E-Paper

মাধ্যমিকই এখন লক্ষ্য নির্যাতিতার

পরিবারের লোকেরা জানান, বিচারকের সঙ্গে কথা বলার পরেই মানসিক ভাবে সে নিজেকে সামলে নিয়েছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জীবনে এগিয়ে যেতে হবে পড়াশোনাকে হাতিয়ার করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:০০
এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে।

এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে চায় উত্তর ২৪ পরগনার নির্যাতিতা বছর সতেরোর নাবালিকা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়ার পথে তুলে নিয়ে গিয়ে এক পড়শি যুবক তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। শনিবার দুপুরে সে বাড়িতে গলায় ওড়নার ফাঁস জড়িয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। বাড়ির লোকেরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান তাকে। সোমবার সে হাসপাতাল থেকে আদালতে এসেছিল মায়ের সঙ্গে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচারকের কাছে এ দিন নাবালিকা গোপন জবানবন্দি দিয়েছে।

পরিবারের লোকেরা জানান, বিচারকের সঙ্গে কথা বলার পরেই মানসিক ভাবে সে নিজেকে সামলে নিয়েছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জীবনে এগিয়ে যেতে হবে পড়াশোনাকে হাতিয়ার করে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার ও ভাল ফল করার মানসিক প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে। সোমবার নাবালিকা বলে, ‘‘মাধ্যমিক পরীক্ষাটা খুব ভাল করে দিতে চাই।’’ তার মা জানান, ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন তাঁরা। নির্যাতিতার বাবার কথায়, ‘‘অভিযুক্ত যুবকের পিসি প্রভাবশালী তৃণমূল নেত্রী। তার কাকা পুলিশকর্মী। ঘটনার পর থেকে সরাসরি না হলেও আড়াল থেকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

গ্রামের পাকা রাস্তার পাশে অভিযুক্ত যুবকের দোতলা বাড়ি। কাছেই নির্যাতিতার টিনের চালের বাড়ি। সোমবার সে বাড়ি ছিল বন্ধ। অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতেও কাউকে পাওয়া গেল না। বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা। স্থানীয় এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘অভিযুক্ত সোনার ছেলে! গুণের ঘাট নেই তার! মোটরবাইক নিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায়। সঙ্গে সাঙ্গোপাঙ্গরা থাকে।’’ গ্রামের অনেকেই জানালেন, রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার কথা। শাসক দলের নেত্রী আত্মীয়ার নাম করে লোকজনকে ভয় দেখাত যুবক, সে অভিযোগও করলেন অনেকে।

পুলিশের দাবি, জেরায় অভিযুক্ত ধর্ষণের কথা স্বীকার করে বলেছে, ভুল করে ফেলেছে। পুলিশ ধৃতের মোবাইলের কল লিস্ট পরীক্ষা করছে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এলাকায় পুলিশের টহল চলছে। নির্যাতিতা বাড়ি ফিরলে সেখানে আলাদা করে পুলিশ পিকেট বসানো হবে।’’

বিজেপি নেতা দিব্যেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘‘পিসির মদতে অভিযুক্ত যুবকের বাড়বাড়ন্ত ছিল। প্রভাবশালী বলে এত দিন কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না।’’ যদিও অভিযুক্ত যুবকের পিসি তাঁর ভাইপোকে মদতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান। বর্তমানে মহিলা তৃণমূলের স্থানীয় সাংগঠনিক জেলার সহ-সভানেত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ভাইপোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরে আমি নিজেই পুলিশকে সাহায্য করেছি তাকে গ্রেফতার করতে। নির্যাতিতার পরিবারকে বলেছি যদি কোনও আইনি সাহায্যের প্রয়োজন হয় আমি করব।’’ তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য অভিজিৎ বিশ্বাসেরও দাবি, ‘‘তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে তাঁর ভাইপোর সম্পর্ক ভাল ছিল না। তাঁকে কোনও মদত দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ভিত্তিহীন অভিযোগ।’’

তবে এই ঘটনার পরে এলাকার মেয়েরা পথে একা বাইরে বার হতে ভয় পাচ্ছে। এক কিশোরীর কথায়, ‘‘সন্ধ্যার সময় আমিও পড়তে যাই। এই ঘটনার জেরে আতঙ্কের মধ্যে আছি।’’ সোমবার সকালে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা নির্যাতিতার বাড়িতে যান। বাড়িতে অবশ্য কেউ ছিলেন না তখন। তখন তাঁরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। হাসপাতালে গিয়ে নাবালিকার সঙ্গেও দেখা করেন। কমিশনের তরফে অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুলিশি তদন্তে যাতে কোনও গাফিলতি না থাকে, সেই জন্যই এসেছি। জেলা পুলিশ সুপার ও জেলাশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’

রাজ্যে পরের পর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতা তথা সাংসদ মনোজ টিগ্গা এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন। সোমবার কালনায় দলের কর্মসূচিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে আইন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে। ধর্ষকের বাড়ির সামনে বুলডোজ়ার দাঁড়িয়ে থাকবে।’’ তার পরে তিনি যোগ করেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে মেয়েরা রাস্তা দিয়ে গেলে, কটূক্তি করতে গুন্ডাদের পা কাঁপে।’’ জবাবে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘দেশে প্রতিদিন গড়ে ৯০টি এই রকম যে ঘটনা ঘটছে, তার সিংহভাগই বিজেপির ডাবল ইঞ্জিনের রাজত্বে। আগে সেগুলির বিচারের ব্যবস্থা করুন ওঁরা। এখানে এ সবকথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারবেন না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Minor Rape board exam Madhyamik 2025

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy