Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু তিন পড়ুয়ার

গৃহশিক্ষকের বাড়ি থেকে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হল তিন পড়ুয়ার। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে গোপালনগর থানার গোপীনাথপুর এলাকার নহাটা-হাঁসপুর সড়কে।

রেবা হালদার, সাথী কীর্তনিয়া, তুষার দেবনাথ।

রেবা হালদার, সাথী কীর্তনিয়া, তুষার দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোপালনগর শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০৪:৪২
Share: Save:

গৃহশিক্ষকের বাড়ি থেকে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হল তিন পড়ুয়ার। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে গোপালনগর থানার গোপীনাথপুর এলাকার নহাটা-হাঁসপুর সড়কে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম, রেবা হালদার (১৫), সাথী কীর্তনিয়া (১৫) ও তুষার দেবনাথ (১৫)। তুষারের বাড়ি গাইঘাটার হাঁসপুর এলাকায়। বাকি দু’জনের বাড়ি গাইঘাটার ঘোঁজা এলাকায়। সকলেই ঘোঁজা হাইস্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত। পুলিশ ট্রাকটি আটক করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে চালক বিশ্বজিৎ করকে। তার বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে ঘোঁজা এলাকায় প্রশান্ত রায় নামে এক গৃহশিক্ষকের বাড়িতে সকলে পড়তে গিয়েছিল। পাঁচজন ছাত্রছাত্রী মিলে নহাটা-হাঁসপুর সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। সে সময়ে বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসা একটি মিনি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের ধাক্কা মারে। দু’জন পাশের ধান খেতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বাঁচে। তিনজন মারা যায়। বাসিন্দারা তাড়া করে ট্রাকের চালককে ধরে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

বিশ্বজিৎ মণ্ডল নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘ঘটনার সময় আমি কাছেই ছিলাম। ট্রাক চালককে মনে হল উন্মাদের মতো আচরণ করল। কোনও কারণ ছাড়াই ওদের এসে ধাক্কা দিল। চালক নেশা করে ছিল।’’ ওই ঘটনার পর পড়ুয়ারা সড়ক দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে ভয় পাচ্ছে। সৈকত মণ্ডল নামে একাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়ার কথায়, ‘‘আমিও ঘোঁজা হাইস্কুলে পড়ি। সাইকেল করে স্কুলে যাই। রাস্তায় খুব জোরে বাইক ও যানবাহন চলাচল করে।’’

ঘটনাস্থল: এখানেই ঘটে দুর্ঘটনা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

এখনও ঘটনাস্থলে রক্তের দাগ রয়েছে। পড়ে রয়েছে ছাত্রীদের মাথার ক্লিপ। সড়ক জুড়ে দেখা গেল ইমারতি মালপত্র পড়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রেবা ও সাথী খুব ভাল বন্ধু ছিল। একই সঙ্গে স্কুলে ও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যেত। দুই বাড়িতেই মেয়ের বিয়ের সম্বন্ধ আসছিল। কিন্তু ওরা দু’জনেই পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। বিয়ে করতে চায়নি। কিন্তু নিজেদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন আর দু’জনের বাস্তবায়িত হল না।

রেবা ও সাথীর মৃত্যুতে গোটা এলাকার মানুষ শোকস্তব্ধ। বাবা বিমল বলেন, ‘‘নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগে বিয়ে করবে না বলত রেবা। সব শেষ হয়ে গেল।’’ তিন বোনের মধ্যে সাথী ছোট। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মা প্রণতি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘দিদিদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সাথী লেখাপড়া শেষ না করে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল। বলত, ভাল চাকরি করবে।’’

হাঁসপুরে বাড়ি তুষারের। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাড়িতে মানুষের ভিড়। বাবা তরুণ গাড়ি চালান। বলছিলেন, ‘‘ছেলের স্বপ্ন ছিল পুলিশ অফিসার হওয়ার। এ ভাবে সব শেষ হয়ে যাবে ভাবতেই পারছি না।’’ বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ধৃত চালক

বিশ্বজিৎ এলাকায় চোর হিসাবে পরিচিত। কয়েকবার গাড়ি চুরি করে ধরাও পড়েছিল। দিন কয়েক আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিল। নেশাভাঙ করত। ওর কড়া শাস্তির দাবি করেছেন এলাকার মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Accident Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE