ভারতের রেলের ইতিহাসে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং অন্যতম প্রাচীন স্টেশন। ব্রিটিশ জমানায় লর্ড ক্যানিংয়ের শাসনকালে ১৮৬২ সালে এই স্টেশন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই স্টেশনে পরিকাঠামো-সহ যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত ক্যানিং স্টেশনকে ২০০৮ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘মডেল স্টেশন’ হিসেবে ঘোষণা করেন। যদিও অভিযোগ এখনও এই স্টেশনকে মডেল স্টেশন হিসেবে উন্নীত করার কোনও উদ্যোগ সে ভাবে চোখে পড়েনি।
প্রান্তিক স্টেশন হওয়ায় এখান থেকে প্রচুর যাত্রী প্রতি দিন ওঠানামা করেন। ক্যানিং, বাসন্তী, জীবনতলা, কুলতলি, গোসাবা, এমনকী সন্দেশখালি, মিনাখাঁ থেকেও মানুষ এই স্টেশন থেকেই কলকাতা বা অন্যত্র যাওয়া-আসা করেন। পাশাপাশি, প্রতি বছর সুন্দরবন ভ্রমণের জন্যও ক্যানিং স্টেশনে আসেন রয়েক লক্ষ পর্যটক। কিন্তু স্টেশনে একটি মাত্র শৌচালয় রয়েছে। সেটিও অপরিচ্ছন্ন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। পানীয় জলের কল মাত্র একটি। চারটি টিকিট কাউন্টার থাকলেও বেশিরভাগ সময়েই একটি বা দু’টি বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ। আবার, চারটি টিকিট ভেন্ডিং মেশিনের মধ্যেও দুটো বেশিরভাগ সময়েই বন্ধ থাকে। দীর্ঘ দিন ধরে রিজ়ার্ভেশন টিকিটের কাউন্টার বাড়ানোর দাবি উঠলেও এখনও একটি মাত্র কাউন্টারই ভরসা। সব থেকে বড় সমস্যা, যাত্রী ছাউনি নিয়ে। স্টেশনের বেশিরভাগ অংশেই ছাউনি নেই এখনও। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা।
নিত্যযাত্রী প্রফুল্ল সর্দার, শিখা রায়েরা বলেন, “নামেই মডেল স্টেশন, কিন্তু এখানে কোনও যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য নেই। হকারদের দাপটে স্টেশনে হাঁটাচলার রাস্তাও ক্রমে সঙ্কুচিত হচ্ছে। বেশিরভাগ জায়গায় শেড নেই। উল্টে ছ’মাসের বেশি শেড তৈরির নামে স্টেশনে বড় বড় গর্ত খুঁড়ে রেখেছে। যাত্রীরা ওঠানামা করতে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন।”
এ বিষয়ে ক্যানিং স্টেশন সুপারিন্টেন্ডেন্ট নবীন কুমার বলেন, “ক্যানিং স্টেশনে গতি শক্তি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ২৫ কোটি টাকার কাজ চলছে। যাত্রী শেড তৈরি হচ্ছে। অন্য যা যা সমস্যা রয়েছে, সেগুলিরও সমাধান হবে।” রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, মডেল স্টেশন ঘোষণা হলেও তা তৈরি হয়নি এখনও। ফলে মডেল স্টেশনের মতো পরিকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি। এ বিষয়ে শিয়ালদহ ডিভিশনের ডিআরএম দীপক নিগমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)