Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

তীব্র অনটনে চিকিৎসা বন্ধ অগ্নিদগ্ধ কিশোরের

দেগঙ্গার হাদিপুর গড়পাড়ার বাসিন্দা আকিবুলের সঙ্গে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল গত জানুয়ারিতে। বাড়ির একচিলতে বারান্দায় বসেছিল বেড়াচাঁপার দেউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্র। পাশেই রান্না করছিলেন মা মোসলিমা বিবি। হঠাৎ পাশে জড়ো করে রাখা পাটকাঠিতে আগুন লেগে যায়, আর তাতেই পুড়ে যায় আকিবুল। তাকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হন মোসলিমা বিবিও।

বাড়িতে শয্যাশায়ী দগ্ধ আকিবুল। (ইনসেটে) ছেলেকে বাঁচাতে আর্তি মা মোসলিমা বিবির। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

বাড়িতে শয্যাশায়ী দগ্ধ আকিবুল। (ইনসেটে) ছেলেকে বাঁচাতে আর্তি মা মোসলিমা বিবির। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০৩:০৮
Share: Save:

টানা পাঁচ মাস হাসপাতালে চিকিৎসার পর কয়েক দিন আগেই বাড়ি ফিরেছে আগুনে পুড়ে যাওয়া কিশোর। এখনও ব্যান্ডেজ জড়ানো শরীরে। কিন্তু টাকার অভাবে অস্ত্রোপচারের পরবর্তী চিকিৎসা চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে মায়ের পক্ষে। ফলে ড্রেসিংয়ের অভাবে ক্ষতের জায়গায় পুঁজ জমে অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর হচ্ছে। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে দেগঙ্গার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র আকিবুল দফাদারের আর্তি, ‘‘আমি আবার স্কুলে যেতে চাই, পড়তে চাই।’’

দেগঙ্গার হাদিপুর গড়পাড়ার বাসিন্দা আকিবুলের সঙ্গে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল গত জানুয়ারিতে। বাড়ির একচিলতে বারান্দায় বসেছিল বেড়াচাঁপার দেউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্র। পাশেই রান্না করছিলেন মা মোসলিমা বিবি। হঠাৎ পাশে জড়ো করে রাখা পাটকাঠিতে আগুন লেগে যায়, আর তাতেই পুড়ে যায় আকিবুল। তাকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হন মোসলিমা বিবিও।

প্রতিবেশীরা দু’জনকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় আকিবুলকে সেখান থেকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তার শরীরের প্রায় ৪৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। আর জি করেই তার পা থেকে মাংস নিয়ে শরীরের পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন জায়গায় ‘গ্রাফটিং’ করা হয়। প্রায় পাঁচ মাস পরে হাসপাতাল থেকে ছুটি মিলেছিল আকিবুলের। কিন্তু সে সময়ে বলে দেওয়া হয়, দু’সপ্তাহ অন্তর হাসপাতালে দেখাতে আনতে হবে রোগীকে। নিয়মিত করতে হবে ড্রেসিং-ও।

ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছে আকিবুল। বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করা মোসলিমা বিবির একার পক্ষে আকিবুলের চিকিৎসার জন্য এই অতিরিক্ত খরচের সঙ্গে তাল মেলানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অস্ত্রোপচারের পরেও চিকিৎসার অভাবে ক্রমশ অবস্থা সঙ্গিন হচ্ছে আকিবুলের। কান্নাভেজা গলায় তার মায়ের আক্ষেপ, ‘‘নিয়মিত ড্রেসিং করাতে, হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি না। বুঝতে পারছি, দিনে দিনে ছেলেটার শরীর কাবু হয়ে পড়ছে। কাজ করেও সামলাতে পারছি না।’’ এক প্রতিবেশী সাকিলা বিবি বলছেন, ‘‘লোডশেডিং হয়ে গেলে যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে ছেলেটি। মা কাজ করবে না ছেলেকে সামলাবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE