Advertisement
E-Paper

আমলা হওয়ার স্বপ্ন ‘দিদিমণি’র

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০২:২৩
ঈশিকা দে

ঈশিকা দে

লেখাপড়ায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল পরিবারের আর্থিক অনটন। সেই বাধা দূর করতে নিজেই দু’বেলা ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে জোগাড় করেছিল লেখাপড়ার টাকা। বাকি সময়টুকু নষ্ট না করে নিজের বই নিয়ে পড়তে বসে যেত সে। মিলেছে সাফল্যও। কার্তিকপুর দেগঙ্গা আদর্শ বিদ্যাপীঠের ছাত্রী ঈশিকা দে এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে সব ক’টি বিষয়ে লেটার নম্বর নিয়ে নজির গড়েছে দেগঙ্গায়। ৫০০-র মধ্যে তার প্রাপ্য নম্বর ৪৬৭।

ঈশিকার স্বপ্ন, রাজ্য তথা দেশের উন্নয়নে সামিল হবে। সচিবের পর্যায়ের পদে চাকরি করবে। তার জন্য এ বার ইংরেজি নিয়ে স্নাতক স্তরে লেখাপড়া করার ইচ্ছে তার। ‘‘আরও বেশি টিউশন পড়িয়ে, আরও টাকা জোগাড় করে নিজের লেখাপড়াও চালিয়ে যাব।’’—ফল প্রকাশের পরে সোমবার এমনটাই জানাল সেই ছাত্রী।

এত কিছু থাকতে কেন প্রশাসক হতে চায় ঈশিকা?

উত্তরে সে জানায়, বছর দুই আগে জেলা জুড়ে স্কুল ভিত্তিক ‘যুব সাংসদ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। তখন সে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সেই প্রতিযোগিতা থেকেই রাজ্যের সচিব হওয়ার স্বপ্ন দেখার শুরু তার। মাধ্যমিকেও সব বিষয়ে লেটার পেয়ে ৭০০ এর মধ্যে ৬২৭ পেয়েছিল ঈশিকা। তার পরে দু’বছর নিজেকে সেই পদের যোগ্য করে তুলতে লেখাপড়ার সময় বাড়িয়ে দেয় ওই ছাত্রী। দিন-রাত কঠিন পরিশ্রম করে এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলের সব চেয়ে ভাল ফল করে ঈশিকা।

এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে বাংলায় ৯২, ইংরেজিতে ৮৪, ভুগোলে ৯৮, ইতিহাসে ৮২, দর্শনে ৯৯ ও অর্থনীতিবিদ্যায় ৯৪ পেয়েছে ঈশিকা। যদিও এই ফল আশানুরূপ হয়নি বলে সে জানিয়েছে। একই মত স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবদাস সেনেরও। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ঈশিকা বরাবর মেধাবী। প্রচণ্ড পরিশ্রমী। আমাদের আশা ছিল, রাজ্যে প্রথম ১০ জনের মধ্যে স্থান পাবে। সেই জন্য ফল প্রকাশের সময়ে টিভির সামনে বসেছিলাম।’’ ইংরেজি ও ইতিহাসে স্ক্রুটিনি করবে বলে জানায় ঈশিকা।

দেগঙ্গা থানার পিছনে ইটের বাড়িতে দু’টি মাত্র ঘর। ঠাকুমা ছাড়াও বাবা-মা ও সাত বছরের ভাইকে নিয়ে সংসার। বাবা জয়ন্ত দে শিলিগুড়িতে একটি ব্যাগের দোকানে কাজ করেন। মাসে বেতন মেলে আট হাজার টাকা। জয়ন্ত বলেন, ‘‘বাইরে থাকতে হয় বলে বেশিরভাগটা খরচ হয়ে যায় সেখানে থাকা-খাওয়ায়। যেটুকু সাশ্রয় হয় তা বাড়িতে পাঠাই।’’ ঈশিকার মা ঊর্মি দে বলেন, ‘‘ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। সংসার চালিয়ে মেয়েকে আর ভাল টিউশন দিয়ে উঠতে পারিনি। ছোট থেকেই মেয়ে লেখাপড়ায় ভাল। নিজের সব কিছু নিজেই দেখে।’’

ঊর্মি আরও বলেন, ‘‘মেয়ে আইএএস অফিসার হতে চায়। আমরা গরিব মানুষ। কী ভাবে পড়াব জানি না। মেয়ে আমাদের চিন্তা করতে বারণ করে। বলে ওর পড়ার টাকা নিজেই জোগাড় করবে। তাই করেছেও।’’ সকাল-বিকেল পড়িয়ে মাসে দেড় হাজার টাকা রোজগার। তার থেকে ১২০০ টাকা দিয়ে নিজে কোচিং সেন্টারে পড়েছে ঈশিকা। মেয়ে বলে, ‘‘প্রশাসকের চাকরির জন্য আরও টিউশন পড়ানো শুরু করছি।’’ তা হলে নিজে পড়বে কখন? ঈশিকার উত্তর, ‘‘কেন, বাকি সময়টা পড়ব। সারা দিনে ২৪ ঘণ্টা সময় কম কীসের!’’

Student Higher Secondary Examination 2019 Bureaucrat Private Tutor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy