Advertisement
E-Paper

‘শিশু চুরির কোনও ঘটনাই ঘটেনি, সবটাই অপপ্রচার’, জানাল বারাসত পুলিশ, গুজবে কান দিতে নিষেধ

বারাসতের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। সেখানে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে, যাতে তাঁরা গুজবে কান না দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ১৯:৩৬
বারাসতে গুজবের জেরে গণপিটুনির ঘটনা (বাঁ দিকে), বারাসতের পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া (ডান দিকে)।

বারাসতে গুজবের জেরে গণপিটুনির ঘটনা (বাঁ দিকে), বারাসতের পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।

বারাসত পুলিশ জেলায় শিশু চুরির কোনও ঘটনাই ঘটেনি। পুরোটাই গুজব। সাংবাদিক বৈঠক করে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া। পাশাপাশি, পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে যে, কাজি পাড়ায় যা ঘটেছিল তা ছিল একটি খুনের ঘটনা। এর সঙ্গে ছেলেধরার গুজবেরও সম্পর্ক নেই। সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশের আবেদন, অপপ্রচারে কান না দেওয়ার।

সম্প্রতি বারাসতের কাজিপাড়ায় এক বালকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ছেলেধরার খপ্পরে পড়ে গিয়েছিল ওই বালক। সেই ছেলেধরাই বালককে খুন করে চোখ উপড়ে, কিডনি বার করে তার পর ঝুলিয়ে দিয়েছে। যদিও পুলিশ সুপার সেই অভিযোগ পুরোপুরি খারিজ করে দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ময়না তদন্তে সে রকম কিছুই পাওয়া যায়নি। তবুও থামেনি গুজব। উল্টে, ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে ছেলেধরার অপপ্রচার। সমাজমাধ্যমে ঘুরতে থাকে বিভিন্ন মনগড়া তথ্য। বারাসতের ঘটনা বলে দাবি করে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে অন্য জায়গার বিভিন্ন ভিডিয়ো। কোনও ভিডিয়োরই সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকে উত্তর ২৪ পরগনার এই অংশে। গোলমাল মাত্রা ছাড়ায় বুধবার। সে দিন বারাসতের দুই প্রান্তে দু’টি ঘটনা ঘটে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বুধবার বারাসতের মোল্লা পাড়ায় গুজবের জেরে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেয় জনতা। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে বারাসতের হাসপাতালে ভর্তি করায়। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে বারাসতেরই মডার্ন স্কুলের কাছে। সেখানে অটোতে উঠতে যাচ্ছিলেন এক মহিলা এবং তাঁর সঙ্গী। কিন্তু সেই মহিলাকে ছেলেধরা সন্দেহে পাকড়াও করে জনতা। তার পর শুরু গণধোলাই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের সামনেই চলে মারধর। সেই ঘটনার বলে দাবি করে যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে ঘুরছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের সামনেই নির্বিচারে মহিলাকে মারধর করছেন সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ঘটনার ভিডিয়ো তোলার অভিযোগে কয়েক জনকে আটকও করে পুলিশ। সেই ঘটনার পরেই জনতার সঙ্গে সরাসরি কথোপকথন শুরু করে পুলিশ। পরে এ নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রতীক্ষা। পুলিশ সুপার জানান, বারাসত পুলিশ জেলায় ছেলে চুরির কোনও ঘটনাই ঘটেনি। পুরোটাই গুজব। তিনি বলেন, ‘‘কিছু দিন ধরে বারাসত পুলিশ জেলায় দেখা যাচ্ছে যে, বাচ্চা চুরি নিয়ে সমাজমাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে গুজব ছড়াচ্ছেন কিছু মানুষ। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবসা করার জন্য বাচ্চাদের অপহরণ করা হচ্ছে। অভিভাবকরা তা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। একে ভিত্তি করে আজ (বুধবার) আলাদা আলাদা দু’টো ঘটনা ঘটে। একটি ঘটেছে বারাসতের মোল্লা পাড়ায় এবং অপর ঘটনাটি মডার্ন স্কুলের বাইরে।’’ দুই ঘটনায় মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। গণপিটুনির ঘটনায় আহত তিন জনকে বারাসত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। গুজব ছড়াচ্ছেন এমন কয়েক জনকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ বলে জানিয়েছেন প্রতীক্ষা। তবে, জনমানসে শিশু চুরি নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বলে মেনে নিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে গত তিন দিন ধরে পুলিশের তরফ থেকে মাইকে প্রচার চলছে। পাশাপাশি, জেলা প্রশাসন স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে স্কুল কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে, যাতে তাঁরা গুজব বিশ্বাস না করে ফেলেন। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘বারাসত পুলিশ জেলায় বাচ্চা চুরির কোনও ঘটনাই ঘটেনি। পুরোটাই গুজব।’’ এ বিষয়ে সচেতনতা প্রচারে পুলিশ এলাকার ক্লাবগুলির সঙ্গেও কথা বলা শুরু করেছে। জনপ্রতিনিধিদেরও সচেতনতা প্রচারের কাজে নামানো হচ্ছে।

পুলিশ সুপার আরও জানিয়েছেন যে, কাজি পাড়ার ঘটনাটি একটি খুনের ঘটনা। সেই ঘটনার তদন্তে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও ধৃত ব্যক্তি মৃত বালকের পরিজন বা পরিচিত কি না বা ধৃতের পরিচয় কি, তা জানায়নি পুলিশ। ধৃতকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘যে কাজি পাড়ার ঘটনা থেকে এই গোলমালের শুরু, সেটি একটি খুনের ঘটনা।’’ কেন বালকটিকে খুন করা হল তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলেও আশাবাদী পুলিশ।

West Bengal Police Agitation Tension Mob Lynching
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy