Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অনলাইনে ফর্মের টাকা জমা করতে এসে নাজেহাল পড়ুয়ারা

কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তির অনলাইন প্রক্রিয়া শুরুর দিনই নাজেহাল হলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা প্রান্তের ছাত্রছাত্রীরা। ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্মের টাকা জমা দিতে হয়েছে তাঁদের। অন্য দিকে প্রচণ্ড ভিড়ে মার খেয়েছে ব্যাঙ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম। প্রবল গরমে দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হয়েছেন সাধারণ গ্রাহকেরাও। ​সোমবার থেকে শুরু হয়েছে জেলার সব কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া। অনলাইনে আবেদন করে টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ব্যাঙ্কের মারফত।

সোমবার দেখা গেল ব্যাঙ্কের সামনে এ ভাবেই ভিড় করছেন ছাত্রছাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র।

সোমবার দেখা গেল ব্যাঙ্কের সামনে এ ভাবেই ভিড় করছেন ছাত্রছাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র।

শান্তশ্রী মজুমদার
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০১:০১
Share: Save:

কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তির অনলাইন প্রক্রিয়া শুরুর দিনই নাজেহাল হলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার নানা প্রান্তের ছাত্রছাত্রীরা। ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্মের টাকা জমা দিতে হয়েছে তাঁদের। অন্য দিকে প্রচণ্ড ভিড়ে মার খেয়েছে ব্যাঙ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম। প্রবল গরমে দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বিরক্ত হয়েছেন সাধারণ গ্রাহকেরাও।
সোমবার থেকে শুরু হয়েছে জেলার সব কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া। অনলাইনে আবেদন করে টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ব্যাঙ্কের মারফত। আর বিপত্তি শুরু হয়েছে তা নিয়েই। জেলার বিভিন্ন কলেজ নিজেদের মতো করে এক একটি ব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তি করেছে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা জমা নেওয়ার জন্য। কিন্তু কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ছাড়া ব্লক স্তরে শাখা অফিসই নেই অনেক ব্যাঙ্কের। ফলে প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েরা নিজেদের এলাকা থেকে অনলাইন ভর্তির সুযোগ নিতে পারেননি। বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে তাঁদের আসতে হয়েছে মহকুমা সদরগুলিতে। যার জেরে ব্যাপক ভিড় ছিল এ দিন ডায়মন্ড হারবার এবং কাকদ্বীপের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখায়।

ডায়মন্ড হারবার ফকিরচাঁদ কলেজের ভর্তির ক্ষেত্রে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম দিনই তাতে এতটা ভিড় জমে যায়, তা সামাল দিতে রীতিমতো হিমসিম খেয়েছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সকাল ৭টা থেকে ব্যাঙ্কের সামনে লাইন পড়েছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছেন অনেকে। পরের দিকে যাঁরা এসেছেন, তাঁরাও টাকা জমা দেওয়ার জন্য প্রায় তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ব্যাঙ্কে মাত্র দু’টি কাউন্টার খোলা হয়েছিল টাকা জমা করার জন্য। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

যদিও কলেজ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ওই ব্যাঙ্কের সমস্ত শাখাতেই টাকা জমা করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কুলপি, মথুরাপুর, লক্ষ্মীকান্তপুরের মতো এলাকা থেকে ছাত্রছাত্রীরা আর কোনও শাখায় টাকা জমা করতে না পেয়ে বাধ্য হয়ে ডায়মন্ড হারবারে এসেছেন বলে জানিয়েছেন।

ফকিরচাঁদ কলেজে অঙ্ক নিয়ে পড়তে চান সুদীপ্ত তাঁতি। মন্দিরবাজার থেকে ফর্মের টাকা জমা করতে এসেছিলেন তিনি। বললেন, ‘‘আমাদের ও দিকে এই ব্যাঙ্কের কোনও শাখা নেই। এখানেও দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আজ টাকা জমা করতে পারলাম না। আগামী কাল আবার আসতে হবে।’’ হটুগঞ্জের অর্ণব পুরকাইত, রামরামপুরের সৌমিত্র হালদাররা দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে তবে টাকা জমা করতে পেরেছেন।

সোমবার ডায়মন্ড হারবার বিগবাজার কমপ্লেক্সে ওই ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখা গেল, ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের ভিড়ে তিলধারণের জায়গা নেই। ব্যাঙ্কের অন্যান্য গ্রাহকেরাও নাজেহাল হচ্ছেন। প্রচণ্ড ভিড়ে এগোতে পারা যায়নি দু’টি এটিএম কাউন্টারের দিকেও। মাসের শুরু হওয়ায় টাকা জমা দিতে বা তুলতেও এসেছিলেন অনেকে।

এ সবের মধ্যেই ব্যাঙ্কের সামনে চেয়ারটেবিল নিয়ে পতাকা লাগিয়ে বসে পড়েছিল টিএমসিপি-র লোকজন। তাদের ‘হেল্প ডেস্ক’ ঘিরেও জটলা ছিল। টিএমসিপি-র দাবি, ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করতেই শিবির করেছেন তাঁরা।

নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমা করার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে হাতে হাতে টাকা জমা করতে হচ্ছে। তার পরেও সেই তথ্য আপলোড করতে গিয়ে বিশাল সমস্যায় পড়েছেন অনেক ছাত্রছাত্রী। ডায়মন্ড হারবারের এক সাইবার কাফের মালিক সমীর হালদার জানালেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের টাকা জমা করার তথ্য দিতে গেলে বার বার তা ইনভ্যালিড বলে দিচ্ছিল। এক এক জনের তথ্য কয়েক বার করে নেট ঘাঁটতে সমস্যা হচ্ছে।’’

জেলার প্রত্যন্ত এলাকার কলেজগুলিতেও এ বার অনলাইন ভর্তি হওয়ার কথা। পাথরপ্রতিমা কলেজের অধ্যক্ষ কুন্তল চক্রবর্তী জানালেন, তাঁদের ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। তা হচ্ছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। তুলনামূলক ভাবে এই ব্যাঙ্কের শাখা ব্লক স্তরেও রয়েছে বলে ততটা অসুবিধা হচ্ছে না ছাত্রছাত্রীদের। ও দিকে কাকদ্বীপ কলেজ (সুন্দরবন মহাবিদ্যালয়) ভর্তি প্রক্রিয়ায় টাকা জমা নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার দিকে সেই ব্যাঙ্কের শাখা কম। ফলে আজ, মঙ্গলবার থেকে টাকা জমা শুরু হলে অসুবিধার আশঙ্কা করছে ছাত্রছাত্রীরা।

অনলাইন ভর্তি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অপূর্ব প্রামাণিক বলেন, ‘‘অনলাইন ভর্তি আমরা সমর্থন করি। কিন্তু পরিকাঠামো না বদলে এটা ছাত্রদের সমস্যাই বাড়াচ্ছে। আগে দু’বার কলেজে গেলেই কাজ মিটে যেত। এখানে এমন কিছু কলেজ রয়েছে, যেখানে ভর্তি হতে গেলে ছাত্রছাত্রীদের দু’বার সাইবার কাফে, দু’বার ব্যাঙ্ক এবং একবার কলেজে যেতে হচ্ছে। তাই পরিকাঠামোর উন্নত করা প্রয়োজন।’’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গতবারের তুলনায় এ বার আরও বেশি কলেজ অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করেছে। এ রকম অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে একটা নতুন ব্যবস্থা চালু করার সময়ে কিছু সমস্যা থেকেই থাকে। তা ধীরে ধীরে মিটে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE