Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

গ্রামের কোলে বাঘ-শুয়োরের লড়াই দেখল সামসেরনগর

এক জোড়া দক্ষিণ রায় আর তাগড়াই এক বুনো শুয়োর। কখনও পুলিশ-জিপের হেডলাইট কখনও বা উৎসাহী গ্রামবাসীদের হ্যাজাকের আলো— সোমবার, রাতের আঁধার ফুঁড়ে দুই বনাম এক, শুয়োর-শার্দুলের এই অসম লড়াই দেখল সমসেরনগর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৫৯
Share: Save:

এক জোড়া দক্ষিণ রায় আর তাগড়াই এক বুনো শুয়োর।

কখনও পুলিশ-জিপের হেডলাইট কখনও বা উৎসাহী গ্রামবাসীদের হ্যাজাকের আলো— সোমবার, রাতের আঁধার ফুঁড়ে দুই বনাম এক, শুয়োর-শার্দুলের এই অসম লড়াই দেখল সমসেরনগর।

হিঙ্গলগঞ্জের ওই বসতটিকে বাঘের শাসন থেকে দূরে রেখেছে এক ফালি কুড়েখালি নদী। ওপারেই ঝিঙ্গাখালির ঘন বন। স্থানীয় কালীতলা পঞ্চায়েতের প্রধান শ্যামল মণ্ডল বলছেন, ‘‘গ্রামটাকে প্রায় গ্রাস করেছে জঙ্গল। এই তো, ভবসিন্ধু মণ্ডলের বাড়ির কাছে কুড়েখালি এমন মজে গিয়েছে যে, হাত বাড়ালেই জঙ্গলের গাছ ছোঁয়া যায়।’’ সেই বনেই দুই বাঘের সঙ্গে লড়াই বেধেছিল ওই শুয়োরের।

জঙ্গল থেকে গ্রামটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে জালের ঘেরাটোপ। সেটুকু ছিঁড়ে গেলেই বাঘ-মামার আর বসতে পা দেওয়ার কোনও বাধা নেই। দুরু দুরু বুকে, হ্যাজাকের আলোয় হাত কয়েক দূর থেকে সেই লড়াই দেখল সামসেরনগর।

গ্রামের বলরাম সর্দার, রত্না মুণ্ডারা বলছেন, ‘‘আঁধার রাতে এমনকী দুপুর রোদে বাঘের ডাক শুনেছি। বার কয়েক দেখেওছি ‘তাঁকে’ তা বলে এমন লটড়াই করতে দেখিনি কখনও।’’ তাঁদের আশঙ্কা যে কোনও দিন ওই জাল ছিঁড়ে বাঘ এ বার ঢুকবে সামসেরনগরে। খবর পেয়ে, ছুটে এসেছিলেন থানা-পুলিশও। হেমনগর উপকূলবর্তী থানার ওসি অমলেশ বালা বলেন, ‘‘বাঘে-শুয়োরে লড়াই দেখব বলে সারাক্ষণ জিপের হেডলাইট জ্বেলে রেখেছিলাম। তাতে গ্রামবাসীরাও সে লড়াই দেখেছেন। তবে, এমন ভয়ঙ্কর মারামারি আগে কখনও দেখিনি। ফের যাতে বাঘ দুটি জঙ্গল ঘেরা জালের কাছাকাছি বা জাল টপকে লোকালয়ে আসতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।’’ তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, ‘‘বাঘের সঙ্গে আর কতক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাবে, শেষতক বুনো শুয়োরটাকে মুখে নিয়েই বনে ঢুকে গেল বাঘ দু’টো।’’

গ্রামবাসীদের কথায়— বাঘের ডাক শুনে অভ্যস্থ, তবে শুয়োরের এমন পরিত্রাহী চিৎকার শোনেননি তাঁরা। তাঁরা আলো জ্বালিয়ে এগিয়ে এসে দেখেন, জঙ্গলের কিনারা ধরে শুয়োরের পিছনে ছুটছে দু’টো বাঘ। কখনও বা শুয়োরটা থমকে গিয়ে বাঘেদের পাল্টা আক্রমণ করছে। বাঁচার তাগিদ থেকেই শুয়োরের ওই পরিত্রাহী চিৎকার। আর শিকার ধরতে বাঘের ঘোঁৎ ঘোঁৎ। খবর যায় বন দফতরে। তারা এসে বাঘ দু’টিকে তাড়াতে পটকা ফাটান, তবে লাভ হয়নি। কর্ণপাতই করেনি তারা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত বৃহস্পতিবার থেকেই গ্রামের আশপাশে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছিল। তা বলে তারা যে এত কাছে ঘাপটি মেরে রয়েছে তা বোঝেননি তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE