় একটি কারখানার শ্রমিকের কাজ করেন। সকালে বেরিয়ে যান, ফেরেন রাতে। একটি মাত্র সন্তান। পাড়ায় বিশেষ মেলামেশা ছিল না ছেলেটির। কখনও কোনও ঝামেলায় জড়াতে দেখেনি তাকে কেউ। তবে স্কুলের কিছু বন্ধুকে নিয়ে বাড়িতে আসত। কিছু বন্ধুর পাল্লায় পড়ে বছর খানেক ধরে মদ-গাঁজার নেশায় জড়িয়ে পড়েছিল ছেলেটি।

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, ছেলের নেশার কথা অজানা ছিল না বাবা-মায়ের। প্রায়ই মায়ের কাছে টাকা চাইত ছেলেটি। তা নিয়ে অশান্তি, চিৎকার-চেঁচামেচি হতো। পুলিশ জানতে পেরেছে, নেশার টাকা জোগাড় করতে সম্প্রতি মায়ের গয়না, সাইকেল বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল ছেলেটি। তা নিয়ে অশান্তি চরমে ওঠে।

আরও পড়ুন: ঝাউবনে গামছাধারী হানাদার

পুলিশের অনুমান, বৃহস্পতিবার দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পরে সোমাদেবীকে ঘুমের ওষুধ বা কোনও রাসায়নিক জলে মিশিয়ে খাইয়ে বেঁহুশ করে ফেলে ছেলে। পুলিশের দাবি, বিকেলের দিকে নাইলনের দড়ি গলায় পেঁচিয়ে সোমাদেবীকে খুন করা হয়। সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ বন্ধুকে ডেকে নেয় ছেলেটি। মায়ের দেহ বস্তার ঢুকিয়ে সেলোটেপ দিয়ে বাঁধে। বাড়ির কাছেই ঝোপের আড়ালে গর্ত খুঁড়ে রেখেছিল আগেই। সেখানেই বস্তা-বন্দি দেহ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দুই কিশোর। পথচলতি এক সাইকেল আরোহীর সেই দৃশ্য নজরে পড়ে যায়। তিনি গোটা ব্যাপারটা না বুঝতে পারলেও ঘাড়ে করে দু’টি ছেলেকে বস্তা নিয়ে যেতে দেখে ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার শুরু করেন।

বিপদ বুঝে বস্তা ফেলে চম্পট দেয় দু’জন। পরে অবশ্য ওই এলাকা থেকেই তাদের ধরে ফেলে পুলিশ। গোটা ঘটনায় ছেলেটির বন্ধু কেন জড়াল, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। আর কেউ জড়িত থাকতে পারে বলেও তদন্তকারীদের অনুমান। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে তারা।

এ দিন দুপুরে সোমাদেবীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিবেশীদের ভিড়। বাড়ির অদূরে ঝোপের আড়ালে গর্ত খোঁড়া। প্রায় সাড়ে ৩ ফুট লম্বা। পাশে পড়ে কোদাল। রাতের দিকে গ্রামে ফিরে গৌতমবাবু শুনতে পান, এলাকায় কেউ খুন হয়েছে। তখনও জানেন না, তাঁর বাড়িতেই ঘটে গিয়েছে এমন বিপর্যয়। সব শুনে তিনি কার্যত বাকরুদ্ধ। কোনও মতে বললেন, ‘‘একাদশ শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই নেশাভাঙ শুরু করেছিল ছেলে। আমি বকাবকি করলে তর্ক জুড়ত। তবে মাকে ভয় পেত। চড়-থাপ্পরও খেত ওর কাছে। কিন্তু তা বলে এ ভাবে খুন করবে, ভাবতে পারছি না।’’

Son Mother Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy