আর্থিক অনটনের সঙ্গে ছিল ঋণ শোধের দুশ্চিন্তাও। তাই কি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেনমধ্যমগ্রামের বাসিন্দা তরুণী বধূ? গত শুক্রবার রাতে মধ্যমগ্রামের দোহারিয়ার শৈলেশনগর এলাকায় একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রিয়াঙ্কা রায় (২৫) ও তাঁর মেয়ে প্রশংসার (৫) মৃতদেহ। ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত যে, বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার আগে মেয়েকে খুন করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু সেই পদক্ষেপ তিনি কেন করেছিলেন, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। তবে, পুলিশ জানতে পেরেছে, নিম্নবিত্ত ওই পরিবারের উপরে দেনার দায় ছিল। কিন্তু সেই দেনা শোধের জন্য তাঁদের উপরে কোনও চাপ আসছিল কিনা, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। এমনকি, সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে প্রিয়াঙ্কার স্বামী প্রসেনজিতের সঙ্গে এখনও বিস্তারিত ভাবে কথা বলেননি তদন্তকারীরা।
মধ্যমগ্রাম পুরসভার স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি সুকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘আচমকা এমন ঘটনা ঘটায় এখনও অনেকেরই ঘোর কাটেনি।পরিবারের সদস্যেরা জন্ম থেকে এই এলাকারই বাসিন্দা। স্বামীর সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার কোনও গোলমালের কথা কখনও শুনিনি। তা হলে আচমকা কী এমন হল যে, মেয়েটি এত বড় ঘটনা ঘটাল। আশা করছি, পুলিশ এই রহস্যের সমাধান করবে।’’ দেহ উদ্ধারের পরে যে সুইসাইড নোটটি উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে প্রিয়াঙ্কা আর্থিক অনটনের পাশাপাশি ঋণের বিষয়টি নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন। এমনই দাবি পুলিশের। ঋণ শোধের জন্য ওই পরিবারের উপরে কোনও চাপ ছিল কিনা, কেউ তাঁদের হেনস্থা করছিলেন কিনা, সে সব অবশ্য প্রিয়াঙ্কা স্পষ্ট করেননি ওইসুইসাইড নোটে।
তদন্তকারীরা জানান, স্ত্রী ও সন্তানের এমন আচমকা মৃত্যুর ঘটনায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন প্রিয়াঙ্কার স্বামী প্রসেনজিৎ। তিনি মানসিক ভাবে একটু শক্ত হওয়ার পরেই ফের তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চায় পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, প্রসেনজিৎ স্থানীয় একটি পিসবোর্ডের কারখানায় চাকরি করেন। প্রিয়াঙ্কা ছিলেন গৃহবধূ। তাঁদের একমাত্র মেয়ের লেখাপড়ার খরচও অন্য আত্মীয়ের সাহায্যে চলছিল বলে জেনেছে পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে ওই পরিবারের উপরে ঋণ শোধের দায় এসে পড়ে থাকলে তা যথেষ্ট চাপের বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। এই অবস্থায় কারও পক্ষে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক বলে মনে করছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা মনে করছেন, প্রসেনজিতের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে। ঋণ কে নিয়েছিলেন, কী প্রয়োজনে নেওয়া হয়েছিল, এ সব কিছু জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)