Advertisement
E-Paper

সিন্ডিকেট গড়ে জাল ছড়াচ্ছে

কোথাও কোথাও কাঁটাতারের বেড়া আছে ঠিকই, কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকায় বেশির ভাগ জায়গায় কোনও আগল নেই। এই পরিস্থিতিতে বিএসএফের নজর এড়িয়ে পড়শি দেশ থেকে প্রতিদিনই এ দেশে ঢুকে পড়ছে বহু মানুষ। আর বেআইনি পারাপারকে ঘিরে দু’পয়সা কামিয়ে নিচ্ছে ধুর পাচারকারীরা। কোথায় কী ভাবে ছড়িয়েছে ধুর পাচার বা অনুপ্রবেশে কারবার, খোঁজ নিলেন সীমান্ত মৈত্রপরামর্শদাতাটি এ দেশে যে কারবার ছড়িয়ে বসেছে, তাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘ধুর সিন্ডিকেট’। ‘ধুর’ বলতে বোঝায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী।

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৩৯

আংরাইল সীমান্তে চায়ের দোকানে বসে পাখি পড়ার মতো করে একজন বলে চলেছিলেন, ‘‘কত্তা, বাংলাদেশের ভিড়ি-সিগ্‌রেট ফোঁকা ক’দিন বন্ধ রাখেন। আর লুঙ্গি ছেড়ে প্যান্টালুন পরেন।’’

চাপা গলায় এই পরামর্শ পাশে বসে শুনছিলেন যিনি, তিনি মাথা নেড়ে বলে চলেছিলেন, ‘‘জি আচ্ছা, জি আচ্ছা।’’ খানিক পরে পরামর্শদাতাটি ধমক দিয়ে বলে উঠলেন, জি আচ্ছা-ফাচ্ছা ছাড়েন। যে আজ্ঞে বলতে শেখেন। আপনার দেশের টানে কথা বলা এখানে মানা। আর যদি না পারেন, মুখ খুলবেন না।’’

ধমক শুনে থতমত খেয়ে দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে মাঝবয়সী পুরুষ মানুষটি বললেন, ‘‘জি আচ্ছা।’’

পরামর্শদাতাটি এ দেশে যে কারবার ছড়িয়ে বসেছে, তাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘ধুর সিন্ডিকেট’। ‘ধুর’ বলতে বোঝায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। যারা দালাল ধরে ঢোকে এ দেশে। সেই দালালদের নেটওয়ার্ক সর্বত্র ছড়ানো। আইন-আদালত-বিএসএফ থেকে শুরু করে কোথায় জাল ভারতীয় পাসপোর্ট বানানো যাবে, কাকে কত টাকা দিলে জাল আধার কার্ড তৈরি হয়ে যাবে, এ সব তাদের নখদর্পণে। বাংলাদেশ থেকে বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে চোরাপথে এ দেশে আসতে হলে ধুর সিন্ডিকেটের কাউকে না কাউকে ধরতে হবে। নির্দিষ্ট টাকা হাতে গুঁজে দিলেই এ দেশের সীমাম্তের দরজায় চিচিং ফাঁক।

সম্প্রতি গাইঘাটার ঠাকুরনগর এলাকার একটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ এ দেশের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, জনপ্রতিনিধিদের স্ট্যাম্প, প্যাড উদ্ধার করে। গ্রেফতারও হয় দু’জন। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, তারা মূলত বাংলাদেশিদের কাছে ওই সব নথিপত্র মোটা টাকায় বিক্রি করত। ‘ধুর’ কারবারিদের সঙ্গেও তাদের যোগ ছিল।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ‘ধুর’ সিন্ডিকেটের মূল ডেরা এখন হাবরার মছলন্দপুর। কারবারের মাথারা এখানেই ঘাঁটি গেড়ে আছে বলে খবর পুলিশের কাছে। পেট্রাপোল, জয়ন্তীপুর, বাঁশঘাটা, কুরুলিয়া, আংরাইল, ঝাউডাঙা, বসিরহাটের হাকিমপুর, স্বরূপনগর-সহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বাংলাদেশিরা এ দেশে ঢোকানোর বিশাল বেআইনি ব্যবসা ফেঁদে বসেছে তারা। ধুর পাচারকারীদের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের যোগাযোগের প্রমাণও পুলিশ বার বার পেয়েছে। কিছু দিন আগেই সম্প্রতি পেট্রাপোলে এক যুবককে কুপিয়ে খুন করা হয়। ওই খুনের পিছনে ধুর পাচারের দখলের বিষয়টি ছিল বলে পুলিশের কানে আসে।

দিন কয়েক আগে হাবরা থানার পুলিশ মছলন্দুপুরের একটি বাড়িতে হানা দিয়ে অসীম ঘোষ ও তার ছেলে শিশিরকে গ্রেফতার করে। এরা ‘ধুর’ সিন্ডিকেটের মাথা বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তাদের বাড়ি থেকে কয়েকজন বাংলাদেশিকেও গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানতে পেরেছে, অসীম ও শিশির সঞ্জিত নামে ‘ধুর’ সিন্ডিকেটের এক পান্ডার কাছে কাজ করত। সঞ্জিত দীর্ঘদিন ধরে জেলে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাবা-ছেলে বেআইনি ‘ধুর’ পাচারের কারবারের মাথা হয়ে উঠেছিল। মছলন্দপুর এলাকায় ওই সিন্ডিকেটের ৬ জন সদস্য। বাকিরা বিভিন্ন সীমান্তে ‘লাইন ম্যান’।

‘লাইন ম্যান’ ছাড়াও ‘ঘাটমালিক’ ‘লিঙ্ক ম্যান’ নামে নানা পদ আছে ধুর সিন্ডিকেটে। তারা কারা, কী তাদের দায়িত্ব? দালাল ধরে বাংলাদেশ থেকে এ পারে আসতে খরচ পড়ে কত? কেনই বা পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া এ দেশে ঢুকে পড়ে বহু বাংলাদেশি?

(চলবে)

Trafficking Syndicate সিন্ডিকেট
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy